রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ডিজিটাল আইন : ৩২ ধারা নিয়ে তীব্র গণ অসন্তোষ

একুশে বার্তা প্রতিবেদন : ডিজিটাল আইন ৩২ ধারা নিয়ে দেশব্যাপি তীব্র গণ অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেউ কেউ এটাকে কালো আইন বলছেন। সাংবাদিক সমাজও এ আইন নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হবে বলেও সাংবাদিক নেতারা মতামত ব্যক্ত করছেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও সাংবাদিক সমাজের মতো এ আইন নিয়ে সোচ্চার।

মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ জাতীয় সংসদে পাস হলে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না বলে অভিমত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকরা। অনুসন্ধানী সাংবাদিতার জন্য গণমাধ্যমকর্মীরা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। এ আইন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ এর খসড়ার ৩২ ধারা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। কড়া সমালোচনার মুখে সরকার আইসিটি অ্যাক্টের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনটিতে ৫৭ ধারার সব বিধানই রাখা হচ্ছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক বলেছেন, নতুন আইন কার্যকর হলেও ৫৭ ধারার মামলাগুলো চলবে।

আইন সম্পর্কে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, কী কী করলে গুপ্তচরবৃত্তি হবে, আইনের ধারাগুলোয় তা আরও স্পষ্ট করা দরকার। আইন তৈরির আগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার। আর নতুন আইনটি  কার্যকর হওয়ার পর আগে ৫৭ ধারার সব মামলা বাতিল করা উচিত। আইনে সেটিও উল্লেখ থাকা দরকার। পাস হওয়ার আগে এটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে, তাই সাংবাদিকদের এখনই বিচলিত হওয়ার কোনো  কারণ নেই।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন- বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নতুন আইনে অপরাধগুলো সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। তাই এটি স্পষ্ট করা দরকার। আইনটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে কিনা তা-ও দেখতে হবে। আগে ৫৭ ধারাও জনস্বার্থে করা হয়েছিলো, কিন্তু পরে সেটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। নতুন আইন পাস করার আগে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মতামত নিতে হবে। আইনে উল্লেখ করতে হবে এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না। আগের মামলাগুলোও বাতিল করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, অনুমোদিত আইনটি আরও ভয়ঙ্কর। আইসিটি অ্যাক্টের যেসব সমালোচনা ছিলো, বর্তমান আইনটি তার চেয়েও কঠোর করা হয়েছে। আইনে স্পষ্ট করে কিছু বলা নাই। অনেক অস্পষ্টতা আছে। বিরোধী পক্ষকে দমনপীড়ন, নির্যাতন, জুলুম ও অবিচার করতেই এটি করা হচ্ছে। আইনটি পাস হলে দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা বলে কিছু থাকবে না। টিআইবি ও সিপিডির মতো যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিতে ওয়াচ ডগের মতো কাজ করে, তাদের মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে।   কোনো গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র এমন আইন করতে পারে না।

সাইবার সিকিউরিটি ট্রাইব্যুলের প্রসিকিউটরের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে বিচারাধীন ৭৪০টি মামলার মধ্যে ৬০ শতাংশ মামলাই ৫৭ ধারায়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।