সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়- শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে কোনোভাবেই বিভ্রান্তির পথে না গিয়ে পাঠে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তোমাদের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে এখন থেকেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কর্মদক্ষতারও পরিবর্তন ঘটবে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এখন থেকে তৈরি হতে হবে। গত ৫ জানুয়ারি/২২ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে রাজধানীর খামারবাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান এমপি বক্তৃতা করেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ’৭৫-এর ১৫ই আগস্টের সকল শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মাতৃভূমি নামে একটি পাঠাগারও উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের জন্য কাজ করাই ছাত্রলীগের মূল দায়িত্ব। এটাই রাজনৈতিক নেতাদের কাজ এবং তা ছাত্রলীগকে মনে রাখতে হবে। জাতির পিতার বলে যাওয়া কথা ‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার’ ছাত্রলীগকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, কাজেই আমাদের ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে মনে রাখতে হবে তারা কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। নিজেদের এসবের ঊর্ধ্বে রেখে দেশ যেন শান্তির পথে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি এবং প্রগতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এগুতে হবে। কম্পিউটার শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সকলের হাতে হাতে মোবাইলফোন পৌঁছে দেয়া-আমরা সবই করে দিয়েছি। ২০০৮ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির ব্যবহার পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। কাজেই মানুষকে আর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। মানুষের দৃষ্টি খুলে গেছে। কেননা, হাতের মুঠোয় পৃথিবী এসে গেছে। বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি কক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। প্রযুক্তির পথ ধরে এগিয়ে চলাটাই সরকারের লক্ষ্য এবং সে পথ তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাজেই প্রগতির পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে। নীতি এবং আদর্শ নিয়ে চললে সকল বাধা অতিক্রম করা যায় তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই একটি ঘোষণা সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমূল বদলে দিয়েছে। এই অর্জনকে তিনি ধরে রাখার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগসহ আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সকলকেই সজাগ থাকতে হবে, যাতে আবার কোনো হায়েনার দল এসে এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া যাবে না। ছাত্রলীগকে বলি তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবা একজন আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবা কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না। নিজেদের শক্ত করে সততার পথে এগিয়ে যাবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করবে এবং জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। আর সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে। জন্মলগ্ন থেকেই ছাত্রলীগ এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের সকল সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত। জাতির পিতা যখনই যে কাজ করেছেন সে কাজে ছাত্রলীগকে আগে মাঠে নামিয়েছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জয় বাংলা স্লোগান মাঠে নিয়ে গেছে ছাত্রলীগ এমনকি জাতীয় পতাকার ডিজাইন করে ছাত্রলীগেরই হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল, আর যখনই জাতির পিতা কারাগারে বন্দি হতেন ছাত্রলীগের দায়িত্ব তার মা (বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা) নিতেন। গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি এড়িয়ে অত্যন্ত সূচারুরূপে তিনি জাতির পিতার নির্দেশনা ছাত্রলীগের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিতেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ’৬৬ সাল থেকে ছাত্রলীগ সংগঠন তৈরির জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  ক্যাম্পেইন শুরু করেন উল্লেখ করে  তিনি বলেন, ’৬৬ সালে তৎকালীন ইডেন ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ) নির্বাচিত ছাত্রলীগের ভিপি ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, যে মহান নেতার ডাকে বাংলাদেশের জনগণ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, তাকে যখন নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হলো তখন সবাই কেন থমকে গেল- সে একটা বিরাট প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব তিনি খুঁজে পাননি। তবে, হয়তো একদিন পাবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট ঘাতকের বুলেট শুধু জাতির পিতাকেই কেড়ে নেয়নি এই স্বাধীনতার চেতনা এবং আদর্শকেও বুলেট বিদ্ধ করে, ধ্বংস করে দেয়। জাতির পিতার দিয়ে যাওয়া সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়েছিল। মাত্র সাড়ে ৩ বছরে জাতির পিতা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে যে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান তা স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তি মেনে নিতে পারেনি বলেই পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে নিজেদের জিঘাংসা চরিতার্থ করতেই তাকে সপরিবারে হত্যা করে। সরকার প্রধান বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পর মূল দল এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং ছাত্রলীগ সব সময় সোচ্চার ছিল। কাজেই ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রত্যেক লোভ লালসার ঊর্ধ্বে উঠে নিজেদেরকে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর জাতির পিতার আদর্শটা যদি একবার ধারণ করা যায় তাহলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়াটা কঠিন কাজ নয়। তিনি এজন্য ছাত্রলীগ সহ সাবেক ছাত্রনেতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকেও জাতির পিতার লিখে যাওয়া ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং তার সম্পাদিত পাকিস্তানি গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে রচিত- ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন, বাংলাদেশ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ সিরিজের বইগুলো পড়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, যদি দেশপ্রেম না থাকে, জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে শুধু ক্ষমতায় বসে ক্ষমতাকে উপভোগ করা যায়। দেশের উন্নতি করা যায় না। ’৭৫-এর পর হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে যারা এদেশের ক্ষমতা দখল করেছিল তারা বিলাসিতায় গা ভাসিয়েছে। নিজেদের সুবিধার জন্য সুবিধাভোগী একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করলেও মানুষ যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে গেছে। ’৮১ সালে দেশে ফেরার পর জনগণের জন্য কিছু করার প্রত্যয় নিয়েই তার পথচলা। ক্ষমতার লোভে যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো প্রচেষ্টা তার কখনই ছিল না, বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে তাই প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এই শিক্ষা সেই শিক্ষা না, যে শিক্ষা কোনোমতে খালি পয়সা বানানোর শিক্ষা দেয়। শিক্ষাটা অন্তর থেকে অনুধাবন করেই শিখতে হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ছাত্রলীগের মূলমন্ত্রের অপর অংশ ‘শান্তি’ তুলে ধরে জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি- ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া শিক্ষাই আওয়ামী লীগ সরকার মেনে চলছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।