শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১০:০১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
দুদক এখন চুনোপুটিতে নেই : ধরছে রাগব বোয়ালদের : অর্ধশত ভিআইপি দুদকে জালে ধরা পড়ছে : তালিকায় সরকার দলীয় ৬, জাপা ৩ ও বিএনপির ১০ নেতা

একুশে বার্তা ডেক্স : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের জালে ভিআইপিরা। চুনোপুঁটিদের নিয়ে ব্যস্ত দুদক এমন আলোচনা-সমালোচনা মধ্যেই সমাজের প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে মাঠে নামছে দুদক। দুদকের তালিকায় রয়েছে আওয়ামী লীগের এমপি, বিএনপি‘র শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, বিরোধী দলের এমপিসহ অন্তত অর্ধশত ভিআইপি। এছাড়াও সাবেক এমপি-মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে কয়েকজন এমপি ও সাবেক মন্ত্রীর সম্পদের তথ্য চেয়েছেন দুদক। আর কয়েকজনকে তলব করেছে কমিশন।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুদক এখন চুনোপঁটি বাদ দিয়ে বাগব বোয়ালদের কাছে পৌছতে চাচ্ছেন। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অনুসন্ধান শুরু করেছে। বিষয়টি এখনো তদন্তধীন। এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দুদক সক্রিয় হওয়া ইতিবাচক। তবে দুদকে দল নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে অযথা হরয়ানি না হয় সেই বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রভাবশীলীদের অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু ইতিবাচক উদ্যোগ। দুদক সক্রিয় হলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে। নি:সন্দেহ এটা ভাল উদ্যোগ। তবে আমি বলব দুদক যাতে পক্ষপাতহীন ভাবে কাজ করে। নিরপেক্ষভাবে কাজ করলে দুদকের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা দুর হবে। দীর্ঘদিন যাবত তাদের (দুদকের) কাজের প্রতি সাধারণ জনগনের আস্থার অভার রয়েছে। কমিশনকে এটা দুর করতে হবে। তিনি আরো বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ক্ষমতাসীনদের কাছাকাছি যেতে পারেনি। এখনো আমরা দেখতে পানি নাই। এখন মাত্র প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দেখা যাক কতটুকু অব্যাহত রাখে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ  বলেন, আমরা (দুদক) বিদ্যা বৃদ্ধি ও অভিজ্ঞতা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অভিযোগ আসলে অনুসন্ধান চলতেও পারে। এটা তো নতুন কিছু না। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচনের বছর বলতে কিছু নেই। আমাদের কাছে সব বছর সমান। সব দিন সমান। কোন শক্তি আমাদের কাজের বাধাগ্রস্থ করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বেসিক ব্যাংকের আসামী জামিন শুনানিতে উচ্চ আদালত দুদকের কাজের গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। একইসঙ্গে নিরপেক্ষভাবে কাজের ওপর তাগিদ দেন আদালত। দুদককে পিক এন্ড চুজ না করার পরামর্শ দেন। এরপর দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীয় ও দুনীর্তি প্রতিরোধ সপ্তাহে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূন ব্যক্তিরাও দুদকে আরো সক্রিয় দেখতে চান এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। এরপর চেয়ার‌্যমান ঘোষণা করেন অর্থ পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনবে। এরপর শুরু হয় ভিআইপিদের নিয়ে নতুনভাবে তালিকা করে অবৈধ সম্পদ অসুসন্ধান করা। এরপর কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশন নিজস্ব গোয়েন্দা দ্বারা গোপনে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করছে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা, অর্থ পাচারকারী, চোরাচালানি, মাদক ব্যবসায়ী, কোচিং সেন্টার মালিকসহ অর্ধশত  প্রভাবশালী এখন দুদকের নজরদারিতে। এছাড়াও যে কোন ধরনের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে ভিআইপিদের সম্পর্কে দুদক তথ্য নিচ্ছে রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন দফতর থেকে। এছাড়া সাবেক ও বর্তমান এমপিদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা থেকেও তথ্য-উপাত্ত নেয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ৬ এমপিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান: ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান ও শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি এ বি এম মোজাম্মেল হক, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এছাড়াও বৃহত্তর বরিশালের অঞ্চলের ২ জন ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় ২জন এমপি‘র বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করছে দুদক।
সূত্রে জানা যায়, হুইপ আতিউর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা-কাবিটার গম, টাকা আত্মসাৎ, স্কুল-কলেজ এমপিও করিয়ে ঘুষ নেয়া এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। গ্রামে ৩০ একর জমিজুড়ে তার নিজের নামে বাগানবাড়ি, জমি রয়েছে। রয়েছে ১০-১২টি স্কুল-কলেজ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। দুদকের কাছে তথ্য রয়েছে, তার রাজধানীর বসুন্ধরা, বনশ্রীতে দুটি প্লট, ধানমন্ডি ও গুলশানে দুটি ফ্ল্যাট, মেয়াদি আমানত, ব্যাংকে জমা টাকা, গাড়িসহ নামে-বেনামে প্রচুর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতি করে ব্যাংক গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে কারও বিরুদ্ধে। এমপি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য অফিসের ঠিকাদারি কাজের দায়িত্ব নিয়ে নামমাত্র কাজ করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র ৩ এমপি বিরুদ্ধে অনুসন্ধান: ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের এমপি জাতীয় পার্টির সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ মুক্তি, মহিলা আসনে জাতীয় পার্টির এমপি মেহজাবিন মোর্শেদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। নরসিংদী-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি কামরুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কামরুল আশরাফ খানের বিরুদ্ধে সরকারের আমদানি করা সার পরিবহনের সময় তা সরকারি গুদামে পৌঁছে না দিয়ে তিনি নিজের গুদামে মজুদ করেছেন। পরে সময় বুঝে ফসলের মৌসুমে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন। দশ বছর আগে পরিবহন করা সার এখন পর্যন্ত তিনি সরকারি গুদামে পৌঁছাননি। দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অর্জিত অবৈধ শত শত কোটি টাকায় ঢাকার গুলশান ও বনানীতে তিনটি বাড়ি, নরসিংদীর নিজ গ্রামে তিনশ বিঘা ধানি জমি ক্রয়, কালিয়াকৈরে দুইশ› বিঘা জমিতে বাগানবাড়ি নির্মাণ করেছেন এই এমপি।
বিএনপি ১০ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান: বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ব্যাংক লেনদেন নিয়ে তদন্তে শুরু করে দুদক। গত ২ এপ্রিল বিএনপির শীর্ষ ১০ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান দল গঠন করে। তাদের ব্যাংক লেনদেনের হিসাব চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে তারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খান। ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও এম মোরশেদ খান। যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল। একই অভিযোগ আসায় মোরশেদ খানের ছেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল মোরশেদ খান এবং ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে। এদিকে লালমনিরহাটের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলু এবং নাটোরের সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস দুলুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এছাড়া ব্যবসায়ী হা-মীম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ ও ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যাংকটির আরেকজন পরিচালক মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর বিষয়েও তদন্ত চলছে। এছাড়াও দশম সংসদ নির্বাচনের পরপর দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছে সরকারের সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।