বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
৭৪ সালের সেই বাসন্তীর বাড়িতে শেখ হাসিনা

নঈম নিজাম :   সময়টা ৯১ সালের শেষ দিকের। রংপুর সফরে গেলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর সঙ্গে আমরা সবাই উঠলাম সার্কিট হাউজে। ভোরে নাস্তা সেরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বের হতেন, ফিরতেন সন্ধ্যায়। সারাদিন মঙ্গাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতেন। মিশে যেতেন মানুষের মাঝে। রংপুরের পুত্রবধূ হিসেবে বক্তৃতা করে মানুষকে নাড়া দিতেন। দুপুরে খেতেনও না। তবে আমাদের গাড়িতে পাঠাতেন কলা, রুটি। কয়েকদিন ছিলেন তিনি রংপুরে। একদিন সন্ধ্যার পর আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। এ সময় মৃণাল কান্তিদা ছুটে আসলেন। বললেন, আপা ডাকছে আপনাদের। আমরা গেলাম। তিনি বললেন, কাল সবাইকে নিয়ে যাবো পুরাতন ইতিহাস জানাতে। সেই ইতিহাস ৭৪ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের। ভোরে উঠতে হবে সবাইকে। তিনি আমাদের জানালেন, বাসন্তীর বাড়িতে যাবেন। তারপর হাসতে হাসতে বললেন, এক্সক্লুসিভ আগেই ফাঁস করে দিলাম। তৈরি থেকো। তারপর অনেক বিষয় নিয়ে গল্প আড্ডা দিলেন।
পরদিন সকালে নাস্তা সেরে বের হলাম সবাই কুড়িগ্রামের চিলমারীর পথে। চিলমারী সদর থেকে মাঝিপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে বাসন্তীর বাস। ১৯৭৪ সালে বাসন্তীর জালপরা ছবি প্রকাশিত হয়েছিলো দৈনিক ইত্তেফাকে। পরে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ছবিটি। বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের মূর্তপ্রতীক হিসেবে এই ছবি বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিব্রত করে। মাঝিপাড়া বাসন্তীর বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যায় না। কিছুদূর হাঁটতে হবে। শেখ হাসিনা গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। আমরা পেছনে পেছনে। বাসন্তীর ভাঙা বাড়িতে পৌঁছলাম। ৭৪ সালে বাসন্তির ভাঙাঘর আগের মতোই আছে। তার পরনের শাড়িটি ছেঁড়া। কোনো পরিবর্তন নেই। শেখ হাসিনা বললেন, দেখো সবাই বাসন্তীকে নিয়ে বক্তৃতাই দিয়ে গেলো। রাজনীতি করলো। কিন্তু তার ভাগ্যের পরিবর্তন কেউ করলো না। তিনি নগদ ৩০ হাজার টাকা বাসন্তীকে দেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আনসার সাহেব, তিনি সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন, দলীয় সভানেত্রীকে জানালেন, সেই সময় তিনি এলাকায় লঙরখানা খুলেছিলেন। এই সময় ২ জন সাংবাদিক আসলেন ঢাকা থেকে। তারা বললেন, বন্যার খবর সংগ্রহ করছেন। তারাই বাসন্তীকে টাকা দিয়ে জালপরা ছবিটি তোলেন পাটক্ষেতে শাক তোলার সময়।
বাসন্তীকে কাছ থেকে দেখলাম। কথা বলতে এগিয়ে গেলাম আমি। পাশে থাকা মোনাজাতউদ্দিন বললেন, ও কথা বলতে পারে না। প্রতিবন্ধী। ৭৪ সালে ইত্তেফাকের রিপোর্টার শফিকুল কবীর ও ফটোগ্রাফার আফতার আহমেদ যান চিলমারীতে। আফতাব আহমেদের ছবি আর শফিকুল কবীরের লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো ইত্তেফাকে। চিলমারীর নেতারা শেখ হাসিনাকে বলেন, তখন একটি সাধারণ কাপড়ের চেয়ে জালের দাম বেশি ছিলো। ছবিটি তোলা হয় পরিকল্পিতভাবে। শেখ হাসিনা আমাদের বললেন, বাসন্তী ষড়যন্ত্র আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর অংশ ছিলো। আর কিছু নয়। বিশ্ববাসীর কাছে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে তোলা ছবি নিয়েই হয়েছে সব রাজনীতি। এই কারণে পরের কোনো সরকার বাসন্তীর জন্য কিছু করেনি। আমাকেই করতে হচ্ছে। চিলামারী থেকে রংপুর ফিরে খবরটি ঢাকা পাঠাই। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ঘর করে দিয়েছিলেন বাসন্তীকে। ফেসবুক থেকে

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।