শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
রাজনীতির ইতিহাসে বিষ দিয়ে হত্যার যত চেষ্টা

একুশে বার্তা ডেক্স : সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত এক পক্ষত্যাগী রুশ গোয়েন্দা ও তার মেয়েকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পক্ষত্যাগী রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে বিষ প্রয়োগের ঘটনায় সন্দেহের আঙ্গুল তোলা হচ্ছে রাশিয়ার দিকে। কারণ, স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমপর্কে টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। পুরো বিশ্বজুড়েই আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা। এমন বিষ প্রয়োগের ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়।

এর আগেও আরো এক রুশ গুপ্তচর আলেকজান্দার লিতভিনেনকোকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছিল যুক্তরাজ্যে। লিতভিনেনকোর শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল তেজষ্ক্রিয় পোলোনিয়াম। তার বিষক্রিয়ায় তিনি মারা যান। এ দু’টি ঘটনা কাকতালীয়ভাবে খুব কাছাকাছি। স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে এখন হাসপাতালে জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। সের্গেই স্ক্রিপাল, তার মেয়ে ও লিতভিনেনকোর মতো আরো বহু মানুষকে রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বিষ প্রয়োগ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব হত্যাচেষ্টার কোনোটা হয়েছে সফল। আর কোনোটা বিফল। নিচে এ রকম কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করা হলো।

সের্গেই স্ক্রিপাল
৬৬ বছর বয়সী সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে বৃটেনের স্যালিসবেরি শহরের একটি শপিং মলের সামনে অজ্ঞান অবস্থায় একটি বেঞ্চের উপর পাওয়া যায়। তিনি কোনো অজ্ঞাত বিষের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশের ধারণা।

কিম জং নাম
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈমাত্রেয় ভাই কিম জং নাম ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে প্রাণ হারান। দৃশ্যত দুই মহিলা তাঁর মুখে ভিএক্স নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ মাখিয়ে দিয়েছিলেন। গতমাসে মালয়েশিয়ার একটি আদালতে অভিযুক্তদের বিচার চলার সময় জানা যায় যে, আক্রান্ত হওয়ার সময় কিম জং নাম-এর পিঠের ব্যাগে ভিএক্স বিষের ডজন খানেক অ্যামপুল ছিল।

আলেক্সান্ডার লিটভিনেঙ্কো
সাবেক রুশ গুপ্তচর লিটভিনেঙ্কো দেশ ছেড়ে বৃটেনে আশ্রয় নেবার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন। রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস এফএসবি ও পুতিনের বিরুদ্ধে দু’টি বই লিখেন। ২০০৬ সালের ২৩শে নভেম্বর দু’জন সাবেক কেজিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর লিটভিনেঙ্কো অসুস্থ হয়ে পড়েন ও পরে হাসপাতালে প্রাণত্যাগ করেন। সরকারি তদন্তে দেখা যায় যে, তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম-২১০ বিষের ক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ভিক্টর ইউশ্চেঙ্কো
ইউক্রেনের বিরোধী নেতা ইউশ্চেঙ্কো ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে দেখা যায়, একটি ভাইরাল ইনফেকশন ও সেই সঙ্গে রাসায়নিকের বিষক্রিয়ার ফলে তার ‘অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটিস’ হয়েছে। এর ফলে ইউশ্চেঙ্কোর জন্ডিস হয়, মুখ ফুলে যায় এবং ত্বকে এক ধরনের দাগ থেকে যায়, যা ডাইঅক্সিন বিষের প্রভাবে ঘটে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকদের ধারণা। ইউশ্চেঙ্কো দাবি করেন, সরকারি চররা তাকে বিষ দিয়েছে।

খালেদ মেশাল
১৯৯৭ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইসরাইলের গুপ্তচর বিভাগ হামাস এর নেতা খালেদ মেশালকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কথিত আছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বয়ং নাকি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মেশাল জর্ডানের আম্মানে অবস্থিত হামাসের কার্যালয় থেকে বেরোনোর সময় দু’জন ইসরায়েলি গুপ্তচর তাঁর কানে কোনো বিষাক্ত পদার্থ ‘সেপ্র’ করে। মেশাল অক্ষতই থাকেন এবং পরে ঐ দুই ইসরায়েলি গুপ্তচরকে ধরাও সম্ভব হয়।

গেয়র্গি মার্কভ
১৯৭৮ সালে বুলগেরীয় সরকারবিরোধী মার্কভ বিবিসি’তে কাজ শেষ করে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন  হঠাৎ একটা সুচের মত কিছু একটা তার উরু ফুঁড়ে দেয়। মার্কভ আশপাশে তাকালে দেখেন, এক পথচারী তার ছাতা মাটি থেকে তুলছে। ছুঁচ ফোঁটার জায়গাটা ফুলে উঠে চারদিনের মধ্যে মার্কভ প্রাণ হারান। ময়না তদন্ত অনুসারে, একটি ০.২ মিলিগ্রাম রিসিন বিষের পেলেট থেকে মার্কভের মৃত্য ঘটেছে। পথচারীর ছাতা থেকেই পেলেটটা ছোঁড়া হয়েছিল, বলে অনেকের বিশ্বাস।

গ্রিগরি রাসপুটিন
রুশ বিপ্লবের ঠিক আগে রাসপুটিন একজন আধ্যাত্মিক শক্তিসমপন্ন গুনিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গের ইয়ুসুপভ প্রাসাদে আসেন প্রিন্স ফেলিক্স ইয়ুসুপভের আমন্ত্রণে। প্রিন্স ইয়ুসুপভ তাকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ মাখানো কেক খেতে দেন ও সায়ানাইড মাখানো পাত্রে সুরা পরিবেশন করেন। তবে সেই বিষাক্ত কেক ও সুরা থেকে রাসপুটিন মারা যাননি। অবশেষে, রাসপুটিনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
(ডয়েচে ভেলে অবলম্বনে)

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।