মঙ্গলবার, ১৮ Jun ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সেমসু দুর্নীতির মহিরূহ , বিভিন্ন কেনাকাটায় থামছে না অনিয়ম, নাটেরগুরু কে এই করিম মোল্লা : দুর্নীতি : ১৬০ ডলারের ট্রলি কিনল ৩৭০ ডলারে: সরকারের ক্ষতি হবে ৫ কোটি টাকা : ২ কোটি টাকার ফুয়েল ট্যাংক কেনার এস্টিমেট করে ১২ কোটি টাকায়!

নিউজ ডেক্স : সিএএবির সেমসু দুর্নীতির মহিরূহ, বিভিন্ন কেনাকাটায় থামছে না অনিয়ম-দুর্নীতি। এবার ১৬০ ডলারের ট্রলি কিনল ৩৭০ ডলার। আরেকটি ২ কোটি টাকার ফুয়ের ট্যাংক  কেনার এস্টিমেট করে ১২ কোটি টাকায়, এটা করতে পারলে ১০ কোটি টাকা লুটপাট হতো। কিন্ত বিধি বাম, দুর্নীতির তথ্য ফাস হওয়ায় তা আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদাররা জানান, এ সব অনিয়ম- দুর্নীতির নাটের গুরু ডিডি করিম মোল্লা, দুদক তাকে কয়েকবার তলব করলেও তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারেনি। এই করিম মোল্লা এতোই ক্ষমতাধর যে দীর্ঘদিন যাবত সেমসুতে বসে আছেন, তাকে সরায় এমন সাধ্য কার? তাকে আবার একটি তদন্ত কমিটির সেকেন্ডম্যান করা হয়েছে। তিনি হজে আছেন্ যার বিরুদ্ধে তদন্ত করবেন তিনি নাকি তার আত্মীয়।

দেশের চারটি বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য এক হাজার ‘হেভি লাগেজ ট্রলি’ কেনায় বড় ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ৭ কোটি ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় এসব ট্রলি কেনার জন্য রে ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়। এতে চীনের তৈরি একটি ট্রলির দাম ধরা হয় ৩৭০ মার্কিন ডলার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ যেন আরেক ‘বালিশকাণ্ড’! কারণ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রলির দাম গড়ে ১৬০ ডলার। এমনকি জার্মানির শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের ট্রলির দামও ২১০ ডলার।

বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোরস ইউনিট (সেমসু) দ্বিগুণেরও বেশি দামে ট্রলি কেনায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। সংক্ষুব্ধ এক ঠিকাদার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। এ কেনাকাটায় সরকারের প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এদিকে অভিযোগ উঠেছে রে ইন্টারন্যাশনাল এসব ট্রলির চালান আনার ক্ষেত্রে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে কম দাম দেখিয়েছে। ইনভয়েসে দাম দেখানো হয় মাত্র ৪৫ ডলার।

শুধু ট্রলি নয়, সেমসুর বিভিন্ন কেনাকাটায় একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি ঘটছে। গত মাসে কক্সবাজার বিমানবন্দরের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকার ফুয়েল ট্যাঙ্ক কিনতে ১২ কোটি টাকার খসড়া হিসাব তৈরি করে দরপত্র আহ্বানের প্রস্তুতি নেয় সেমসু। পরে বিষয়টি বেবিচক কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় তা বাতিল করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জার্মানির ‘ওয়ানজল’ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় লাগেজ ট্রলি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ট্রলির প্রকৃত দাম যাচাই করতে তাদের মূল্যতালিকা চাওয়া হয়। তারা জানায়, বেবিচকের ব্যবহৃত লাগেজ ট্রলির দাম ২১০ মার্কিন ডলার। অথচ ওয়ানজল, এক্সপ্রেসোর মতো প্রতিষ্ঠানের দর যাচাই ছাড়াই অতিরিক্ত দামে ট্রলি কেনার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে ট্রলিগুলো আনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সেমসুর নির্বাহী পরিচালক তাঁর পছন্দের লোকদের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্দিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে নানা কারসাজি করেছেন। দরপত্র এমনভাবে করা হয়েছে যেন শুধু রে ইন্টারন্যাশনালই কাজ পেতে পারে। অন্য প্রতিষ্ঠান যেন দরপত্রে অংশ নিতে না পারে সেজন্য পণ্যের স্পেসিফিকেশন ও পণ্যের অপরিহার্য মানদণ্ড ওই প্রতিষ্ঠানের মতো করেই ধার্য করা হয়েছে। প্রতি ট্রলির দাম ৩৭০ ডলার ধরে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূল্যতালিকা নিয়ে তাদেরই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করলে আর্থিক অপরাধের প্রমাণ মিলবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেই দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে রে ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সমকালকে বলেন, বিষয়টি ইনভয়েসের নয়, এই পণ্যগুলো ওজন হিসেবে আনা হয়। কত কেজি পণ্য এনেছি সেই হিসাবে দাম নির্ধারণ হয়েছে। টেন্ডারে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যারা কাজ পায়নি, তারা হয়তো প্রতিহিংসা থেকে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছে। কারণ, জিনিসের মান অনুযায়ী দাম কম-বেশি হয়। চীনা পণ্যের মানভেদে দামের হেরফের আছে। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, ট্রলির তিন বছর ওয়ারেন্টি সার্ভিস থাকতে হবে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ঠিকাদারকেই ট্রলি পৌঁছাতে হবে। সেসব খরচ, ভ্যাট-ট্যাক্স, জামানতসহ সব কিছু হিসাব করেই এই দাম নির্ধারণ হয়েছে।

এ ব্যপারে বেবিচকের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড স্টোরস ইউনিটের (সেমসু) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বিমানবন্দরে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য চীনের তৈরি লাগেজ ট্রলি কেনা হচ্ছে। এরমধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫০০, চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০০ এবং সিলেট ও কক্সবাজার বিমানবন্দরে ১০০ করে ট্রলি দেওয়া হবে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার পরদিন শুরু হচ্ছে ফিরতি হজ ফ্লাইট। এ সময় বিমানবন্দরে যাত্রীর চাপ বাড়বে। এ কারণে ঈদের আগেই ট্রলিগুলো দরকার ছিল। মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই করে এসব ট্রলি কেনার অনুমোদন দিয়েছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই। ডলারের দর ওঠানামার কারণে ট্রলির দাম হেরফের হয়ে থাকতে পারে।

বেবিচকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শাহজালাল বিমানবন্দরের কংক্রিটের স্ল্যাব বিক্রি করে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন–জ্যেষ্ঠ উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) তারেক আহমেদ ও সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. ইসমাইল। ঘটনাটি তদন্ত করে গত ৩০ মে’র মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেবিচককে চিঠি দিয়েছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তবে এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।