শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:৫০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
আগামি বাজেটে দুই স্তরের ভ্যাট আসছে

বাণিজ্য ডেক্স : মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটের স্তরে চমক আসছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবসান ঘটাবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১৯৯১ সালের বিদ্যমান আইনে বহু স্তরের ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকর আছে। কিন্তু বিতর্কিত নতুন ভ্যাট আইনে এক স্তরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্যয়বহুল ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পটির সফটওয়্যারও এক স্তরের জন্য তৈরি। কিন্তু এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দুই স্তরের ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য স্বীকার করে জানায়, আসন্ন বাজেটে ভ্যাট স্তরে বড় পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার ২০১৯ সালের ১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করবে। নতুন আইনে ভ্যাটের ১৫ শতাংশ একক হার বাধ্যতামূলক।

অন্যদিকে বর্তমানে সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে ২২টি পণ্য ও সেবার ওপর বিভিন্ন স্তরের অর্থাৎ দেড় থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর। হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বর্তমান স্তর আছে ১০টি। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা সরকারের জন্যে বাধ্যতামূলক। নতুন আইনে একক ভ্যাট স্তর থাকায় ব্যবসায়ীদের আপত্তির মুখে তা স্থগিত করা হয়েছে।

তবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অর্থমন্ত্রী বিদ্যমান আইনেই দুই স্তরের ভ্যাট ব্যবস্থা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই দুই স্তরে ভ্যাট আরোপের প্রভাব পর্যালোচনা করছে এনবিআর। যদিও শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ভিত্তিতে ভ্যাট হারে পরিবর্তন আনা হবে কিনা সেটি চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্রমতে, ভ্যাট স্তর ছাড়াও প্রস্তাবিত বাজেটে আরও পরিবর্তন থাকছে। এর মধ্যে মূলত অনলাইন ব্যবস্থা চালু করতে নতুন বিধিমালা জারি, ইলেকট্রনিক্স ফিসক্যাল ডিভাইস (ইডিএফ) প্রণয়ন, বিদ্যমান পণ্য ও সেবার ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধি এবং দুই স্তরে ভ্যাট- এ ৪টি বড় পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব পরিবর্তনের ওপর ভিত্তি করেই নতুন অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

সম্প্রতি এনবিআরে পাঠানো এক নির্দেশনায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভ্যাট এখন আছে বিভিন্ন হারে ৪, ৫, ৭.৫, ১০ এবং ১৫ শতাংশ হারে। এগুলো অন্তত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কী হারে কী পণ্য ভ্যাট দেয় আর কত দেয় তার তালিকা চাই।’ এছাড়া ১১ ও ১২ মে অর্থমন্ত্রী এনবিআর ভবনে সংস্থাটির উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়েও এ ইচ্ছার কথা জানান।

এর আগে ১১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রী বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দুই স্তরে ভ্যাট আরোপে সপক্ষে নিজের ইচ্ছার কথা জানান। ওই সময় তিনি বলেন, ‘আগামীতে ভ্যাট রেট হবে দুই স্তরের। ১৫ শতাংশ একটা তো থাকবেই এবং ১৫ শতাংশের নিচেও একটি রেট থাকবে। অর্থাৎ ভ্যাট রেট একটা থাকবে না, দুটি থাকবে।’

বর্তমানে এসিবিহীন রেস্তোরাঁয় সাড়ে ৭ শতাংশ, এসি রেস্তোরাঁয় ১৫ শতাংশ, নির্মাণ কাজে ৬ শতাংশ, জমি বিক্রয়ে ৩ শতাংশ, আকার ভেদে ফ্ল্যাটের ওপর দেড় থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ, আসবাবপত্র উৎপাদন পর্যায়ে ৪ শতাংশ ও বিপণন পর্যায়ে ৬ শতাংশ, জুয়েলারিতে ৫ শতাংশ, জোগানদার সেবায় ৫ শতাংশ, পেট্রোলিয়াম পরিবহনে সাড়ে ৪ শতাংশ ও অন্য পণ্য পরিবহনে ১০ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিলের ওপর ৫ শতাংশ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ, ব্র্যান্ডের পোশাকের ওপর ৪ শতাংশ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সেবার বিপরীতে সাড়ে ৪ শতাংশ ভ্যাট আছে।

২০১৯ সালের ১ জুলাই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। এর পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আসন্ন বাজেটে অনলাইন ব্যবস্থা প্রচলনে বিধিমালা সংশোধন ও ভ্যাটের দুই স্তর করতে চাচ্ছে সরকার। এতে নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অভ্যস্ত করা যাবে বলে ধারণা করছে এনবিআর। পাশাপাশি ভ্যাট আদায় কার্যক্রম গতিশীলে আসন্ন বাজেটে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালুর পরিকল্পনা করছে। এ ফিসক্যাল ডিভাইস অনলাইন সিস্টেমে সরাসরি যুক্ত থাকবে, যার মধ্যে কর্মকর্তা অফিসে বসেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেচাবিক্রি মনিটরিং করতে পারবেন। এজন্য বাজেটে ইসিআরের বিধিমালা সংশোধন করে ইএফডি ফিচার যুক্ত করা হবে।

বাজেটে এ ধরনের ৩-৪ বিষয়ের ওপর অর্থমন্ত্রী সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে পারেন। আর এসব পরিবর্তনের ওপর ভর করেই ভ্যাট আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত ভ্যাট কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে সন্দিহান খোদ এনবিআর কর্মকর্তারা। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী, সংকুচিত ভিত্তিমূল্যে ভ্যাট আরোপিত সেবা থেকে কত টাকা ভ্যাট আদায় হয় তার হিসাব-নিকাশ চলছে।

এনবিআরের তথ্যমতে, ১৬ মে পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ১৯৫টি প্রতিষ্ঠান অনলাইন নিবন্ধন নিয়েছে। এর মধ্যে ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৭৪টি প্রতিষ্ঠান ও টার্নওভারের আওতায় তালিকাভুক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৭২১টি প্রতিষ্ঠান।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।