রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
অর্থমন্ত্রীর আদেশ ভেস্তে গেছে : কাস্টমস ক্যাডারের সেই বিতর্কিত কর্মকর্তা বেলালকে পদোন্নতির প্রক্রিয়া : রাজস্ব ভবনে অসন্তোষ

একুশে বার্তা ডেক্স : অবশেষে সেই বিতর্কিত কমিশনার বেলাল উদ্দিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি-হয়রানি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

‘বিতর্কিত’ কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পাওয়া এ কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়ে যাতে এনবিআরের সদস্য হতে না পারেন- সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন।

ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করে অ্যাসোসিয়েশন সদস্যরা অর্থমন্ত্রী ও এনবিআরের চেয়ারম্যানের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে বেলাল উদ্দিনের অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তের দাবিও জানানো হয়।

বুধবার অ্যাসোসিয়েশনের এক জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক থাকাবস্থায় বেলাল উদ্দিন সিআইসিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার, নানাভাবে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হয়রানি করেছেন।

বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে (এসিআর) বিরূপ মন্তব্য লেখার ভয়ভীতি দেখিয়ে কর্মকর্তাদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করতেন। তার কথা মতো না চলায় আয়কর ক্যাডারে সৎ হিসেবে স্বীকৃত একাধিক কর্মকর্তার এসিআরে বিরূপ মন্তব্য লেখেন তিনি।

বেলাল উদ্দিন পদোন্নতি পেয়ে এনবিআরের সদস্য হচ্ছেন- এমন খবর চাউর হওয়ায় বুধবার সকালে আয়কর ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর আয়কর ক্যাডারের সব ব্যাচের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা এনবিআরে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে আয়কর ক্যাডার সদস্যদের রুমের সামনে তারা অবস্থান নেন।

এরপর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এনবিআরের নিচ তলায় বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে নেতাদের নিয়ে জরুরি সভার আহ্বান করে। ওই সময় ক্যাডার কর্মকর্তারা অ্যাসোসিয়েশনের রুমের সামনে অবস্থান নেন এবং বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উচ্চস্বরে নেতাদের কাছে অনুরোধ জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বেলাল উদ্দিনকে পদোন্নতি না দিতে এনবিআর চেয়ারম্যান ও অর্থমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয়ার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর দ্রুত সভার কার্যবিবরণী প্রস্তুত করে এনবিআর চেয়ারম্যানের দফতরে পাঠানো হয়।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, এ কর্মকর্তা (বেলাল উদ্দিন) তার কর্মজীবনে বিভিন্ন পদে আসীন থাকাবস্থায় অধীনস্ত কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করেছেন।

সর্বশেষ তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কর বিভাগে মেধাবী ও দক্ষ হিসেবে পরিচিত সিআইসির ৮ জন কর্মকর্তার এসিআরে একসঙ্গে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নজিরবিহীন বিরূপ মন্তব্য লেখেন।

এসব বিষয়ে যথাযথ তদন্ত এবং তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত তাকে যাতে এনবিআরের সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া না হয়- সেজন্য এনবিআর চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় বলা হয়, এনবিআর রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এনবিআরের সদস্য পদটি গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ।

এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আয়কর বিভাগে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য, সমালোচিত ও বিতর্কিত একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে পুরো ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হবে।

যা আয়কর বিভাগের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ও রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করবে বলে উল্লেখ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আয়কর ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বেলাল উদ্দিন আয়কর বিভাগের কলঙ্ক।

নিজ ক্যাডারের অধীনস্ত কর্মকর্তাদের তিনি বাসার কর্মচারী মনে করতেন। সিআইসির মহাপরিচালক থাকাবস্থায় অনৈতিক কাজের জন্য ফরমায়েশ দিতেন। তার কথা না শুনলে এসিআরে বিরূপ মন্তব্য লিখতেন।

এভাবে অনেক কর্মকর্তার এসিআর নষ্ট করেছেন তিনি। তার মতো লোক, এনবিআরের মর্যাদাপূর্ণ সদস্য পদে নিয়োগ পেলে পুরো আয়কর ক্যাডারে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়বে। এর প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়ে।

তারা আরও বলেন, সিআইসির ডিজি থাকাবস্থায় বেলাল উদ্দিন কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও নানাভাবে হয়রানি করেছেন। কাউকে না চিনে, শুধু তার আজ্ঞাবহদের কথা শুনে লাল, হলুদ ক্যাটাগরিতে ফেলতেন। এ লাল-হলুদ তালিকার ভিত্তিতে পরে পোস্টিং দেয়া হতো।

বেলাল উদ্দিনের অপকর্মের বিষয়ে সরকারের উচ্চমহলও অবগত আছে। গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর বেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির চিঠিতে অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘আই ওয়ান্ট দিস অফিসার আউট অব এনবিআর।

আই ইন্সট্রাক্টেট সেক্রেটারি (চেয়ারম্যান, এনবিআর) ফর সাম অ্যাকশন হুইচ হি হেজ নট ইয়েট। হি শুড টক টু মি অ্যাবাউট ইট ইমিডিয়েটলি।’

অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ কর্মকর্তাকে এনবিআরের বাইরে দেখতে চাই। আমি তার বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সচিবকে (এনবিআর চেয়ারম্যান) নির্দেশ দিয়েছি, যা এখন ও কার্যকর হয়নি। এ সম্পর্কে অবিলম্বে চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

একের পর এক অভিযোগ ওঠায় অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমান চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বেলাল উদ্দিনকে আইআরডিতে সংযুক্ত করেন। তখন এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তারা। বর্তমানে বেলাল উদ্দিন আপিলাত ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।