সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
উড়ন্ত গোলে দুরন্ত সূচনা ব্রাজিলের

খেলা ডেক্স : নান্দনিক ফুটবল খেলে ২-০ গোলে সার্বিয়াকে হারিয়েছে তিতের ব্রাজিল। ৯০ মিনিট ধরে ছন্দময় ফুটবল খেলে সার্বিয়ার রক্ষণভাগকে রীতিমত নাস্তানাবুদ করে রাখে নেইমাররা। যদিও শেষের দিকে কয়েকটি আক্রমণ করে সার্বিয়া। তবে অতিরিক্ত ৭ মিনিটেও কোনো গোল পরিশোধ করতে না পেলে হার দিয়েই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো ইউরোপের এই দেশটি।

বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় লুসাইল স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছিল ম্যাচটি।

প্রথমার্ধে ঠিক ব্রাজিল তেমনভাবে নিজেদের মেলে ধরতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে নেইমারদের দেখে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক তিতের এই দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার দাবি রাখে। রিচার্লিসনের অসাধারণ দুটি গোল চোখে লেগে থাকার মতোই ছিল।রিচার্লিসনের নান্দনিক জোড়া গোলে ২-০ ব্যবধানে সার্বিয়াকে হারিয়ে ফেবারিটের মতোই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করলো পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।যদিও ব্রাজিলকে প্রথমার্ধে গোল পেতে দেয়নি ইউরোপিয়ান দেশ সার্বিয়া। কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রায় ৮৫ হাজার দর্শকের মন জয় করে ছন্দময় ফুটবল খেলে একের পর এক আক্রমণ করেও প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি সেলেসাওরা। বল দখলের লড়াইয়ে ৫৯ ভাগ ছিল নেইমারদের, ৪১ ভাগ সার্বিয়ার। সার্বিয়ার জাল লক্ষ্যে ৯টি শট নিয়েছে রিচার্লিসনরা। যার ৮টিই ছিল লক্ষ্যে।সার্বিয়া নিয়েছে ৩টি শট, যার একটিও লক্ষ্যে ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধে সার্বিয়া খুব কমই বল পেয়েছে। সার্বদের ডিফেন্স ভেদ করে একের পর এক বল নিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে গেছে রিচার্লিসনরা।

তবে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডাররাও ছিল তৎপর। ব্রাজিলের মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিরোধ করেছে তারা। লাতিন আমেরিকান দেশটিরও দুর্ভাগ্য, দুটি শট ফিরে এসেছে তাদের সাইড বারে লেগে।

প্রথমার্ধে শুরুতে খেলার নিয়ন্ত্রণ ছিল কিছুটা সার্বিয়ানদের দখলে। তবে সময় গড়ানোর সাথে সাথে খেলার নিয়ন্ত্রণ ব্রাজিলিয়ানদের কাছে আসলেও সার্বিয়ার ডি বক্সে বল নিয়ে প্রবেশ করার সাধ্য যেন ছিল না নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের।

রাফিনহা কয়েকবার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। কিন্তু তার দুর্বল শট ব্রাজিলের পক্ষে গোল পেতে যথেষ্ট হয়নি। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং রিচার্লিসন বল নিয়ে বিপজ্জনকভাবে দু’একবার সার্বিয়ার ডি বক্সে ঢুকে পড়লেও সার্বদের কঠোর ডিফেন্সের সামনে সেগুলো কাজে লাগেনি।

যে কারণে এক সময় দেখা গেছে দূর পাল্লার শট নিয়ে লক্ষ্যভেদ করার চেষ্টা করছেন নেইমার এবং ক্যাসেমিরোরা। কিন্তু সেগুলোও জালে জড়ায়নি। বরং, কাউন্টার অ্যাটাকে কয়েকবার ব্রাজিলের বক্সেও বল নিয়ে প্রবেশ করে সার্বরা।

তবে দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে যায় খেলার চিত্র। ব্রাজিল যেন ফিরে আসে ফুটবলের ছন্দময় জাদু নিয়ে। এককভাবেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে তিতের দল। সার্বিয়ান ডিফেন্স শুধু ব্রাজিলের ছন্দময় আক্রমণ ঠেকাতেই ছিল ব্যস্ত। ৬২তম মিনিটে প্রথম গোল করে ব্রাজিল। সুযোগ সন্ধানী রিচার্লিসন অসাধারণ এক শটে গোল করে এগিয়ে দেয় পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। গোল হজম করে কিছু কাউন্টার অ্যাটাকে চেষ্টা চালায় সার্বিয়ানরাও। তবে তা কাজে আসেনি।

উল্টো ৭৩ মিনিটে নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রিচার্লিসন কম্বিনেশনে অসাধারণ গোলটি আসার পর সার্বিয়াকে বলতে গেলে ব্রাজিল গোলমুখে আর খুঁজেই পাওয়া যায়নি। ৭৮তম মিনিটে ইনজুরির শঙ্কা নিয়ে নেইমার উঠে যান।কয়েকজন তরুণ ফুটবলারকে মাঠে নামান কোচ তিতে।

 

তাতে শেষ ১০-১৫ মিনিট খেলার গতি যেন পাল্টে যায়। তিতের সাইড বেঞ্চ যে কতটা দুর্ধর্ষ সেটা টের পাওয়া যায় শেষ মুহূর্তের খেলা দেখে।

এর আগে ১৩ মিনিটেই প্রথম কর্নার আদায় করে নেয় ব্রাজিল। নেইমার শট নিলে গোলরক্ষক মিলিনকোভিক সাভিচ পাঞ্চ করে বল বাইরে পাঠিয়ে দলকে রক্ষা করেন, তা না হলে হয়তো সেটিই ব্রাজিলের প্রথম গোল হতো।

নেইমারের পরের কর্নার কিকে রাফিনহা লাফিয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তার আগেই বল গোলরক্ষকের হাতে। ২১ মিনিটের সময় পরপর দুই মুহূর্তে অসাধারণ দুটি শট নিয়েছিলে নেইমার এবং ক্যাসেমিরো। নেইমারের শট ফিরে আসে এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে। ক্যাসেমিরোর শট ফিরিয়ে দেন গোলরক্ষক সাভিচ।

 

২৬তম মিনিটে সার্বিয়া গোলের দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিলো। ব্রাজিলিয়ানদের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন তাদিচ। মিত্রোভিচকে ক্রস করেন তিনি। কিন্তু ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসন লাফ দিয়ে উঠে সেই বল নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন। ২৮ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল।

থিয়াগো সিলভা বল পাস দিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র একা ছিলেন। কিন্তু গোলরক্ষক সাভিচ ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ক্লিয়ার করেন। ৩৫তম মিনিটে রাফিনহা দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাম পায়ের দুর্বল শট গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। ৪১তম মিনিটে গোল্ডেন চান্স পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র।

 

কিন্তু সার্বিয়ান ডিফেন্ডারদের চার্জের কারণে ভিনিসিয়ুস ভালো শট নিতে পারেননি। বল চলে যায় বাইরে। প্রথমার্ধে গোলশূন্যভাবেই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল এবং সার্বিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে ৪৬তম মিনিটেই গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বার্সা তারকা রাফিনহা। সার্বিয়ার এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন তিনি। সামনে ছিলো শুধু গোলরক্ষক। বলটা আলতো টোকা দিলে হয়ে যেতো। কিন্তু তিনি মেরে দেন গোলরক্ষকের শরীরে।

৪৯তম মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক আদায় করে নেন নেইমার। শট নেন তিনি। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডাররা। কর্নার কিক করেন নেইমার। থিয়াগো সিলভার দুর্দান্ত এক হেড, ঘাড়ে বল লাগিয়ে দলকে রক্ষা করেন সার্ব ডিফেন্ডার।

 

৫৫ মিনিটে বাম পাশ থেকে বক্সের মধ্যে ক্রস করেন ভিনিসিয়ুস। গোল লক্ষ্যে দুর্দান্ত এক শট নেন নেইমার। কিন্তু দুর্ভাগ্য বলটি চলে যায় সাইড বারের অনেক বাইরে দিয়ে। ৫৮ মিনিটে দারুণ এক কাউন্টার অ্যাটাক ছিল সার্বিয়ার। কর্নারের বিনিময়ে বলকে রক্ষা করেন অ্যালেক্স সান্দ্রো। ৬০ মিনিটে নিশ্চিত গোলবঞ্চিত হলো ব্রাজিল। বক্সের বাইরে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে বাঁ-পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন আলেক্স সান্দ্রো।

 

কিন্তু বল বামপাশের সাইডবারে লেগে ফিরে আসে। ৬২ মিনিটে গোল করে ব্রাজিল। অনেক কষ্টের পর আসে গোলটি। নেইমার বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বক্সের মধ্যে। ডিফন্ডোরের সামনে বাধা পেলে সুযোগ বুঝে গোলে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন বলটি। ফিরতি বলটিতেই আলতো টোকায় সার্বিয়ার জালে বল জড়িয়ে দেন রিচার্লিসন। ৬৭ মিনিটে আবারও সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। কাউন্টার অ্যাটাকে মাঝ মাঠ থেকে রাফিনহা বল নিয়ে এগিয়ে আসে সার্বিয়ার বক্সের সামনে।

ডিফেন্ডার বাধা দিলে সেই বল নিয়ে কয়েক পা এগিয়ে এসে শট নেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু পোস্ট লক্ষ্যে শটটি রাখতে পারেননি তিনি। ৭৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল। রিচার্লিসনের এই গোলটি চোখে লেগে থাকার মত।

 

বক্সের বাম প্রান্ত থেকে ডান-পায়ের টোকায় বক্সের মাঝে দাঁড়ানো রিচার্লিসনকে বলটি দেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। রিচার্লিসন প্রথমে বলটি নিয়ন্ত্রনে নেন। হালকা উপরে উঠে যাওয়া বলটিকে একটু সময় নিয়ে অসাধারণ এক বাইসাইকেল কিকে সার্বিয়ার জালে বল জড়ান তিনি। ৭৭ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে মাঠে নামানো হয়।

নেইমার হালকা আহত হলে তাকে তুলে নিয়ে মাঠে নামানো অ্যান্তোনিকে। তার আগেই ভিনিসিয়ুসকে তুলে মাঠে নামানো হয় রদ্রিগোকে। ৮১ মিনিটে রাফিনহার কাছ থেকে বল পেয়ে ক্যাসেমিরো শট নেন।

 

কিন্তু বল ডান প্রান্তে পোস্টের কোনায় লেগে ফিরে আসে। ৮২তম মিনিটে রদ্রিগো দুর্দান্ত এক শট নেন, গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন সেটি। ৮৩ তম মিনিটে বাম পায়ের দুর্দান্ত এক শট নেন লুকাস পাকুয়েতার পরিবর্তে মাঠে নামা ফ্রেড।তবে গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটি রক্ষা করেন।

তবে শেষ পর্যন্ত তিতের তৈরি করা এই ব্রাজিল দলটি যে তরুণ আর অভিজ্ঞতার মিশেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার দাবিদার তা বলাই বাহুল্য। দারুণ ছন্দময় ফুটবল উপহার দিয়ে ‘মিশন হেক্সা’ শুরু করলো তিতের দল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হলে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাই জরুরি বলে মনে করছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।