সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ধর্ষণের সব্বোচ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা : মতিঝিলে সড়ক অবরোধ শাহবাগ ও উত্তরায় সমাবেশ

নিউজ ডেক্স : ধর্ষণ-নিপীড়নের ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রোববার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। মতিঝিল, শাহবাগ, উত্তরায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এসব কর্মসূচিতে স্কুল- কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। ধর্ষকদের ফাঁসিসহ সাত দফা দাবিতে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।  রিপোর্টার্স ইউনিটির  সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন একই দাবিতে। দুপুরে মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। বিকালে শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড গণসাক্ষরতা ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

রাতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয় শাহবাগে।
শিক্ষার্থীদের দেয়া দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও সর্বনিম্ন শাস্তি যাবজ্জীবন নিশ্চিত করা, ধর্ষণের মামলায় লিঙ্গভেদে নারী-পুরুষ কর্মকর্তা নিয়োগ করা, সালিসি পদ্ধতিতে ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা ও বাদীর নিরাপত্তা-চিকিৎসা নিশ্চিত করা, আগের সব মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা, ইভটিজিং, সাইবার বুলিংসহ সব যৌন নির্যাতন বন্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষা ও আত্মরক্ষামূলক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা, দলীয় বা প্রশাসনের কেউ ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া এবং মিথ্যা মামলার মাধ্যমে নারী, শিশু বা কাউকে হয়রানি করা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া।
বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে গতকাল মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করেন মতিঝিল আইডিয়াল কলেজ এর শিক্ষার্থীরা। ‘ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন’ ব্যানার নিয়ে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে গতকাল বেলা দেড়টা থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে সব দিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
ওদিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি নয়, আমৃত্যু কারাদণ্ড দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে ভিকারুননিসা নূন কলেজের চৌধুরী নদী ও তাসফিয়া তারান্নাম রিদিতা, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি কলেজের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহিন আহমেদ এবং বৃটিশ কাউন্সিলের সাদিয়া আরাফাত সুচিতাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানিবিরোধী আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করতে এবং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সাত দফা দাবি দিয়েছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহা তানজিন লিখিতভাবে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন।
সাত দফা দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ধর্ষণ আইন পুনঃবিবেচনার মাধ্যমে ধর্ষকের এবং সীমা ভেদে সকল প্রকার যৌন হয়রানির সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিশ্চিত করতে করা। ভিকটিমের প্রাণ বিপন্ন করা রুখতে পরিবর্তনযোগ্য লঘু শাস্তির উল্লেখ থাকতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৭৫ ধারা অনুসারে উল্লিখিত ধর্ষণের সম্মতির সংজ্ঞা সংশোধন করতে হবে যাতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ছেলে শিশু, পুরুষ, যৌনকর্মী, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় মানুষ ও হিজড়ারাও যেন আইনের শরণাপন্ন হতে পারেন। পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক- বেসামরিক সকল প্রকার যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও সামাজিক নিপীড়নের অভিযোগে নিরপেক্ষ বিচার করতে হবে। বৈবাহিক ধর্ষণকে ধর্ষণের আওতায় এনে বিচারকার্য করতে হবে। ধর্ষণজনিত ঘটনা বা অপরাধের জন্য আলাদা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে। যাতে ৩০-৬০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা। পূর্ববর্তী সকল ধর্ষণ মামলার রায় আগামী ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারার বিলোপ অর্থাৎ জেরা করার সময় যাতে ধর্ষণের শিকার নারীকে পুলিশ, আইনজীবী ও বিচারক চরিত্র, পেশা, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে হেনস্তা না করে। হেনস্তাকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীদের মামলা পরিচালনাকালে লিঙ্গীয় সংবেদনশীল আচরণ করতে পুলিশ, আইনজীবী, বিচারক ও সমাজকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্যাতিতার পরিবারের ওপর কোনা প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ প্রয়োগ বা ধর্ষককে আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের প্রতিটি মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক ও মিডিয়াতে এবং সাহিত্য নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন ও নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে। সাইবার মাধ্যমকে আসন্ন করে নারীর প্রতি সর্ব প্রকার সহিংসতার বিরুদ্ধে অতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও প্রহসনের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে ৯ দফা দাবিতে গণসাক্ষর ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড। গতকাল বিকাল চারটা থেকে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে। তাদের দাবিগুলো হলো,  ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সকল হত্যাকাণ্ড ধর্ষণের মাস্টার মাইন্ডদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি কার্যকর, ক্ষতিগ্রস্ত নর-নারীর ক্ষতিপূরণসগ পরিবারের নিরাপত্তাসহসেবা নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ, দেশের ৬৪টি জেলায় বিশেষ আদালত গঠন করে দ্রুত বিচার আইনে ৯০ দিনের মধ্যে বিচারকার্য শেষ করতে হবে। শিশু ধর্ষণ ও হত্যা অভিযোগ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমলে নিয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণকরতঃ  সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা বিদ্যমান তাদের আগামী এক সপ্তাহের  মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।  সম্প্রতি যে বা যারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে গণদাবিকে নস্যাৎ করতে নানা অপ্রচারসহ রাজপথে আন্দোলনের নামে ধর্ষকদের উৎসাহিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে কোনো মামলা সংশ্লিষ্ট আইনি প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের কার্যক্রম তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।  নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে  বাল্যবিবাহ ও যৌতুকের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও যথাযথ প্রয়োগ এবং ধর্ষণ  ও নিপীড়ন সম্পর্কে গণ সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্কুলের পাঠ্য বইয়ে সিলেবাস ভুক্ত করণ ও সকল টিভি পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা বাধ্যতামূলক করতে হবে।  কোনো ধর্ষণ মামলা যদি ষড়যন্ত্র ও প্রহসন মূলক প্রমাণিত হয় তাহলে মিথ্যা মামলার দায়ে বাদী ও তার সাক্ষীসহ সহযোগীদের একই শাস্তি ভোগ করার বিধান প্রণয়ন এবং বিবাদীর ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তের নামে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি ও নানা উপায়ে মামলার ম্যারিট দূর্বল করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্য যদি অনৈতিকভাবে পক্ষপাতিত্ব করে তাহলে সংশ্লিষ্ট সকলকে শাস্তির আওতায় এনে তা প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সন্ধ্যার পর এই সংগঠনটি মমবাতি প্রজ্জলন করে।
এছাড়া বিকালে শাহবাগে বামপন্থি শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ ব্যানার-প্লেকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা আলোচকচিত্রীও প্রদর্শন করেছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।