শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:২৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি মামলার আসামি হান্নান বিমানবন্দরে গ্রেফতার : অতপর ছাড় : বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার

বিশেষ সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি মামলার আসামি প্রভাবশালী ঠিকাদার আবদুল হান্নান ভারতে পলাতক থাকার পর  গত ৩১ ডিসেম্বর রোববার দেশে ফিরেছেন। তিনি মামলার আসামী হয়েও সিলেট ওসমানী বিমানবনদরে বীরদর্পে নামেন এবং যথারতি  ভিআইপি লাউন্ঞ ব্যবহার করেন। গ্রেফতার এড়াতে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হান্নান রোববার যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সিলেট বিমানবন্দরে নামার পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কিন্ত অদৃশ্য শক্তির ইশারার দুর্নীতি মামলার এ আসামি বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে বের হয়ে আসেন।

অভিযোগ রয়েছে, হান্নানকে দেশ ছাড়তে এবং সেখান থেকে লন্ডন পাড়ি জমাতে সহায়তা করেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। উচ্চতর আদালতে মামলা স্থগিত হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরলেন। বিমানবন্দরে ঢোকার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করলেও মামলা স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখানোর পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

৩১ ডিসেম্বর রোববার সকালে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ বিমানের (বিজি-২০২) ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে ঢোকার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করলেও উচ্চ আদালতে মামলার স্থগিতাদেশ দেখানোর পর ছাড়া পান হান্নান। ওসি ইমিগ্রেশন  বশির আহমদ জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় যুক্তরাজ্য থেকে আসা বিমানের ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হান্নান। উচ্চ আদালত তার বিরুদ্ধে করা দুদকের সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার কাগজপত্র দেখান তিনি। পরে আইনজীবীদের মাধ্যমে এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদক থেকে পৌঁছলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিবাসন পুলিশ হান্নানকে ছেড়ে দেয়ার পর ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে তিনি বের হন বলে বিমানবন্দর সূত্র নিশ্চিত করে।

অভিযোগ রয়েছে, এর আগে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সহায়তায় হান্নানের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সিলেটসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে সব ইমিগ্রেশনে চিঠি পাঠায় দুদক। পরে ভারত থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান হান্নান। তার স্ত্রী-সন্তান এখন যুক্তরাজ্যে। মামলা স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের রেখে হান্নান একা দেশে ফেরেন। মামলার বাদী এবং তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদ জানান, বাচ্চু মিয়া নামের আসামি মামলাটি অবৈধ দাবি করে হাইকোর্টে রিট করেন। গত ১২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। পরে দুদকের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়।

জানা যায়, গত ১৪ নভেম্বর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সিলেটের তামাবিল দিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের সঙ্গে ভারত যান হান্নান। ভারতের ডাউকি এলাকা থেকে ছবি তুলে হান্নান নিজের ফেসবুকে পোস্ট করলে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

১৬ নভেম্বর এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ১৭ নভেম্বর হান্নানকে রেখে দেশে ফেরেন সিরাজ। পরে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ এক বিবৃতিতে তার সঙ্গে হান্নানের ভারতে যাওয়ার ঘটনাটি সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ও তাদের সঙ্গে পথে দেখা হয়েছে বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় তাকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশে তিনি ‘বিব্রত’ বলে জানান। কিন্তু ইমিগ্রেশনে যাওয়ার আগে জৈন্তা হিল রিসোর্টে হান্নানের সঙ্গে মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের মধ্যাহ্ন ভোজের ভিডিও-ও প্রকাশ পায়। ২০১৭ সালে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির কারণে সুনামগঞ্জের প্রায় সবক’টি হাওরের ফসলহানির পর ২০১৭ সালের ২ জুলাই দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, ঠিকাদারসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার ২১ নম্বর আসামি ‘মেসার্স হান্নান এন্টারপ্রাইজ’ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার আবদুল হান্নান। মামলায় অভিযুক্ত ঠিকাদারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজ পেয়েছিলেন ফরিদপুরের খন্দকার শাহীন আহমদ, টাঙ্গাইলের মো. আফজালুর রহমান, সুনামগঞ্জের সজীব রঞ্জন দাশ ও সিলেটের আবদুল হান্নান। হান্নান নয়টি বাঁধের কাজ পেয়েছিলেন এবং কাজ না করেই বিল উত্তোলনের তৎপরতা চালান। ঠিকাদার হান্নান সিলেট মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। গ্রেফতার এড়াতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা ও মহানগর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।