শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ঈদুল আযহা : প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার কোরবানির পশু বেচা-কেনা

নিউজ ডেক্স : ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে এবার  প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার  কোরবানির পশু  বেচাকেনা হয়েছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সূত্রের হিসেবে জানা গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ও সহকারি পরিচালক ড. এবি এম খালেকুজ্জামান বলেন, কোরবানিতে এবার ১ কোটি ১০ লাখের বেশি গবাদি পশু জবাই হতে পারে। আমাদের হিসেবে এবার মোট ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৬৩টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। এছাড়া কোরবানি দেয় না এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। তারা ঈদুল আযহা উপলক্ষে মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকেও গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার মাংস কিনে থাকেন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, এবার প্রতিটি গরু ১ লাখ থেকে ৩৭ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গড়ে প্রতিটি গরু মহিষ ১ লাখ টাকা এবং প্রতিটি ছাগল ভেড়া ১৫ হাজারে বিক্রি হয়েছে বলে ধরা যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে এবছরের মোট কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে রয়েছে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু। বর্তমানের বাজার অনুযায়ী গরু প্রতি গড় মূল্য ১ লাখ টাকা দাম ধরলে ৪৬ লাখ গরু মহিষের দাম দাঁড়ায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা এবং ৭২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৩টি খাসি-ভেড়ার দাম গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে এর দাম দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮০৯ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে এবার পশু কোরবানি দেয়া বাবদ মোট ৫৬ হাজার ৮০৯ হাজার ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতে পারে। সঠিক হিসেব না থাকলেও কোরবানি দেয় না এমন মানুষ বাজার থেকে যে গরু ছাগলের মাংস কেনে তার দামও কয়েক হাজার কোটি টাকা। কোরবানির পশু সরবরাহ, কেনাবেচার পরিসংখ্যান পর্যালোচনার হিসেবে চাঁদা, টোল, বখশিশ, চোরাকারবার, ফড়িয়া, দালাল, পশুর হাট ইজারা, চাঁদিয়া, বাঁশ-খুঁটির ব্যবসা, পশুর খাবার, পশু কোরবানি ও বানানো অর্থাৎ পশুর চামড়া ছেলা কাটা এমনকি পশুর সাজগোজ বাবদও কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতবদল হয়ে থাকে। অর্থনীতিতে ফর্মাল-ইনফর্মাল ওয়েতে আর্থিক লেনদেন বা মুদ্রা সরবরাহ প্রচুর বেড়ে যায়।
এনবিআর এর সাবেক চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট অ্যান্ড রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের অর্থনীতিতে কোরবানি বিষয়ক রচনায় পাঁচটি পয়েন্ট উল্লেখ করে জানান, কোরবানির রয়েছে বহুমুখী অর্থনৈতিক তাৎপর্য। হজ, কোরবানির পশু, পশুর চামড়াসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় জাতীয় অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবদান রেখে চলেছে।
তিনি জানান, চামড়া শিল্পের বার্ষিক সংগ্রহ ও বেচাকেনার অর্ধেকের বেশি জোগান আসে শুধু কোরবানির ঈদে। কোরবানির পশুর চামড়া রপ্তানি বাণিজ্যে, পাদুকা শিল্পে, পোশাক, হস্তশিল্পে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিক্রয় ও ব্যবহার উপলক্ষে উল্লেখযোগ্য মানুষের ও প্রতিষ্ঠানের কর্মযোজনা সৃষ্টি হয়। চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ সঙ্গে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা জড়িত। এর বাইরে আছে দা, বটি, পশুর হাড়গোড়, মাংসের মশলাসহ নানা আসবাব ও পণ্যের জমজমাট ব্যবসা। তার মধ্যে শুধু মশলার ব্যবসা হয় তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার। পশুর হাড়গোড়, শিং ও অন্যান্য অংশের ব্যবসায় হাতবদল হয় অন্তত শতকোটি টাকা।
এসব লেনদেনে দেশের ব্যাংকিং খাতে ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়। এসবের সঙ্গে যোগ হয় ঈদ উপলক্ষে পাঠানো রেমিট্যান্স। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সারা বছরের তুলনায় আশাব্যঞ্জক হারে বেড়ে যায়। অন্যদিকে ঈদের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হয় নানা কর্মসংস্থান। ফলে দেখা যায়, ঈদকে ঘিরে দোকানে দোকানে নতুন কর্মচারী নিয়োগ হয়।
ঈদকেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবস্থায় ঘটে এলাহি কান্ড। শহরের মানুষ আপনজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য গ্রামে ছোটে। এক মাস আগে থেকে ট্রেন, বাস, লঞ্চের টিকিট বিক্রির তোড়জোড় দেখে বোঝা যায় এর প্রসার। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ দামে ফর্মাল টিকিট আর ইনফর্মাল টাউট, দালাল ও বিবিধ উপায়ে টিকিট বিক্রির সার্বিক ব্যবস্থায় জড়িত থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পরিবহন খাতে ২ হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা বা লেনদেন হয়ে থাকে। এছাড়া অন্যন্য অনেক খাতে হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা লেনদেন। সূত্র : আমাদের অর্থনীতি

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।