রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘অপরাজিত’ এক রিফিউজি যোদ্ধার গল্প

খেলা ডেক্স : পুরো ম্যাচে বল পায়ে আধিপত্য বিস্তার করেও পরাজিত দলের অধিনায়ক হিসেবে মঞ্চে উঠতে হলো তাকে। জিতেছেন সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল পুরস্কারও কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফির কাছে যার মূল্য অর্থহীন। ভালো খেলেও হারটাকে মেনে নিতে পারছেন না লুকা মদরিচ। লড়াকু ফুটবলে এবারের বিশ্বকাপে দর্শকদের নজর কেড়েছে ক্রোয়েশিয়া দল। নকআউটপর্বে টানা তিন ম্যাচে ১২০ লড়াই শেষে জয় দেখে ক্রোয়াটরা। তিন ম্যাচেই ক্রোয়াটরা জয় দেখে আগে গোল হজম শেষে।

আর ক্রোয়েশিয়া অধিনায়কের লড়াইয়ের গল্পটা ভিন্ন। বালক বয়সে তার স্মৃতিতে রয়েছে যুদ্ধের বিভীষিকা।

মাত্র ৬ বছর বয়সে রিফিউজি জীবন কেটেছে তার। কঠোর সংগ্রাম শেষে নিজস্ব গল্প রচনা করেছেন তিনি। ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে ক্রোয়েশিয়া অধিনায়ক মদরিচ বলেন ‘আমার মনে হয়, আমরা আরো বেশি কিছু পাওয়ার দাবিদার ছিলাম ফাইনালে। কিন্তু এটাই ফুটবল। আমরা যা করেছি তাতে আমরা মাথা উঁচু করে যেতে পারবো। আমরা খুব কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু এটা খুব সহজ ছিল না। আমাদের আরো বেশি প্রাপ্য ছিল কিন্তু সবসময় সেরা দলটি জয় পায় না। এজন্যই ফুটবল পৃথিবীর সেরা খেলা।’ এবারের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় বলেন, ‘আমি গর্ব করার মতো এক অনুভূতি নিয়েই বাড়ি ফিরছি। কিন্তু ফাইনালে হারাটা বেদনাদায়ক। আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছি।

৪-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও আমরা হার মেনে নিইনি। আমরা কাউকে দোষারোপও করছি না।’ ফাইনালে হারলেও বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল ঠিকই জিতে নিয়েছিন মদরিচ। আর রিয়াল মাদ্রিদ তারকা মদরিচ বলেন, ‘অবশ্যই এটা পেয়ে কিছুটা ভালো লাগছে কিন্তু আমি বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি আমরা। এটা আমার কাছে মন্দের ভালোর মতো। আমরা খুবই মর্মাহত।’ টানা ষষ্ঠ আসরে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন চ্যাম্পিয়ন দলের বাইরের কোনো তারকা। সর্বশেষ ১৯৯৪’র আসরে এ পুরস্কার ওঠে শিরোপাজয়ী ব্রাজিলিয়ান তারকা রোমারিওর হাতে। পরের চার আসরে গোল্ডেন বল জেতেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রোনাল্ডো, জার্মান গোলরক্ষক অলিভার কান, ফরাসি প্লে মেকার জিনেদিন জিদান, উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলান ও আর্জেন্টাইন তারকা লিওনেল মেসি।

১৯৯১ সালে লুকা মদরিচের হোমটাউন মদরিচি আক্রমণ করে হানাদার সার্বিয়ান বাহিনী। সার্বিয়ান বাহিনীর আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হন তার দাদা। পুরো মদরিচি শহর আগুন ধরিয়ে দেয় সার্বিয়ানরা। রিফিউজি হিসেবে অন্যত্র আশ্রয় নেয় মদরিচের পুরো পরিবার। এর আগে লুকা মদরিচ বলেন, যুদ্ধের সময় আমরা উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছিলাম। আমার বয়স তখন ৬ বছর। এটা ছিল সত্যিই এক কঠিন সময়।  জাদার শহরের এক হোটেলে বছরের পর বছর কাটিয়েছে আমার পরিবার। আমাদের সংসারে অভাব-অনটন ছিল।

কিন্তু আমি ফুটবলটা প্রচণ্ড ভালোবাসতাম। মুহুর্মুহু বোমা বিস্ফোরণের শব্দ কানে নিয়েই জাদারে এক ফাঁকা গাড়ি পার্কিং এলাকায় ফুটবল অনুশীলন করতেন মদরিচ। এ নিয়ে লুকা মদরিচ বলেন, যুদ্ধ আমাকে আরো শক্ত-পোক্ত করেছে। সময়টা আমার ও আমার পরিবারের জন্য কঠিন ছিল। আমি ওই দুঃস্মৃতি সারাজীবনের জন্য বইয়ে বেড়াতে চাই না তবে আমি তা ভুলে যেতেও চাই না।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।