শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
প্রধানমন্ত্রীকেই কেন সবকিছু সামলাতে হবে?

দীপক চৌধুরী : লবনের গুজব, পেঁয়াজের গুজব, চালের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের বাজারে গুজব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা, আবরার হত্যার পর বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) পরিস্থিতি, নুসরাত হত্যা, নতুন সড়ক আইন অর্থাৎ সবকিছুই সামাল দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। যেখানেই সংকট, যেখানেই অচলাবস্থা, যেখানেই সমস্যা সেখানেই তাঁকে সামনে আনা হয়। হ্যাঁ, অবশ্যই তিনি সম্মুখে আসবেন। কিন্তু যখন আমরা আর পারছি না কেবল তখনই। সবরকম কর্মকা-ের দায় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হবে কেনÑ এ প্রশ্নতো সম্মুখে চলে এসেছে। সাধারণ মানুষের ঠোঁট চেপে ধরে রাখবেন কতক্ষণ? আমরা ইচ্ছা করেই যেন, সকল সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকি। এই প্র্যাকটিস দীর্ঘদিন ধরেই চলে এসেছে। আগের পিরিয়ডের চেয়ে যেন এখন বেশি। এটা এখন যেন চরম পর্যায়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে সরকার পরিচালনায় আমরা সহযোগিতা করবো। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই তাঁকে নিতে হয়। কিন্তু দেশিয় অনাকাক্সিক্ষত উটকো ঝামেলা সৃষ্টি করছি আর পরবর্তীকালে সেই ‘বোঝা’র সমাধান তাঁকে বের করতে হচ্ছে। এ কারণেই মানুষের মুখে প্রশ্ন, তাহলে দল এতো এতো মানুষের কী দরকার? কী প্রয়োজন আছে এতো মাথার?

যত করেই বলা হোক না কেন, গুজব ছড়িয়ে ফায়দা লুটছে একটি মহল। ৩০ টাকার পেয়াজ ২৫০ টাকা, ৩৫ টাকার লবন ১০০টাকা, ৩২ টাকার চাল ৪২ টাকা করেছে ওরা। সুতরাং কোনো ভাল জবাব নেই। আর কোনো জবাব দিয়েই কিন্তু সন্তুষ্ট করা অসম্ভব মানুষকে। এদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে নানাভাবে এটা সত্য। লন্ডন থেকে ষড়যন্ত্র করা হয়। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত নতুন নয়। তা তো কঠিন হাতে মোকাবেলা করতে হবে। শুধু আইন কঠোর হলেই হবে না, প্রয়োগ কঠোর হতে হবে। যার জন্য যে কাজটি প্রযোজ্য তাকেই সেটি করতে হবে। অন্যকে দিয়ে নয়।
বলছিলাম গুজবের কথা। ঢাকাসহ সারাদেশে গত সোম ও মঙ্গলবার লবন কেনার হিড়িক পড়েছিল। এর আগের দিনও এই গুজব ছড়ানো হয়। গুজবের শুরু কিন্তু রোববার থেকেই। এরপর পোক্ত হল এটি সোমবার। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে সফররত। মঙ্গলবার রাত ৮টায় সংবাদ সম্মেলন ডাকা হল। গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলো। সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকেই এ সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু এটি সোমবার কেন করা হলো না এ প্রশ্নও উঠেছে। যাকগে, মোদ্দা কথা ‘গুজবে কান না দেওয়ার’ পরামর্শ দেওয়া হয়।

শেষপর্যন্ত আমরা কী দেখলাম? দেখলাম যে, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘লবণের দাম বাড়াতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী গুজবের সুযোগ নিচ্ছেন। যাঁকে জেল দেওয়ার দরকার, তাঁকে জেল দিন, যাঁকে জরিমানা করা দরকার, তাঁকে জরিমানা করুন। লবণের দাম যেন ঠিক থাকে।’ কিন্তু কঠিন এই কাজটি কে করবেন তা তাৎক্ষণিক পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। অনেকেই সিন্ডিকেট ইস্যু খুঁজছেন। আমলারা সিন্ডিকেট খুঁজছেন। পেঁয়াজের দাম বাড়ছে, মন্ত্রীরা বলছেন, সিন্ডিকেট করেছে। লবণের দাম বাড়ছে, আমলারা বলছেন, সিন্ডিকেট করছে। কিন্তু সেই সিন্ডিকেটের লেজটি স্পর্শ করা হয়নি। কেন? কেন ওদের খুঁজে বের করা হয় না? এই তাজা প্রশ্নতো সাধারণ মানুষের।
২০১৯-এ নতুনদের বেশি সংখ্যায় মন্ত্রিসভায় আসার মধ্য দিয়ে একই দল ক্ষমতায় থাকলেও সরকার পরিচালনার দৃষ্টিভঙ্গিতেও একটা বড় পরিবর্তন দেখা যাবে বলে আশা করা অমূলক নয়। নতুন মন্ত্রী হয়েও যদি দক্ষতা, সততায় নতুন কিছু কেউ করে দেখাতে পারেন সেটাই বরং অনেক বেশি ইতিবাচক হবে জাতির জন্য। তারই একটা শুভ সূচনা হয় এই মন্ত্রিসভার মাধ্যমে। নতুনরা এসেছেন, তারা অবশ্যই তাদের চিন্তায়, পরিকল্পনায়, কাজে ভিন্ন কিছু দৃষ্টান্তস্থাপন করবেন। নতুনদের মধ্যে ভালো কিছু করে মানুষের কাছে নিজেদের যোগ্যতর হিসেবে উপস্থাপনেরও একটা আগ্রহ থাকার কথা। কারণ, পুরনোরা বেশি সংখ্যায় থাকলে মনে হতো আগের নিয়মেই সরকার চলেছে। অর্থাৎ আগের মতোই চিন্তা-ভাবনা, কাজের পদ্ধতি এবং আগের কিছু অনিয়ম থাকলে সেগুলোও রয়ে গেছে। কিন্তু কোথায় যেন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা দরকার হয়, নতুনদের অভিজ্ঞতা কম। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, মন্ত্রিত্বের জন্য অভিজ্ঞতা খুব জরুরি কিছু নয়। কারণ মন্ত্রিত্বের পূর্ব অভিজ্ঞতা খুব বেশি রাজনীতিকের থাকে না। বরং আমরা দেখেছি, আগের মন্ত্রিসভার বিতর্কিত একাধিক চরিত্র বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও প্রমাণ করেছেন, বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর সদিচ্ছা রয়েছে। এবারো সম্ভবত এখনই বিতর্কিতদের বিষয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে। যদিও তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে। এটুকু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।

পরিশেষে বলতে চাই, এটা আমরা অবশ্যই জানি যে, জনগণের সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টার্গেট করার মূল কারণ, কোনো লোভ বা ভয় দেখিয়ে তাঁকে কোনোভাবেই দেশপ্রেম থেকে দমানো যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে যে কয়জন সৎ, মানবতাবাদী, গণতন্ত্রপ্রেমী, মহান রাষ্ট্রনায়ক বা সরকারপ্রধান জন্মগ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মানব কল্যাণের অগ্রদূত, বাঙালির সভ্যতা-সংস্কৃতিতে জাগ্রত তিনি। রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় অসাধারণ দক্ষ জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃত অর্থেই দেশরতœ। তাই, এ সরকারের প্রতি জনগণের চাওয়া হলোÑ সামাজিক শান্তি-নিরাপত্তা, নারীর নিরাপত্তা, সুশিক্ষামূলক ব্যবস্থা, সুপরিবেশ, গণতান্ত্রিক অধিকারের বিষয়গুলোই যেন প্রাধান্য পায়। আমরা জানি, শীতে সাধারণ সর্দিজ্বরই বেশি হয়। কিন্তু গরমকালে সর্দিজ্বর বেশি হলে বুঝতে হবে এটা খারাপ রোগ। তাই এর চিকিৎসা প্রয়োজন। নাকি?
লেখক: উপ-সম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি ও কলামিস্ট

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।