রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বিমান জুড়ে আনন্দের বন্যা : ডবল দায়িত্ব থেকে বিমান এমডি জামিলকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে! পাইলট নিয়োগ কেলেংকারির দায় এড়াতে পারছেন না ফারহাত জামিল

একুশে বার্তা রিপোর্ট : ডিএফও‘র পর এবার বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হতে পারে জামিলকে। ইতিমধ্যে জামিলের বিরুদ্ধে সরকারের উচ্চ পরযায় থেকে এ বিষয়ে অনুমতি মিলেছে। অভিযোগ জামিলের বিরুদ্ধে দুই দফায় পাইলট নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম-দুনীতির প্রমান মেলেছে। বিমান মন্ত্রনালয় থেকে যে তদন্ত হয়েছে সেখানেও পাইলট নিয়োগে মুল হোতা ছিলেন জামিল।

জানা গেছে, দুই দফায় ৫৮ পাইলট নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে  ডিএফও‘র পর এবার ফাঁসতে পারেন এমডি ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিল। ইতিমধ্যে তাকে ডিএফও থেকে সরিয়ে দিয়ে সখানে সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন মাহতাবকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বিমান জুড়ে আনন্দের বন্যা নেমে এসেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুটি নিয়োগেই মোসাদ্দিক আহম্মেদের সঙ্গে মূল ভূমিকায় ছিলেন এই ফারহাত জামিল। তিনি ছিলেন নিয়োগ কমিটির প্রধান। পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) থাকার কারণে দুটি নিয়োগে তাকে কমিটির প্রধান করা হয়েছিল।

দুদকের পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্টেও নতুন এমডি ক্যাপ্টেন ফারহাত জামিলসহ বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ও একাধিক সদস্যের সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণ মেলেছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে পাইলট নিয়োগে ক্যাপ্টেন জামিল আহম্মেদ সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহম্মেদের ভাতিজাসহ কমপক্ষে ৩০-৩২ জন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করে তাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ৭ জন ছিলেন বিমান পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) নেতা ও সদস্যদের স্ত্রী, ছেলেমেয়ে ও পরিবারের সদস্য। ২ প্রার্থী ছিলেন সাবেক পাইলটের ছেলে।

জানা গেছে, এর আগে ১০ জনের পরিবর্তে ২৬ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। অভিযোগ ওই বছর ১০ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সংশ্লিষ্ট কমিটিতে। কিন্তু পরবর্তীকালে ক্যাপ্টেন জামিল আহম্মেদ কমিটির অন্য সদস্যদের না জানিয়ে গোপনে ফাইলে নোট লিখে ১০ জনের পরিবর্তে ২৬ জনকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করেন। আর তাতে সায় দেন সাবেক এমডি মোসাদ্দিক আহম্মেদ। বিমানের সাবেক এক প্রভাবশালী পাইলটের ছেলেকে নিয়োগ দেয়ার জন্য গোপনে ওই নোট ইস্যু করা হয়। ওই পাইলটের ছেলের সিরিয়াল নম্বর ছিল ২৬।

জামিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে পাইলটের আবেদন করা প্রার্থীদের কাগজপত্র চার সদস্যের কমিটির মাধ্যমে বাছাই করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কাজটি করেছেন তিন সদস্যের কমিটির মাধ্যমে। কমিটির আহ্বায়ককে বিষয়টি জানানোই হয়নি। মৌখিক পরীক্ষার সময় কমিটির সদস্য চিফ অব ট্রেনিং উপস্থিত ছিলেন না। ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিংকে দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। চিফ অব ট্রেনিং এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

জানা গেছে, বিমানের সাবেক এমডি মোসাদ্দেক আহমেদ, পাইলট নিয়োগ কমিটির প্রধান ক্যাপ্টেন জামিলসহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও প্রকল্পের দুর্নীতি খুঁজে বের করতে দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই টিমের সঙ্গে সহকারী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিনকেও সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সহকারী পরিচালক মো. সালাহ উদ্দিনকে আলাদাভাবে বিমানে পাইলট নিয়োগে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

পাইলট নিয়োগ কেলেঙ্কারি ছাড়াও জামিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক কম ফ্লাই করেও প্রতি মাসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়, বেতনের বাইরে শুক্র-শনিবার ফ্লাই করার নামে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে ‘ডে-অফ ফি’ও উঠাচ্ছেন। প্রসঙ্গত, বিমানের আইন অনুযায়ী, বছরে একজন পাইলটকে কমপক্ষে ৭৫০ ঘণ্টা ফ্লাই করতে হয়। এর নিচে ফ্লাই করার অর্থ বসে বসে বেতন নেয়া।

জানা গেছে, আগে বিমানের পাইলটদের বেতন হতো ফ্লাইং আওয়ার অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টা অনুযায়ী। কিন্তু পাইলটরা আন্দোলন করে ২০০৮ সাল থেকে তাদের বেতন স্থায়ী করে নেন। অর্থাৎ ফ্লাই করুক আর না করুক, বিমানকে প্রত্যেক পাইলটের জন্য মাসিক বেতন দিতে হতো গড়ে ৭ লাখ টাকা। সম্প্রতি আবারও পাইলটদের বেতন ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এখন একজন সিনিয়র পাইলট মাসে বেতন পাচ্ছেন ৯ লাখ টাকা। এর বাইরে মাসে ৭৫০ ঘণ্টার বেশি ফ্লাই করলে প্রতি ঘণ্টার জন্য অতিরিক্ত ৫ হাজার টাকা অ্যালাউন্স দিতে হচ্ছে।

এছাড়া মাসে ৮ দিন বাধ্যতামূলক ছুটি পান একজন পাইলট। কোনো কারণে ওই ছুটি কর্তন করা হলে প্রতিদিনের জন্য ১৪ হাজার টাকা ‘ডে অফ ফি’ দিতে হয়। অভিযোগ আছে, বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন্স (ডিএফও) ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদ ২০১৮ সালে ফ্লাই করেছেন মাত্র ২৪২ ঘণ্টা। অথচ তিনি প্রতি মাসে গড়ে ৯ লাখ টাকার (ট্যাক্স ছাড়া) পাশাপাশি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ‘ডে অফ ফি’ উঠাচ্ছেন। এই ২৪২ ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশই ছিল ভিআইপি বা ভিভিআইপি ফ্লাইট। অথচ ক্যাপ্টেন জামিল বিমানের একজন উচ্চপর্যায়ের সিমুলেটর ইন্সট্রাক্টর। সিডিউল ফ্লাইটের পাশাপাশি তিনি সিমুলেটর ট্রেনিংয়েও ফ্লাই করেন না। ফলে মোটা অঙ্কের টাকায় বিদেশি ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিতে তার ফ্লাইগুলো করাতে হচ্ছে।

এছাড়া ক্যাপ্টেন জামিলের ফ্লাইগুলো করানোর জন্য প্রতি মাসে অন্য একজন পাইলটকে ৫ লাখ টাকা অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে ক্যাপ্টেন জামিল আহমেদ কিছুদিন আগে বলেছেন, অন্য পাইলটদের সম্পর্কে তিনি কিছু বলবেন না। যেহেতু তিনি ম্যানেজমেন্টে আছেন সেজন্য তার ফ্লাইট না করলেও চলে। অর্থাৎ পলিসিগত কারণে তিনি ডিউটি করতে পারছেন না।

 

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।