শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বিমান : ১৫ আগষ্ট পার্টি করে উল্লাস, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি : বিমানের দস্তগীর-ইউসুফ সিন্ডিকেড বহাল : ‘গুরুপাপে র শাস্তি লঘুদণ্ড! কুশিলবদের আবার পদায়নের জোর চেষ্টা, কলকাঠি নাড়ছেন ডিজিএম মনিরুজ্জামান খান

ডেক্স রিপোর্ট :  ১৫ আগষ্ট  শোকের দিন পার্টি করে  আনন্দ- উল্লাস করা, এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। এর পরও এর নায়কদের গুরুপাপে লঘু শাস্তি দেয়া হয়ছে। ফলে আবার তারা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। আর এই ঘটনার নায়ক বিমানের গ্রাউন্ডেড কেবিক্রু গোলাম দস্তগীর- ইউসুফ সিন্ডিকেড। ক্ষমতায় না থাকলেও তাদের দাপট এতোটুকুও কমছে না।আবার দৃশ্যপটে চলে আসছে।

এ যেন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটে নতুন ঘটনা। মিডিয়ার তোড়জোড় আর প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের হম্বিতম্বিতে কিছুদিন পেরোতেই নতুন ঘটনার ডামাডোলে চাপা পড়ে পেছনের ঘটনা। সেই সুযোগে দুর্নীতিবাজদের যোগসাজশ পাল্টে দেয় তদন্ত প্রতিবেদন ও ঘটনার সত্যাসত্য। ‘গুরুপাপে লঘুদণ্ড’ দিয়ে গুরুতর অপরাধীদের দায়মুক্তির এই প্রবণতা যেন চিরচেনা দৃশ্যপট হয়ে উঠেছে।

আকাশপথে রাষ্ট্রের পতাকাবাহী উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চাপা পড়া চাঞ্চল্যকর বহু ঘটনার মতো একই পরিণতি পেতে চলেছে প্রতিষ্ঠানটির কেবিন ক্রু ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও ফ্লাইট পার্সার (বর্তমানে গ্রাউন্ডেড) গোলাম দস্তগীরের নেতৃত্বে সংঘটিত ঘটনাও। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই ইউনিয়ন নেতা দেড় দশক ধরে বিমানের ফ্লাইট পরিচালন, ক্রুদের পদায়ন ও নিয়োগে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে আসছিলেন। ‘ধরাকে সরাজ্ঞান’ করা এই নেতা গত বছরের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের সন্ধ্যায় অনুগত কেবিন ক্রুদের নিয়ে বারিধারা ক্লাবে পার্টির আয়োজন করে জাতীয় সংহতিকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এর সত্যতা উঠে এলে সংশ্লিষ্টরা তাঁকে যে শাস্তি দেন, সেটিকে ‘গুরুপাপে লঘুদণ্ড’ হিসেবেই বর্ণনা করা যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৫ আগস্টে পার্টি আয়োজনের মতো অপরাধের জন্য ফ্লাইট পার্সার মো. গোলাম দস্তগীরকে (পি-৩৫৬৫৪) চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত আদেশে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এক আদেশে বলা হয়, ফ্লাইট পার্সার মো. গোলাম দস্তগীর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আয়োজিত কোনো কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা ৬টায় তিনি বারিধারা ক্লাবে ‘টিম দস্তগীর’ এর একটি আলোচনা সভা এবং নৈশভোজের আয়োজন করেন। আদেশে বলা হয়, ‘এ আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’ যদিও অনেকের মতে, এই অপরাধ অমার্জনীয়।

চিঠিতে এও বলা হয়, সাময়িক বরখাস্ত থাকার সময় মো. গোলাম দস্তগীর বিমানের প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত হাজিরা দেবেন এবং বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করবেন। এর আগে এ ঘটনায় গোলাম দস্তগীরকে গ্রাউন্ডেড করে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দেয় বিমান। গত ২০ আগস্ট এ নোটিশ দেন বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক প্রশাসন (ফ্লাইট সার্ভিস) মো. মনিরুজ্জামান খান।  উল্লেখ্য, ক্রুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাদের আর ফ্লাইটে পাঠানো হবে না– এটাকেই এভিয়েশন খাতে ‘গ্রাউন্ডেড’ বলা হয়। কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে গোলাম দস্তগীর আত্মপক্ষ সমর্থনে কী জবাব দিয়েছেন, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কেবিন ক্রু ইউনিয়নের সাবেক সভাপতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি বড় চক্র তাঁর শাস্তি মওকুফে নানামুখী অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ফ্লাইট সার্ভিস ডিজিএম মুনির খানের সহযোগিতায় ওই ঘটনার অন্যতম কুশীলব কেবিন ক্রু শাহনাজ ও শ্রাবণীকে নতুন করে পদায়নের জোর তৎপরতা চলছে। তবে বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় এবং দস্তগীর চক্রের কুশীলবদের বিরুদ্ধে বিমানের শীর্ষ পর্যায়ে অনমনীয় অবস্থান অব্যাহত থাকায় তারা এখনও সফল হননি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাতীয় শোক দিবসে আনন্দ-ফুর্তির জন্য পার্টি আয়োজনের মতো ধৃষ্টতা ছাড়াও দস্তগীর-ইউসুফ (২০১৮ সালে বিমানের কেবিন ক্রু ইউনিয়নের নির্বাচিত সভাপতি হন গোলাম দস্তগীর ও সম্পাদক হন ইউসুফ সুমন) সিন্ডিকেটের কেবিন-ক্রুরা এখনও অপ্রতিরোধ্য নানা অপরাধ সংঘটনে। বর্তমানে তাদের নেতৃত্বাধীন পরিষদ ক্ষমতায় না থাকলেও এই সিন্ডিকেটকে থামানো যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের শক্ত হাতিয়ার হিসেবে কয়েকজন নারী ক্রু প্রকাশ্যে নানা অনিয়ম ও বিতর্কের জন্ম দিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বিশেষ করে এই সিন্ডিকেটের দুই সদস্য মেরি ও চৈতীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে সবাই অতিষ্ঠ। ক্রু মেরির ইনফ্লাইটে ধূমপানের ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে, যা গুরুতর অপরাধ। কিন্তু তারা এখনও শাস্তির মুখোমুখি না হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিমান প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, দস্তগীর-ইউসুফ ইউনিয়নের প্রভাব খাটিয়ে গেল দেড় দশকে একটিও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট করেননি। ফ্লাইট পার্সার হিসেবে তাদের পদোন্নতিতেও মানা হয়নি কোনো নিয়মনীতি। নিয়োগ বাণিজ্য, ক্রুদের ফ্লাইট বণ্টন, পাচার বাণিজ্য, ভিসা বাণিজ্য, ভিআইপি ফ্লাইটে মনোনয়ন, হোটেল কমিশন নেওয়া ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে দস্তগীর-ইউসুফ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। জানা গেছে, ইউসুফ সুমনের পরিবার কানাডায় বসবাস করায় ৫ মাসে ৯ বার কানাডায় ফ্লাইট অপারেট করেন তিনি। দাম্মাম-কুয়েতসহ নির্বাচিত কিছু ফ্লাইট ছাড়া অন্য কোনো ফ্লাইট করেননি এই দুই ইউনিয়ন নেতা। অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন ও তা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে; কিন্তু অদ্যাবধি অদৃশ্য কোনো কারণে তদন্তের মুখে পড়তে হয়নি তাদের।

অনুসন্ধানে আরও প্রকাশ, শোক দিবসে পার্টির আয়োজন করা এই সিন্ডিকেটের রয়েছে জোরাল শিবির সংযোগ। এক সময়ের সক্রিয় শিবিরকর্মী ও বর্তমানে তরুণ ক্রু আবু তায়েব খান ও আহসানুল কবির দস্তগীর-ইউসুফ সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জন্য এই চক্র বড় হুমকি তৈরি করতে পারে– এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের সাবেক পদস্থ এক কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, ‘বিমানে পাচার, অবৈধ বাণিজ্য তথা সিন্ডিকেটবাজির জন্যই এই চক্র শুধু হুমকি নয়, জাতীয় শোক দিবসে যারা পার্টি করে উল্লাস করে, তাদের রাষ্ট্রবিরোধী অবস্থানও স্পষ্ট। সে কারণে জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গুরুতর হুমকি দস্তগীর-ইউসুফ সিন্ডিকেট। নিরাপত্তার স্বার্থেই বিমানের সব পর্যায় থেকে তাদের স্থায়ীভাবে অপসারণ করা অত্যন্ত জরুরি। সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থতা বা বিলম্বের কারণে এই সিন্ডিকেটের হোতারা নানা পথ গলিয়ে ফের বিমানে নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করবে– এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

তবে অভিযোগের বিষয়ে বিমানের কেবিন ক্রু ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি গোলাম দস্তগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। সমকাল

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।