শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:৩৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
„তথ্যসচিবকে বাধ্যতামুলক অবসরে পাঠাল সরকার : বিমান সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ ডিসেম্বরে : একাধিকবার বদলির পরও সিএএবি ছাড়েননি সরকারের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান

একুশে বার্তা রিপোর্ট : চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। গত ১৬ অক্টোবর  রবিবার তাঁর অবসরের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

মকবুল হোসেনের চাকরির মেয়াদ ছিল আগামী বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। হঠাৎ প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিব পর্যায়ের এই কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানোর ফলে  সচিবালয়ে অনেক কর্মকর্তার কক্ষে এ নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যায়।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মকবুল হোসেন গত ১৬ অক্টোবর রোববার   সকাল ৯টায় সচিবালয়ে আসেন।

এরপর দুপুরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন। তথ্যসচিবের একান্ত সচিব আতাহার মিয়া বৈঠকে গিয়ে অবসরের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানান। প্রজ্ঞাপন দেখে মকবুল হোসেন বৈঠক ছেড়ে তাঁর কক্ষে চলে যান। এরপর সন্ধ্যায় অফিস ছাড়েন।

তথ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলতে এই প্রতিবেদক সচিবালয়ে গেলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁর একান্ত সচিব আতাহার মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্যার এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না। আমরাও কিছু জানি না। বড় স্যাররা বলছেন তাঁরাও কিছু জানেন না। ’ তিনি বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত স্যার মেনে নিয়েছেন। স্যারের অবসরে যাওয়ার নির্ধারিত মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর। ’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে জারি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। ’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁকে (তথ্যসচিব) অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে এটা জেনেছি। কিন্তু কেন অবসর দেওয়া হলো সে বিষয়ে অবহিত নই। এটা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। ’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজম কালের কণ্ঠকে বলেন, চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেলে সরকার ইচ্ছা করলে যে কাউকে অবসরে পাঠাতে পারে, আবার তিনি নিজেও অবসরে যেতে পারেন। এর মধ্যে কোনো কারণের প্রয়োজন হয় না। এ পদ্ধতিতেই এটা সম্পন্ন হয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট সরকারি চাকরি আইনের ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর সঙ্গে অন্য কোনো বিষয় সম্পৃক্ত নেই।

বাধ্যতামূলক অবসর : জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন তথ্যসচিব আ ত ম ফজলুল করিমকে (আবু করিম) বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে হেয় করে কবিতা লেখার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৩ সালে সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারের সাবেক একান্ত সচিব (অতিরিক্ত সচিব) নাসিমুল গণি, সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং অতিরিক্ত সচিব এম এ আকমল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় গণকর্মচারী (অবসর গ্রহণ) আইনের ক্ষমতাবলে সরকার তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল।

বর্তমান সরকারের আমলে অবশ্য চলতি বছর ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা নীলফামারীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে উপসচিব নাফিসা আরেফিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। শিক্ষাজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া শিক্ষাজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে মেহেরপুরের ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়ার পর উপসচিব  মো. শহিদুল ইসলামের নিয়োগও বাতিল করেছিল সরকার।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদসচিব আলী ইমাম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, কারো চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার তাঁকে অবসরে পাঠাতে পারে। এটা সব সরকারের সময় হয়েছে।

মকবুল হোসেন গত বছরের ৩১ মে সচিব হিসেবে তথ্য ও সমপ্রচার মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। এর আগে তিনি যৌথ মূলধন কম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে রেজিস্ট্রার এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কুষ্টিয়ায় জন্ম নেওয়া মকবুল বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের দশম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১ সালে চাকরিতে যোগ দেন।

এ দিকে বিমান সচিবের চাকরিরর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে, তিনি থাকার তদবিরে ব্যস্ত এমন কথা শোনা যায়্। ডিসেম্বরে একডজন সচিব নাকি অবসরে যাবেন –এমন গুনজন ওঠেছে।

এ দিকে সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. মিজানুর রহমানকে সিভিল এভিয়েশনের সদস্য (প্রশাসন) পদ থেকে একাধিকবার বদলি করা হলেও তিনি সিএএবি ছাড়ছেন না। তিনি এখনও সিএএবিতে বহাল। তিনি একাই সিএএবির ৩ পদ গুচরান করছেন।ইতিপূর্বে সরকারের আরেক অতি. সচিব মো. হেমায়েত হোসেনকে সিএএবি থেকে ৪ বার বদলির পর অবশেষে তিনি সিএএবি ছাড়েন।নিজস্ব সূত্র/ কালের কন্ঠ

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।