মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
খালেদার শাস্তিতে তোলপাড় ঢাকা, উদ্বিগ্ন দিল্লি : বিএনপিকে কাছে টানছে দিল্লী

একুশে বার্তা ডেক্স : বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ঢাকার একটি বিশেষ আদালত পাঁচ বছরের জেল দেয়ায় বাংলাদেশ এক অস্থিরতায় নিমজ্জিত হলো। রায় দেয়ার পর পরই তাকে জেলে নেয়া হয়েছে। এর ফলে এ বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, তাতে তিনি অযোগ্য হতে পারেন। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর ঘটনা নিস্তব্ধ নীরবতায় প্রত্যক্ষ করেছে দিল্লি। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা শক্তিশালী হলেও তিনি রয়ে গেছেন বাংলাদেশ শাসনের ক্ষেত্রে উত্তম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক জ্যোতি মালহোত্রা।

এতে তিনি আরো লিখেছেন, আজ শুক্রবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ করার পরিকল্পনা করেছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। তার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আদালতের রায়কে ‘সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে জামিন আবেদন দাখিল করার পূর্ব পর্যন্ত কমপক্ষে তিনদিন জেলে থাকতে হচ্ছে খালেদাকে।
জ্যোতি মালহোত্রা আরও লিখেছেন- বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই দু’নেত্রীর মধ্যে বৈরিতা তীব্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘তিনি এখন কোথায়?’ এ সময় তিনি ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য খালেদা জিয়া ও তার দলের সমালোচনা করেন। এক র‌্যালিতে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যখন কেউ মানুষের ওপর জুলুম করেন তখন আল্লাহর আসন কেঁপে ওঠে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের পরিণতি এমনই হয়। তারই বিচার হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখন প্রশ্ন হলো পাঁচ বছর জেল দেয়ার কারণে খালেদা জিয়া কি ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন? পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে বিএনপি যেমন করেছিল, সেরকম যদি এই নির্বাচন বর্জন করে, তাহলে শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগকে একটি সত্যিকার বিরোধীদল ছাড়া দেশ চালাতে হবে। দিল্লির হতাশার কারণ এটাই।
কয়েক মাসে দিল্লি খুব সচেতন। উগ্র ইসলামপন্থিদের কারণে তাদের মধ্যে চাপ রয়েছে। রয়েছে টান টান মানসিক অবস্থা। এ ছাড়া চীনের দ্রুত প্রভাব বিস্তারের প্রেক্ষিতে ঢাকাকে দিল্লি বড় আর্থিক সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা এটা পরিস্কার করেছে যে, তারা শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে।
বিএনপির সঙ্গে শেখ হাসিনা অনেক বছর ধরেই রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। বিরোধী দলের যাতে দৃশ্যমান ন্যূনতম অংশগ্রহণ থাকে তা অনুমোদন করতে শেখ হাসিনার প্রতি কোমল আহ্বান জানিয়েছে দিল্লি। দিল্লির যুক্তি হলো, গণতান্ত্রিক উপায়ে ভিন্নধর্মীদের বাইরে রাখার পরিবর্তে তাদেরকে যদি ভিতরে রাখা যায় তাহলে সেটা হবে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে উত্তম পন্থা। গত চার বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছেন শেখ হাসিনা। তাই দিল্লির আহ্বান হলো, মিডিয়ার মুখ একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে না তার। বাংলাদেশে চীনকে স্বাগত জানানো ঠিক হবে না।
জ্যোতি মালহোত্রা আরো লিখেছেন, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। এ সময় তিনি ২৬০০ কোটি ডলারের একটি চেক কেটে তা ধরিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনার হাতে। এ সময় থেকেই বাংলাদেশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের বিষয়টিতে বিশেষ করে নজর রাখছে দিল্লি। এর পর চীনের কাছ থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় কিছু অবকাঠামো নির্মাণে অনুমতি দিয়েছে চীনা বিভিন্ন কোম্পানিকে।
এর ওপর ভিত্তি করে বিএনপির কাছে ঘেঁষার পথ পেয়েছে দিল্লি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ঢাকা সফরকালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, যদিও আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলেছিলেন যে, খালেদার সঙ্গে তার সাক্ষাত করা ঠিক হবে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তার ছেলে তারেক রহমানকে ১০ বছরের জেল দেয়া হয়েছে। অভিযোগ, তারা ওই ট্রাস্টের ২ লাখ ৫২ হাজার ডলার আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনা ক্ষমতাকে আরো শক্তভাবে আঁকড়ে ধরার জন্য অবশ্যই পথ করে দিচ্ছে শেখ হাসিনাকে। হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ মনে করে, দুর্নীতি বিরোধী আদালত থেকে তাদের পাওনা পেয়েছেন মা ও ছেলে। ওই আদালত প্রশ্ন রাখেন, যখন বিদেশী বিনিয়োগ প্রবলভাবে আসা শুরু হলো তার আগে কেন ওই ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল। মানবজমিন

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।