শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৫:১২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
কি থাকছে বিএনপির সহায়ক সরকারে?

রাজনৈতিক ডেক্স : নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার  ঠিক করতে পারছে না বিএনপি। গত ছয় মাস ধরে এ নিয়ে দলে আলোচনা চলছে। ‘শিগগিরই রূপরেখা ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া’- এমন কথা  বলে আসছেন দলের নেতারা। তবে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারছেন না তারা। মুলত  রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন দলের হাইকমান্ড। অনুকূল পরিবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। ‘সহনশীল’ দৃশ্যপট দেখলেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই রূপরেখা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছেন দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। প্রশ্ন হচ্ছে কি থাকছে বিএনপির সহায়ক সরকারে ?

বিএনপি নেতারা বলছেন, রূপরেখা ও প্রস্তাব দেওয়ার আগেই সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোন ইতিবাচক মনোভাব না দেখানোর ফলে সহায়ক সরকারের ঘোষণাটা বিলম্বিত হচ্ছে। তাদের এই নেতিবাচক মনোভাব বদলাতেও পারে। সব কিছু দেখে-বুঝে অতঃপর বেগম খালেদা জিয়া রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন। তবে চলতি বছর এটা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছরের প্রথম দিকে রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে।

দলের আইনজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি এই খসড়ার ত্রুটি-বিচ্যুতি, সংশোধন-পরিমার্জন অব্যাহত রেখেছেন। বিএনপি সূত্র জানায়, দলের দুইজন থিঙ্কট্যাংককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো বিভিন্ন দেশের নির্বাচনকালীন সময়ের সরকার ব্যবস্থার তথ্য সংগ্রহের জন্য। যে সব দেশে পক্ষপাতহীন বা কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে, সে সব দেশে নির্বাচনকালীন সরকার কাঠামো কেমন থাকে জানাতে বলা হয়েছে বেগম জিয়াকে। এই রূপরেখায় তা উদহারণ হিসাবে পেশ করা হবে। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামেও দুই দফা এই রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

দলের একজন সিনিয়র আইনজীবী নেতা জানান, বর্তমান সংবিধানের কোথাও নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু নেই। এজন্য সরকারের আন্তরিকতা ও সমঝোতা ছাড়া কিছু হবে না। ফলে রূপরেখায় প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে সমঝোতাকে। তাই একাধিক বিকল্প প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটা সুবিধামতো সময়েই মানুষের সামনে তুলে ধরবেন বেগম জিয়া।

জানা গেছে, তিনটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা করছে বিএনপি। এর মধ্যে প্রথম প্রস্তাবটি হলো- সংসদ ভেঙে প্রধানমন্ত্রীকে না রেখে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। দ্বিতীয়ত, সরকার প্রধান হিসেবে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সর্বময় ক্ষমতা খর্ব করা।

তাকে ছুটিতে পাঠিয়ে তার নির্বাহী ক্ষমতা কমানো এবং তৃতীয়ত, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের টেকনোক্র্যাট কোটায় স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন। তবে রূপরেখা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতা জানান, এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে যাতে একটি সমঝোতা হয় সেদিকেই মূল টার্গেট রাখা হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবটি সরকার প্রত্যাখ্যান করলেও স্বভাবত পরের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

দলের স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র সদস্য জানান, মুলত সংবিধানের আলোকেই ৩ মাস মেয়াদের একটি সহায়ক সরকারের রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এই রূপরেখায় রাষ্ট্রপতির অধীনে নির্বাচনকালীন ৩ মাস মেয়াদের সরকারের মন্ত্রিসভায় স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন নিবন্ধিত সকল রাজনৈতিক দলের থেকে কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে-যে মন্ত্রিসভার সদস্যরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন। এই মন্ত্রীসভায় স্থান প্রাপ্তির মাপকাঠি হবে-সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত রাজনৈতিক দলের ক্রমিক। মন্ত্রীসভা হবে ছোট কাঠামোর। এতে প্রকৃত নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হতে পারে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেন।

ঐ নেতা জানান, সংবিধানের আলোকেই বিএনপির প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর ৩ মাসের জন্য ছুটিতে থাকাসহ রাষ্ট্রপতির অধীনে একটি নিরপেক্ষ সরকার কাঠামোর প্রস্তাবনা থাকছে। প্রধানমন্ত্রী তার পদে বহাল থেকে ছুটিতে থাকার মাধ্যমে নির্বাচনকে কোনোভাবে প্রভাবান্বিত না করার গ্যারান্টি।

রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করতে পারেন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের কাঠামোতে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত নির্বাচনকালীন সরকারের কথাও বিবেচনায় রাখা হতে পারে। যে সরকারে সংসদের তত্কালীন বিরোধী দল বিএনপি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থাযী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নিরপেক্ষ। তা না হলে পরে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। একাধিক বিকল্প প্রস্তাবও আছে। রাষ্ট্রপতি বা প্রধান বিচারপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করার প্রস্তাব থাকতে পারে সহায়ক সরকারের প্রস্তাবে। সেখানে যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকলে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। যখনই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তখন নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। তার প্রমাণ ১৯৭৩ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন যথাসময়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রস্তাব দেবেন। ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা সরকারকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাবো। আমাদের রূপরেখার মূল ভিত্তি হলো-নিরপেক্ষতা ও সমঝোতা। কিন্তু সরকার যদি আমাদের প্রস্তাবে সাড়া না দেয় তাহলে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষায় রাজপথেই নিরপেক্ষ সরকারের ফয়সালা হবে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।