রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
৫ লাখ মোবাইল সিম রোহিঙ্গাদের হাতে

 ডেস্ক রিপোর্ট :  : কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ৩০টি ক্যাম্পের ১১ লাখ রোহিঙ্গার অর্ধেকের হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ছাড়াই এত সিমকার্ড কীভাবে তাদের হাতে গেল- এ প্রশ্নের উত্তর কারও কাছে নেই। মঙ্গলবার কক্সবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সভায় বলা হয়েছে, ৫ লাখের বেশি মোবাইল সিম ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা।

সমকাল জানায়,কক্সবাজার জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময়ের মধ্যে সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৩টি অস্ত্র ও বিপুল মাদক।

আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা বলেছেন, শুধু মোবাইল সিম নয়; ক্যাম্পগুলোতে থ্রি-জি নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটও ব্যবহার করছে রোহিঙ্গারা। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনেও বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সক্রিয় থাকে। ফলে সেখানেও অনেক বাংলাদেশি সিম ব্যবহূত হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। সভায় বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হোসেন খান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে দ্রুত কাঁটাতারের বেষ্টনী নির্মাণ করে তাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ক্যাম্পগুলোতে ইয়াবা ব্যবসাসহ নানা অপরাধ হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার দ্রুত থামাতে হবে। ক্যাম্পের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরও একই স্থানে নিয়ে আসতে হবে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে ‘সীমান্ত সড়ক’ নির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিজিবি অধিনায়ক।

উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী বলেছেন, বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক ডজনের বেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ বর্তমানে এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, স্থানীয়দের এখানে বসবাস কঠিন হয়ে উঠেছে। এদের ভার স্থানীয়রা আর নিতে পারছে না। তাদের শিগগিরই নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে এ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

কক্সবাজার জেলার সরকারি কৌঁসুলি মমতাজ আহমদ বলেছেন, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু তারা দেশের জন্য ‘বিষফোড়া’ হয়ে উঠছে। কমিউনিটি পুলিশের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা প্রত্যাবাসনবিরোধী। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু এদের ভয়ে তাদের কেউ মুখ খোলে না।

একাধিক সূত্রমতে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনবিরোধী করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গোপনে কাজ করছে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে সক্রিয় দালাল গ্রুপ গড়ে তুলতে সেখানকার গোয়েন্দা সংস্থা গোপনে টাকা ঢালছে। এভাবে চলছে প্রত্যাবাসনবিরোধী প্রচারণা। কেউ মিয়ানমারে ফিরতে চাইলে তাকে হত্যা করা হচ্ছে; পরিবারের সবাইকে হত্যা করার হুমকি

দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় বালুখালী ক্যাম্পের হেড মাঝি আরিফ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। তারা রোহিঙ্গাদের ভাষানটেকে না যাওয়ার জন্যও চাপ দিচ্ছে, প্রচারণা চালাচ্ছে।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলনের নেতা মাহমদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা এখানে আইন-শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটাচ্ছে। স্থানীয় প্রায় দুই লাখ মানুষ তাদের হাতে বন্দি।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও উদ্বিগ্ন। একটি স্থানে এত মানুষ একসঙ্গে থাকতে পারে না। তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠেছে।

তিনি জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এখানে ৭টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ নয়টি স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। রয়েছে পুলিশের ১২টি বিশেষ মোবাইল টিম। ক্যাম্পে নানা সংকট থাকলেও তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে চলেছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।