মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি : বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত : ইউকে কার্গো নিষেধাঙ্ঘা প্রত্যাহার করলেও অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও প্রত্যাহার করেনি

বিশেষ প্রতিবেদন : প্রায় দুই বছর পর গত রোববার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা উঠেছে এবং এ জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ত্রুটি আছে—এই কারণ দেখিয়ে যুক্তরাজ্য এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা আনুষ্ঠানিকভাবে যেদিন উঠল, তার আগের রাতেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার উদ্বেগজনক ত্রুটি সবার সামনে উন্মোচিত হলো। একজন পুলিশ সদস্য কীভাবে সব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে কোনো কাগজপত্র ছাড়া একটি বিদেশি বিমান সংস্থার উড়োজাহাজে উঠে পড়লেন এবং তা চলতে শুরু করার পরও রয়ে গেলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।
বিশ্বের যেকোনো দেশে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সের নীতি অনুসরণ করা হয়। অথচ আমাদের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আমাদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা ঠুনকো এবং কত সহজেই তা উপেক্ষা করা যায়। এটা আরও দুর্ভাগ্যজনক যে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলার মতো অপকর্মটি করেছেন ঢাকা রেঞ্জের একজন পুলিশ সদস্য। এসআই আশিকুর রহমান পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাকে অবলীলায় উপেক্ষা করতে পেরেছেন কার্যত তাঁর পোশাকের কারণে। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের পোশাকের রঙের সঙ্গে বিমানবন্দরের কর্মরত ইমিগ্রেশন পুলিশের পোশাকের মিল থাকায় এমন হয়েছে বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো ইমিগ্রেশন পুলিশ কি কোনো কারণ ছাড়া বা তার আত্মীয়কে তুলে দিতে উড়োজাহাজে উঠতে পারেন?
যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা গুরুতর। থাই এয়ারলাইনসের পাইলট এই ঘটনার পর উড়োজাহাজ চালাতে পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনার খারাপ অভিঘাত রয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করে এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ঘটনাটিকে বিবেচনায় নেবে এবং আমাদের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রেটিংয়ে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। যুক্তরাজ্য আকাশপথে পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিলেও অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। আমরা যখন এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রত্যাশা করছি, তখন এই ঘটনা নেতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
এই ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট পুলিশের এসআইকে রক্ষা করতে যে তৎপরতা দেখা গেছে ও যাচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে তিনি যে কাজ করেছেন, তা গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। তিনি স্পষ্টতই তাঁর পদ ও পোশাককে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায় করেছেন। এ ধরনের পুলিশ সদস্য বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য বিপজ্জনক। কোনো বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের কেউ অপকর্ম করলে তার দায় সেই বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের নয়। এ ধরনের সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাঁকে রক্ষার চেষ্টা বরং বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। এই প্রবণতা খুবই বিপজ্জনক।  এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। সিএএবির চেয়ারম্যান ওমরা করতে দেশের বাইরে থাকলেও সংস্থার দ্বিতীয় কর্তা ব্যক্তি মেম্বার অপস এখনও নড়েচড়ে বসেননি। নিরাপত্তার বিষয়ে পরিচালক ও সিএসও’র দ্বন্ধ এখনও নিরসন করা হয়নি। সিএসও’র বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও তাকে এখনও বিমানবন্দর থেকে সরানো হয়নি। আমলে নেয়া হয়নি সিএসও’র বিরুদ্ধে  আনীত একাধিক কারন দর্শানো নোটিশের ও কৈফিয়ত তলবের।
এই ঘটনার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত জরুরি। অভিযোগ আছে যে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ ওই এসআইকে সহায়তা করেছেন। এসবের সত্যতা খুঁজে বের করা কোনো কঠিন কাজ নয়। যে নিরাপত্তাবলয়গুলো আশিকুর রহমান অতিক্রম করেছেন, তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। কেউ তাঁকে সহযোগিতা করে থাকলে বা কারও গাফিলতি ধরা পড়লে তাঁদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে কারা এই অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছেন বা করছেন, তাঁদের চিহ্নিত করেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বিমানবন্দর একটি সংবেদনশীল স্থাপনা, এর সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। এখানে কারও খামখেয়ালি বা মর্জিমাফিক কিছু করার সুযোগ নেই—তা সব মহলকে স্মরণ করিয়ে দিতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।

 

বিমানবন্দরের বিভিন্ন সংস্থা ও সিএএবির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা তদারকির দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা সুলতানা এবং বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজি ইকবাল করিমের মধ্যে কমান্ডিং বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত শীতল যুদ্ধ চলে আসছে। ৭টি কারন দর্শানো নোটিশ ,একাধিক কৈফিয়ত তলব করেও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বাগে আনা যায়নি। প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রাশিদা সুলতানা পরিচালকের কমান্ড মানতে নারাজ। দু’কর্মকর্তার মধ্যে প্রশাসনিক সমন্ধনয়হীতার অভাবে বিমানবন্দরের বিভিন্ন কি পয়েন্টে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ডিউটি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন হলে পুরো ইমিগ্রেশন গেট অরক্ষিত, সেই গেট গুলোতে আগে সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীরা ডিউটি করতো। বোর্ডিং ব্রীজ এলাকায়ও সিভিল এভিয়েশনের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীরা ডিউটি করতো। কিন্ত এসব পয়েন্টসহ বিভিন্ন কি পয়েন্ট থেকে সিভিল এভিয়েশনের মাদার বাহিনীর সদস্য- সেই নিরাপত্তারক্ষীদের ডিউটি প্রত্যহার করার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন গেট অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। ফলে শুধু পুলিশের এসআই আশিকুর নয়- যে কেউ যে কোন সময় স্পর্শকাতর এলাকায় অবাধে প্রবেশ করতে পারছে।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঢাকঢোল পিটিয়ে কিার্গো নিষেধাঙ্ঘা প্রত্যাহার করার ঘোষণা প্রচার করলেও বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ রয়েই গেছে। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে এফসেক বাহিনী গঠন করলেও এফসেক বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। জনৈক এক হজ্বযাতীর  কাছ থেকে স্বর্নালংকার রেখে দেয়ার ঘটনাসহ মানব পাচারে এফসেক সদস্যরা মনোনিবেশ করছে। এ সাথে যুক্ত হয়েছে এপিবিএন পুলিশের সিভিল টিম। এই বাহিনীর সদস্যরা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাজেও হস্তক্ষেপ করছে। এই বাহিনীর সদস্যরা অনেক সময় বৈধ কোন বহির্গমন যাত্রীকে পর্যন্ত নানা অজুহাতে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ ওঠছে। এই বাহিনীর সদস্যরা বিমান থেকে বহির্গমন যাত্রীদের নামিয়ে এনে যাত্রাবিরতি করছে বলেও শোনা যায়।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত এফসেক বাহিনীর সদস্যরা ডিউট আওয়ারে ফেইজবুক নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায়। অনেক সময় বসে বসে ঘুমায়।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সহায়তার জন্য সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি এফসেক গঠন, ব্রিটিশ রেড লাইন কোম্পিানির আগমন,আবারো যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো অনেকটা  নাকেখত দেয়ার মতো সব শর্ত মেনে নিয়ে কার্গো নিষেধাঙ্ঘা প্রত্যাহার করার সব শর্ত মেনে নেয়া, ৩ মাসের  কথা বলে গত ৩ বছরেও এফসেক বাহিনীর সদস্যদের বিমানবনন্দর থেকে প্রত্যাহার করে না নিয়ে সিএএবির মাদার নিরাপত্তা বাহিনীকেই উঠিয়ে নেয়ার ঘটনা বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে না। বরং সবার সাথে সমন্বয় করেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিরাপত্তা ডিউটি রোস্টার আবার সিএসওর হাতেই ফিরিয়ে দিতে হবে, এফসেক বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার ডিউটি রোস্টার করলে বিমানবন্দরে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। সেটা ঘটেছে পুলিশের একজন এসআই’র স্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশকে কেন্দ্র করে। তাছাড়া বিমানবন্দর প্রশাসন থেকে বিএনপি-জামায়াত শিবির ঘেষা কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করা ,দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত মেম্বার অপসকে তার নিজস্ব বাহিনীতে ফিরিয়ে নেয়াও জরুরী বলে অনেকে মনে করছেন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।