শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচন আইনি জটিলতায় থেমে যেতে পারে ইলেকশন

ডেক্স প্রতিবেদন : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটিতে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালায় নির্বাচন করতে নারাজ ইসি।
কারণ নতুন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়ে আইনে স্পষ্ট বিধান না থাকা এবং নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার নিয়ে জটিলতা হতে পারে- এমন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তাদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে আইনি দুর্বলতা উলে্লখ করে আদালতে মামলা দায়ের হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থগিত হয়ে যেতে পারে নির্বাচন। এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান না হলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করা দুরূহ হবে বলেও ধারণা তাদের। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

তবে সংশি্লষ্ট অনেকের অভিমত, একটি সংসদীয় আসন খালি হলে, যেভাবে উপনির্বাচন হয়, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদ খালি হওয়ার বিষয়টিও একই ধরনের।

উপনির্বাচনে নির্বাচিত একজন এমপি যেমন ওই সংসদের মেয়াদকাল পর্যন্ত এমপি থাকতে পারেন, তেমনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপনির্বাচনে যিনি নির্বাচিত মেয়র হবেন, সেও মরহুম আনিসুল হকের যে বাকি মেয়াদ আছে, নির্বাচিত নতুন মেয়র সেই মেয়াদ পর্যন্ত থাকতে পারবেন।

এর সঙ্গে কোনোভাবেই নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের বিষয়টি মেলানোর সুযোগ নেই। যদি মেয়র উপনির্বাচনের সঙ্গে নতুন ৩৬টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচন করতে হয়, তাহলে তাদের মেয়াদ হবে পঁাচ বছর। আর যারা মেয়র উপনির্বাচনের সঙ্গে নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনকে যুক্ত করে জটিলতার কথা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ।

তারা কোনোভাবেই মেয়র পদের উপনির্বাচন চান না। তারা চান, বাকি সময়টুকু প্যানেল মেয়র দিয়ে পার করতে। কিন্তু এটি কোনোভাবেই মানতে নারাজ উত্তর সিটির সাধারণ ভোটাররা।

তাদের দাবি, কোনো জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে মেয়র পদের উপনির্বাচন বানচাল করা চলবে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মেয়র পদে উপনির্বাচন চান তারা।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করার চিন্তা করছে ইসি।  কারণ নতুন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকালের বিষয়টি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্ধারণ করার এখতিয়ার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সদ্ধিান্ত নিতে আজ রোববার বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চেৌধুরী বৃহস্পতিবার  বলেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬টি নতুন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনের রোববারের বৈঠকে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, যারা কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন, তাদের মেয়াদকাল কতদিন হবে, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচন করা যাবে না, সাধারণ নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া দুটি সিটি কর্পোরেশনের এলাকা সম্প্রসারণের কারণে ভোটারও স্থানান্তর হয়েছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও আলোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

একই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম  বলেন, এটি একটি জরুরি বিষয়। এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খুব শিগগিরই সদ্ধিান্ত নেবেন। ওই সভায় আইনি জটিলতা হতে পারে কিনা, আইন সংশোধনের প্রয়োজন আছে কী- তা নিয়ে আলোচনা হবে। যদি আইনি জটিলতা থাকে তখন স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

ইসির সংশি্লষ্ট কর্মকর্তা জানান, পেৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ আইনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকার নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট বিধান থাকলেও সিটি কর্পোরেশন আইনে তা উলে্লখ নেই।

আর এ কারণেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদের মাঝামাঝি সময়ে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কমিশনারদের মেয়াদ কতদিন হবে∏ তা এখনও স্পষ্ট নয়। রোববার কমিশন সভার কার্যপত্রে বিষয়টি উলে্লখ করা হবে।

ওই কার্যপত্রে ঢাকার দুই সিটির বিগত নির্বাচনের তথ্য এবং নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরে কমিশনের সদ্ধিান্ত চাওয়া হবে। এছাড়া এ নির্বাচন ঘিরে সরকারের মতামত জানাও জরুরি।

কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকার যদি এ নির্বাচনে আগ্রহী হয়, তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ করে দিতে পারে অথবা সিটি কর্পোরেশন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে।

আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ঝুলে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হলে সেখানে কতদিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে বা নির্বাচনের প্রয়োজন আছে কিনা  সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন আইনে কিছু বলা নেই।

এ কারণে এসব ওয়ার্ডে নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে কমিশন ততটা চিনি্তত ছিল না। কিন্তু মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পরই উপনির্বাচনের বিষয়টি উঠে এসেছে।

বিষয়টি নিয়ে কমিশনারদের মধ্যে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে নতুন ওয়ার্ডে কমিশনারদের মেয়াদ, আগামী জানুয়ারিতে হালনাগাদ নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কোনো এলাকা পুরনো ওয়ার্ড থেকে ভেঙে এসেছে কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমাদের কাছে মনে হয়েছে, যেহেতু সিটি কর্পোরেশনের আইন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় করে থাকে, তাই এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যমান আইনে এই নির্বাচন করার পক্ষে আমি নই। কারণ বর্তমান আইন বহাল রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে এবং এরপর মামলার কারণে নির্বাচন আটকে গেলে এর দায় কমিশনের ওপর বর্তাবে। আমি চাই সব জটিলতা নিরসন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক।

সংশি্লষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই ধরনের মত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, বিদ্যমান আইনেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করা সম্ভব।

তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশন আইনের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী কর্পোরেশনের মেয়াদ উহা গঠিত হবার পর প্রথম সভা অনুষ্ঠানের দিন থেকে পঁাচ বছর হবে।

সুতরাং কাউন্সিলরদের মেয়াদ পঁাচ বছর হতে হবে এমনটি নয়। তাদের মতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর কাউন্সিলরদের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে।

এছাড়া আইনের ৪(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকা সিটি কর্পোরেশনভুক্ত হলে, এ আইনের সব আদেশ-নির্দেশ ও ক্ষমতা উক্ত এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে। আবার কেউ কেউ মনে করেন, কাউন্সিলরদের মেয়াদ নির্ধারণ না করা এবং হালনাগাদ ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন ভোটারদের এ নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া না হলে আইনি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে  বলেন, ঢাকার দু&ই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে জুলাই মাসে।

এরপর সেপ্টেম্বরে এসব ওয়ার্ডে নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এতদিন নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কিছু জানতে চায়নি। ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, স্বতন্ত্র সিটি বা পেৌর কর্পোরেশন হলে মেয়াদকাল পঁাচ বছর হয়। আর কোনো সংস্থার সীমানা বাড়লে সেটা ওই সংস্থার মেয়াদকাল যতদিন, ততদিনই হবে।

এটা আইনে লেখা থাকার কোনো বিষয় নয়। তারপরও যেহেতু নির্বাচন কমিশন এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে, তারা যদি আমাদের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, তাহলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। কেননা সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের সবারই কাম্য।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন  বলেন, ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে উপনির্বাচন নির্দষ্টি মেয়াদেই করতে হবে। নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত (নারী) ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদেও ভোট গ্রহণ করতে হবে। যদি এ দুটি পদের (মেয়র ও কাউন্সিলর) একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটিতে ভোট গ্রহণ করা হয় অথবা নতুন ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়া না হয়, সেক্ষেত্রে জটিলতার নিরসন হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল কত হবে, সেটা একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্ধারণ করে দিতে পারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, হালনাগাদে যুক্ত হওয়া বা নতুন ভোটারদের দেয়ার ব্যবস্থা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।

প্রসঙ্গত, ৩০ নভেম্বর চিকিত্সাধীন অবস্থায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক। পহেলা ডিসেম্বর থেকে পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। আইন অনুযায়ী শূন্য ঘোষণার ৯০ দিনের মধ্যে ওই পদে উপনির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যুগান্তর

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।