সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
আবরার হত্যার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী : ছোট ভাইয়ে বুকফাটা আর্তনাদ , এক বছরেও থামেনি মার চোখের পানি, বাবা আদালতে ঘুরছে রাতদিন

ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ ৭ অক্টোবর। এ উপলক্ষে ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে উঠে এসেছে আবারের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ, মা ও বাবার দিনকাল।

স্ট্যাটাসটি এখানে  হুবহু তুলে ধরা হলো-

২০১৯ এর ৭ অক্টোবর রাত ২:৫০-৩:০০টার মধ্যেই ছাত্রলীগের কয়েকজনের নির্যাতনের তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি টেনে যাত্রা করে অনন্ত মহাকালে…
বিচার শুরু হয়েছে। হবে ।যদিও আসামী পক্ষ থেকে ১বছর পর পুনরায় তাকে শিবির প্রমাণের পূর্ণচেষ্টা চলছে।
মাত্র কিছুদিনে কত পরিবর্তন! আপনাদের কী মনে আছে দিনটা?

সেদিন সকালে ৬টায় যখন ভাইয়ার এই খবর দেখি জানিনা কিভাবে সহ্য করেছিলাম। শুধু বলেছিলাম কিভাবে সম্ভব! হয়তো ভুল পড়েছি। ৩বার পড়েছিলাম। আম্মু একাই বুঝে গেছিলো। আব্বু হঠাৎ কেঁদে উঠে বলে,”হায় আল্লাহ কি হলো আমার ছেলের!” যখন শরীরের সর্বত্র আঘাতে কালো হওয়া শরীরটা দেখি, শুধুই ভাবছিলাম আম্মু না থাকলে যেই হাতে মাথা দিয়ে ঘুমাইতাম, যেই হাত জড়িয়ে ধরতো, যে পায়ের উপর ভর দিয়ে হাটতো ঐ পশুরা কি অবস্থা করেছে সেই হাত-পায়ের।সুযোগ হয়নি নিজ চোখে সে দেহ দেখার। পোস্টমর্টেম যখন চলছিল, ভাবছিলাম ঐভাবে ওকে কেটে চিরে ফেলবে! কিছু করার ছিলো না। ১৭বছর বয়সে কতজনকে তার ৪ বছরের বড়ভাইকে নিজ হাতে কবরে নামাতে হয়েছে? শুধু একটা জিনিসই অনুভব করেছিলাম, পুরো শরীরই গলে গেছে। এরপরও বহু ঘটনা হয়েছে। পুরো দেশ দেখেছে।

আম্মু এখন ঘুমানোর আগে নিয়মিত ভাইয়ার বিভিন্ন ভিডিও দেখে। মাঝেমাঝেই মাঝরাতে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ পাই। নিষেধ করি অনেক এসব দেখোনা। উত্তরে বলে,” তুই কী চাস আমি ওকে ভুলে যাই? আমি এগুলা একটু দেখা ছাড়া কী করবো বল?” আব্বুকে এখন বারবার ঢাকাতে যেতে হয় মামলার জন্য। বেশকিছুদিন আগে আব্বুকে একবার বুয়েটে যেতে বলা হয়। সে বলে,” ওখানে যেতে যে কত কষ্ট হয় বুঝনা। সব ছেলেরা ঘুরেবেড়ায় খালি আমার ছেলেই নাই।” গত ৬মাস বাড়িতে বসে।ভাইয়াও তো আমাদের সাথেই থাকতো। এত দীর্ঘসময় গত ৬বছরেও থাকেনি।কিন্তু তার পরিবর্তে শুধু আম্মুকে কাঁদতেই দেখতে হচ্ছে ওর শুন্যতার জন্য।

আম্মুর মুখে ওকে নিয়ে কত কথা শুনি। আর বলতে বলতে বলে,”আমার ছেলে আর নাই। আর দেখা পাবো না। এ কীভাবে সহ্য করে আমি বেঁচে আছি! আমি কেমন মা! কবে যে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো!” ১বছরে এমন কোনোদিন দেখলাম না যেদিন তার চোখে পানি ছিলো না। আর আব্বু? সে এখন আদালতে ঘুরছে সকাল থেকে রাত। হয়তো বাকি জীবন এভাবেই ঘুরতে হবে।আসামীদের আইনজীবীরা যেভাবে মানসিকভাবে আঘাত করছে আব্বুকে দূর্বল করতে জানিনা কি অবস্থা তার।

এখন আর কেউ একটু পর পর জিজ্ঞেস করে না এটা জানিস? ওটা শুনছিস? আগের মতো কোনো কথা নিয়ে হাসাহাসিও আর হবেনা। এতদিন পর্যন্ত আমার পড়ালেখায় সবচেয়ে বড় সহায়ক ছিল ভাইয়া।কোনো কিছু না পারলে ওকে সাথে সাথে জিজ্ঞেস করতাম।ও না বুঝাইয়ে থামতো না। কিন্তু এখন শুধু একবার মনে করি যদি ভাইয়া থাকতো!এখন বাসায় থাকলে হয়তো হাজারবার বলতো খাতা আন ম্যাথ করতে দি, বলতো ঐটা কী? কিংবা বাইরে যাওয়া হয়না আর তো বলেনা কেউ চল ঘুরে আসি।ঐ একটা নতুন দোকান হইছে যাই চল।

আমার দাদা ৯০বছর বয়সেও এখনো নিয়মিত জিজ্ঞেস করে “ওদের শাস্তি হবে রে? আমার ভাইকে ঐভাবে পিটায়ে মেরে কি পাইলো ওরা? আম্মুকে বলে তুমি ভয় পেও না আমি প্রতিদিন ওর কবরে যাই।”

বাকি জীবন এভাবেই হাজারো অভাব নিয়ে কাটাতে হবে আব্বু-আম্মুকে। জানিনা তারা কত কষ্ট চেপে কাটাচ্ছে এই দিন। বাবা-মা’র সামনে ছেলের কবর, ছেলের খুনিরা। আচ্ছা ঐ খুনিদের বাবা-মাগুলো কী দেখেনি কিভাবে একটা সুস্থ ছেলে হাটতে হাটতে গেলো আর লাশ হয়ে ফিরলো তাদের জন্ম দেয়া পশুগুলোর জন্য? সবাই ৫-৬ তারিখেই হলে ফিরছিলো। ভাইয়াও তো তাই গেছিলো।এতজনের মধ্যে শুধু ঐ লাশ হয়ে কেন ফিরলো! আমাদের কি এমন দোষ ছিলো যার জন্য এতবড় শাস্তি আমাদের পরিবারের? মাঝে মাঝে ভয় হয় বিচার না হলে কী নিজেকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবো! অন্তত আমার কিছু হলে তো ভাইয়া কোনোদিনই ওদের বাঁচতে দিতোনা। আমরা ওর জন্য কতদূর কী পারবো জানিনা ।

এখন পর্যন্ত অনেকেই আমাদের পাশে থেকেছেন। সাহায্য করছেন। তাদের সকলের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আপনাদের অনেকের সহযোগিতায় ও সাপোর্টেই এই শোক সহ্য করা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের কাছে একটাই চাওয়া আবরার আপনাদের সবার ভাই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরাই জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

আমার ভাইয়ার প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকীতে সবাই দোয়া করবেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন ওকে শহীদ হিসেবে কবুল করে।

 

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।