শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:১৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
টাইগারদের নাটকীয় জয়

খেলা ডেক্স : এমন ম্যাচে বহু হার দেখেছে বাংলাদেশ। অন্যরকম অভিজ্ঞতা হলো গতরাতে। মোস্তাফিজ ম্যাজিকে পেলো নাটকীয় জয়। মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েসের ব্যাটে লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া মাশরাফি বিন মুর্তজার দল জিতল তিন রানে। দুবাইতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয়ের জন্য শেষ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন কেবল ৮ রানের। প্রথম বলে এলো দুই রান। পরের বলে চড়াও হতে গিয়ে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিলেন আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরিয়ান রশীদ খান। ৪ বলে ৫ রান করে ফিরেন এই আফগান অলরাউন্ডার।

জয়ের জন্য শেষ ৪ বলে আফগানিস্তানের প্রয়োজন তখন ৬ রান। পরের দুই বলে দুই রান আসলে আফগানদের প্রয়োজন দাড়ায় এক বলে ৪ রান। সেখানে স্নায়ু চাপ ধরে রেখে তিন রানের জয় এনে দিলেন মোস্তাফিজ। ফাইনালে উঠার লড়াইয়ে আগামী বুধবার পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে পরিণত হওয়া ওই ম্যাচে জয়ী দল ফাইনাল খেলবে ভারতের সঙ্গে।
আবুধাবিতে উত্থান-পতনের নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২৫০ রানের লক্ষ্য দিতে পারবে কেইবা ভেবেছিল? জবাব দিতে নেমে শুরু থেকে মেপে মেপে পথচলা আফগানরা শেষে এসে হিসাব গরমিল করে ফেলবে, সেটা ভাবাও ছিল কঠিন। বাংলাদেশের ৭ উইকেটে তোলা ২৪৯ রানের জবাবে আফগানদের থামতে হলো ৭ উইকেটে ২৪৬ রানে। টানা দুই ম্যাচে শেষ ওভারে হেরে আফগানদের এশিয়া কাপ থেকে কান্নাভেজা বিদায় নিতে হলো। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতলেও আর লাভ হবে না।

এদিন ম্যাচের পঞ্চম ওভারেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনেদেন মোস্তাফিজ। সপ্তম ওভারে সাকিবের দুর্দাস্ত থ্রোতে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে আফগানিস্তানের। ২৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন মোহাম্মদ শাহজাদ। হাসমতউল্লাহ শহীদীকে নিয়ে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে অস্বস্তিতে রেখেছিলেন আফগান ওপেনার। ৭৩ বলে ১৩তম ফিফটিও পেয়েছেন তিনি। এমন সময়ে মাহমুদউল্লাহকে বল হাতে দেন মাশরাফি। আর চতুর্থ বলেই বাজিমাত করলেন ব্যাট হাতে দারুণ ইনিংস খেলা এই অলরাউন্ডার। শাহজাদকে বোল্ড করলেন মাহমুদউল্লাহ। তার স্পিনে উইকেট ছেড়ে মারতে গিয়েছিলেন আফগান ওপেনার। কিন্তু তার লেগ স্টাম্প ভেঙে দেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। ৮১ বলে ৮ চারে ৫৩ রান করেন শাহজাদ। মোহাম্মদ শাহজাদকে ফেরানোর উল্লাাস বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। হাসমতউল্লাহ শহীদীর সঙ্গে আসগর স্ট্যানিকজাইয়ের ৭৮ রানের জুটি বাংলাদেশেকে অস্বস্থি দিয়েছে। এই জুটি ভেঙেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। স্ট্যানিকজাইকে ৩৯ রানে শর্ট থার্ড ম্যানে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানান মাশরাফি। হুমকি হয়ে ওঠা হাসমতউল্লাহ শহীদীকে ৭১ রানে বোল্ড করেছেন মাশরাফি মুর্তজা। এই উইকেটের মাধ্যতেই ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন টাইগার অধিনাযক। ২৫০ রানের টার্গেটে নেমে ৪৪ ওভারে ৫ উইকেটে আফগানিস্তানের রান ১৯৩। শেষ ছয় ওভারে আফগানিস্তানের জয়ের প্রয়োজন ছিল ৫৭ রান। সেখান থেকে দলকে জয়ের পথ দেখান মোহাম্মদ নবী। নবী ২৮ বলে ৩৮ রান করে সাকিবের বলে যখন আউট হন তখন আফগানদের জয়ের জন্য প্রয়াজন ১০ বলে ১২ রান। শেখ ওভারে আফগানিস্তানের জয়ের প্রয়োজন ছিল আট রান। সেখানে প্রথম বলেই ২ রান দিয়ে বসেন মোস্তাফিজ। পরের চার বলে মোস্তাফিজ যা করলে তা সত্যিই অবিশ্বাস্য।

খুলনায় ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে গিয়েই একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে ডাক পান ইমরুল কায়েস। আর সরাসরি একাদশে নেমে ইমরুল অপরাজিত থাকলেন ৭২ রানে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে গড়লেন বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। এ দুইয়ের ষষ্ঠ উইকেটে ১২৮ রানের জুটির সৌজন্যে আফগানিস্তানকে বাংলাদেশ ছুড়ে দেয় ২৫০ রানের লক্ষ্য। অথচ টস জিতে আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছে বাজে। ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১৬ রানে। আগের দুই ম্যাচে ১৪ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত গতকালও করেছেন ৬। সাকিব আল হাসানের জায়গায় মোহাম্মদ মিঠুনকে পাঠানো হয় তিনে। ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পেলেও স্কোরে উন্নতি হয়নি, মুজিবুর রহমানের বলে এলবি হয়েছেন মাত্র ১ রানে। ১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে যে ধাক্কাটা খেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটি সামাল দেয় লিটন-মুশফিকের তৃতীয় উইকেটে তোলা ৬৩ রানের জুটি। ভালোই এগোচ্ছিল। হঠাৎ ভূতে পেয়ে বসল বাংলাদেশকে! নয়তো কী! ২ উইকেটে ১৮ রান তুলে ফেলার পর বাংলাদেশের ইনিংসে যা ঘটল, তা প্রায় অবিশ্বাস। লিটন দাস আগের বলে চার মেরে পরের বলেই আবার উড়িয়ে মারতে চাইলেন এ সময়ের সেরা লেগ স্পিনার রশিদ খানকে।

রান হয় না এমন একটা বলে রান নিতে চেয়ে শূন্য রানে রান আউট হলে ফিরলেন সাকিব। এভাবে রান নেওয়ার কোনো মানে হয় না। সাকিবের মতো একই কাজ করলেন মুশফিক নিজেই। ১৪ বল আর ৭ রানের মধ্যে বাংলাদেশ হারাল ৩ ব্যাটসম্যানকে। বাংলাদেশের সামনে যখন লড়াইয়ের পুঁজি পাওয়া নিয়ে সংশয়, তখনই ইমরুল-মাহমুদউল্লাহর প্রতিরোধ। ষষ্ঠ উইকেটে এই জুটি ১২৮ রান যোগ করেই বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ২৪৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড। এর আগে ১৯৯৯ সালে ষষ্ঠ উইকেটে আল শাহারিয়ার রোকন ও খালেদ মাসুদ পাইলট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৩ রানের জুটি গড়েছিলেন। মাহমুদউল্লাহ আউট হয়েছেন ৭৪ রান করে। তবে ইমরুল অপরাজিত ৭২ রান করে। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ।

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।