বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
অনন্য এক মেধাবী আবরার : জীবনে শুধু ফাস্ট আর ফাস্ট : রাশিয়া ভার্সিটিতেও ভর্তির চান্স পায় আবরার

ডেক্স রিপোর্ট : অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের ফেসবুকের ইন্ট্রোতে লেখা এ বাণী। সত্যিই আবরারের ঠিকানা আজ মহাকাশের অন্তেই। কিন্তু বড় অকালেই তাকে চলে যেতে হলো। না! তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো। কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির বলি হলেন মেধাবী আবরার। একই সঙ্গে ভেঙে চুরমার হলো একটি পরিবারের স্বপ্ন। আশা।

আবরারের বায়োডাটায় জীবনে দ্বিতীয় হওয়ার রেকর্ড নেই। এমন মেধাবী আবরারকে নিয়ে গর্ব করতেন কুষ্টিয়ায় তার গ্রামের মানুষ। প্রশ্ন হলো- আবরার কী শুধুই মেধাবী? আবরারের বায়োডাটা তো জানান দেয়, তিনি মেধাবীদের মেধাবী। এক হীরের টুকরো আবরারের না জানি কত স্বপ্ন ছিল। আশা ছিল। তাকে ঘিরে পরিবারেরও হাজারো স্বপ্ন ছিল। আবরারের জীবনে সবকিছুতেই ফার্স্ট আর ফার্স্ট। তাইতো মেডিকেলে ভর্তির চান্স পেয়ে আবরার তার ফেসবুকে লিখেছেন, মেডিকেলের  প্রফের রেজাল্ট শিটটা অর্ধউলঙ্গ টাইপের। এটলিস্ট মার্কসের পারসেন্টেজ থাকা উচিত ছিল। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ফার্স্ট হওয়া আবরারের ক্ষেত্রে এটা লেখাই স্বাভাবিক। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে ক্লাসে দ্বিতীয় হওয়ার নজির নেই তার। প্রথম স্থান তার ছিল অবধারিত। কুষ্টিয়ার এমন হীরের টুকরোর করুণ মৃত্যু নিয়ে সেখানে বইছে শোকের মাতম। দেশজুড়ে চলছে ধিক্কার আর ক্ষোভ। আবরারের ছাত্র জীবনের রেজাল্ট চমকে ওঠার মতো। এমন সমৃদ্ধ রেজাল্ট ক’জন ছাত্রের হতে পারে? অষ্টম ও দশম শ্রেণিতে বিশেষ বৃত্তি পাওয়া আবরার ২০১৫ সালে কুষ্টিয়া জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সবক’টি বিষয়ে এ প্লাস মার্কস পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পান। এইচএসসিতে ভর্তি হন রাজধানীর সেরা নটর ডেম কলেজে। ২০১৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষাতেও সবক’টি বিষয়ে এ প্লাস মার্কস পেয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর আসে ভার্সিটিতে ভর্তির পালা। আবার ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়ও সুযোগ পান। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটেও ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় তার নাম ছিল প্রথম সারিতে। শুধু তাই নয়, রাশিয়ার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডাক আসে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু আবরার ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে। আবরার বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নং কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল ইলেকট্রিক্যাল প্রকৌশলী হওয়ার। ইতিমধ্যে অনেকটা পথ পাড়িও দিয়েছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের ক’জন নেতাকর্মীর কালো থাবায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে অকালে। আবরারের মৃতদেহের পুরোটাই যেন লাল দাগে ভরা। রক্ত জমাট বাঁধার চিহ্ন। এমন দৃশ্য দেখে যে কেউ শিহরে ওঠার কথা। কিন্তু শিহরে উঠেনি নরপশুরা। ওদের হিংস্র থাবায় অঙ্কুরেই বিনষ্ট হলো একটি স্বপ্ন। মৃত্যু হলো মা-বাবার আশা, চাওয়া। মাত্র একদিন আগে শনিবার আবরার কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। সামনে সেমিস্টার পরীক্ষা। তাই ছুটি না কাটিয়ে ফিরে এসেছিলেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। বিকালে বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন ঢাকায় পৌঁছানোর খবর। এরপর আর পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়নি। হবে কীভাবে? রাতেই তো হায়েনার দল আবরারের যমদূত হয়ে আসে। একটুও বুক কাঁপেনি তাদের। আবরারকে লাশ বানিয়ে ওরা গিয়েছে পার্টি করতে। একসঙ্গে সুখের খাবার খেয়েছে। আবরারের অপরাধ কি? সে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। সেখানে তার স্বাধীন মতামত তুলে ধরেছে। এ তুচ্ছ কারণে তাকে মেরেই ফেলতে হলো? এমন মেধাবী আবরারদের দুর্ভাগ্য ওরা এদেশে জন্মেছে। ওদের দুর্ভাগ্য সর্বনাশা ছাত্র রাজনীতি। তাই তো আবরারের মা শোকের মাতম নিয়ে বলছিলেন, ওকে আমি রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দেইনি। সেখানে পারমাণবিক বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করতে হতো। শুনেছি পারমাণবিক নিয়ে কাজ করলে ক্যানসার হয়। কিন্তু আমি কি জানতাম দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটেই রয়েছে মরণঘাতী ছাত্র রাজনীতি নামের ক্যানসার। যে ক্যানসার আমার স্বপ্নকে কেড়ে নিয়েছে। আমার বুক শূন্য করে দিয়েছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।