বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, জননেতা প্রয়াত শামছুল হক , সংগ্রামই যার জীবন

হাবিবুর রহমান হাবিব :জন্ম টাঙ্গাইলে। তাই টাঙ্গাইলের শামসুল হক নামেই সুপরিচিত ছিলেন। তিনি জাহ্নবী হাই স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক এবং করটিয়া সাদ’ত কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি থাকতেন ফজলুল হক মুসলিম হলে।

৪০-এর দশকে নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ১৫০, মোগলটুলী পার্টি হাউসকেন্দ্রিক (ঢাকা) তরুণ কর্মীদের নেতা ছিলেন। তখন তিনি সেখানেই থাকতেন। সে সময় ঢাকার খাজা নেতৃত্বের বিপরীতে তারা সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম গ্রুপের সমর্থক ছিলেন। দেশ বিভাগের আগে তার নেতৃত্বে ঢাকা জেলা মুসলিম লীগ খাজাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়। ঢাকায় পাকিস্তান আন্দোলনের তিনি প্রধান সংগঠক ছিলেন। রাজনীতিতে ছিলেন নিবেদিত ও আদর্শবান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী ও করটিয়ার জমিদার পরিবারভুক্ত খুররম খান পন্নীকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ‘মূল দাবি’ নামে আওয়ামী লীগের প্রথম ম্যানিফেস্টো তার রচিত। ‘৪৮ ও ৫২’-এর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৯ ও ১৯৫২ সালে দু’দফায় তিনি দীর্ঘ দিন কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তার মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে। এর পর বেশ কয়েক বছর বেঁচে থাকলেও তিনি আর স্বাভাবিক হননি। ইডেন কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুন ছিলেন তার স্ত্রী। শামসুল হক বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যখন জেলে যান, তখন স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। শামসুল হকের দুই সন্তান। তারা হলেন- উম্মেবতুল তাজমা তাহেরা (ড. শাহিন) ও উম্মেবতুল ফাতেমা জাহুরা (শায়কা)। তারা বর্তমানে আমেরিকান নাগরিক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে বর্তমানে নাসায় কর্মরত।

১৯৬৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শামসুল হক হঠাৎ নিখোঁজ হন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪২ বছর তার কোনো হদিস মেলেনি। ২০০৭ সালে জানা যায়, শামসুল হক ১৯৬৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, রোজ শনিবার, বাদ জোহর, যোগারচরের বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মরহুম মৌ. মাহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে মারা যান। মরহুম আনছারীর ছেলেরা পূর্বপরিচিত অসুস্থ শামসুল হককে বাড়িতে রেখে সেবাযত্ন ও চিকিৎসা করান। সাত দিন চিকিৎসার পর নেতার মৃত্যু হলে জিগাতলার হুজুর শামস উদ্দিন মাওলানা কর্তৃক জানাজা শেষে নেতাকে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ, দেশ টালমাটাল থাকায় এ আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু কংগ্রেস নেতা মরহুম মাহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে হওয়ায় বিষয়টি গোপন রাখা হয়।

১৯৬২ সালে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এ শামসুল হকের মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাদ’ত কলেজ করটিয়া, শামসুল হকের নিজ বাড়ি, ঢাকায় আবুল হাশিমের বাড়িতে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে নেতার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

এর তিন দিন পর শামসুল হককে টাঙ্গাইলের মাদ্রাসা রোডে হাঁটতে দেখা যায়। ইত্তেফাকের রিপোর্টটি পড়ে শামসুল হক ইত্তেফাক অফিসে গিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেন। পরদিন ইত্তেফাক আনন্দ প্রকাশ করে শামসুল হকের সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করে সংবাদ প্রকাশ করে।

তার বিখ্যাত বই ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ আজও রাজনীতিকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। দার্শনিক আবুল হাশিম, হজরত আল্লামা আজাদ সোবহানী ও টাঙ্গাইলের অ্যাডভোকেট আব্দুল করিম খান (কবি বুলবুল খান মাহবুবের পিতা) বইটি লিখতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। শামসুল হকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বইয়ের মাধ্যমে অ্যারিস্টটল-প্লেটোর মতো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত শামসুল হকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত চমৎকার ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। গভীর শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করি।

শামসুল হকের দৌহিত্র

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।