রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বিমানবন্দরে পিস্তল : কার গলদ মেশিন না ম্যান, না চোরাচালানে সহায়তা ?

একুশে বার্তা ডেক্স : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য  যারা  মেশিন পরিচালনা করেন- সেই অপারেটররা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন  কিনা তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে।না। যার কারণে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তল্লাশি পয়েন্ট পেরিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা বার বার  ঘটছে। বিমান ছিনতাই প্রচেষ্টা থেকে শুরু সর্বশেষ যাত্রী মামুনের পিস্তল বিমানবন্দরের ভিতরে যাবার ঘটনায় দেশের সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে।

সম্প্রতি অস্ত্র নিয়ে দুই জন যাত্রী এয়ারপোর্টে ঢুকে পড়ার ঘটনার জন্য অপারেটরদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতাকেই দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের অভিমত, বিমানবন্দরের স্ক্যানারে লাইটার, ছুরি, নেইল কাটার পর্যন্ত ধরা পড়ে যায়। সেখানে স্ক্যানার পেরিয়ে অস্ত্র নিয়ে যাত্রী ঢোকার ঘটনা প্রমাণ করে অপারেটররা কতটা অদক্ষ, দায়িত্বজ্ঞানহীন। প্রথমে কোন কিছু স্পষ্ট দেখা না গেলে অপারেটরদের তা পুনরায় পর্যবেক্ষণের সুযোগ রয়েছে। তারপরও কোন কিছু স্পষ্ট দেখা না গেলে ইঞ্জিনিয়ার ডাকার ব্যবস্থা আছে। তাহলে কিভাবে অস্ত্র প্রবেশ করে? এটা হয় অপারেটরদের ব্যর্থতা নয়তো তাদের অদক্ষতার পরিচয়।

তবে বিমানবন্দরের একজন নিরাপত্তা সুপারভাইজার স্বীকর করেছেন যে মূল প্রবেশগেটে হেভিল্যাগেজের স্ক্যানিং মেশিনে দাও ,কচি,ছুরি ইনডিকেড করলেও অস্ত্র ইনডিকেড করে না। অস্ত্র ইডিকেড করে এন্ট্রি হ্যাইজ্যাকিং পয়েন্টে থাকা স্ক্যানিং মেশিনে।

শাহজালালে হেভি লাগেজ চেকিং এবং বডি স্ক্যানিংয়ের কাজ করে থাকে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির নিজস্ব বাহিনী এভসেক।এদের মধ্যে কাউকে ৩-৭ দিনের ট্রেনিং দিয়ে মেশিনে বসিয়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তরক্ষী ফজলার মেশিনে বসতে অপারগতা প্রকাশ করলেও তাকে অনেকটা জোর করে হেভিল্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিনে বসিয়ে দেয়া হয়। আর যাত্রী মামুনের পিস্তল স্ক্যানিং মেশিনে ধরা না পড়ার জন্য পিস্তল চলে যায় ভিতরে। এ ঘটনায় যদিও ফজলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।

এভসেক বিমান বাহিনীর অধীনে চলে থাকে। এভসেক বিমান বাহিনীর সদস্য, সিভিল অ্যাভিয়েশনের সদস্য, আনসার ও পুলিশের সদস্যদের নিয়ে গঠিত নিরাপত্তা টিম। কোনো যাত্রী শাহজালালে প্রবেশ করার আগে তাকে অবশ্যই এভসেকের তল্লাশি বলয় পার হতে হয়। এদিকে শাহজালালে প্রথমে প্রবেশ করলেই হেভি লাগেজসহ সব ধরনের ব্যাগ স্ক্যানারের মাধ্যমে চেকিং হয়। ওই সময় যাত্রীদের আর্চওয়ের মাধ্যমে চেকিং শেষে কর্তব্যরত সিকিউরিটি হ্যান্ড ডিটেক্টরের মাধ্যমে দেহ তল্লাশি করে থাকেন। এভাবে প্রথম ধাপের তল্লাশি সম্পন্ন হয়। এরপর যাত্রী বিমানের কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ ও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিমানে ওঠার জন্য যান। অভ্যন্তরীণ যাত্রী হলে বোর্ডিং ব্রিজের আগে আবার যাত্রীর লাগেজ ও শরীর স্ক্যানিং এন্ট্রি হ্যাইজ্যাকিং পয়েন্টে চেক করা হয়। তখন অভ্যন্তরীণ যাত্রী বিমানে ওঠার অনুমতি পান। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রী হলে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের চেকিং কাউন্টার থেকে বোর্ডিং পাশ সংগ্রহ করে যাত্রী ইমিগ্রেশনে যান। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে বিমানে ওঠার জন্য যান। এর আগে আইনেস বা (সর্বশেষ চেকিং) যাত্রীর সঙ্গে থাকা হ্যান্ড ব্যাগ, মানিব্যাগ, জুতা হাত ঘড়ি, মোবাইল ফোন স্ক্র্যানিংয়ের মাধ্যমে চেকিং করানো হয়। যাত্রী আর্চওয়ে পার হওয়ার পর হ্যান্ড ডিটেক্টর দিয়ে তার দেহ তল্লাশি করা হয়। তারপর বিমানে ওঠার জন্য যাত্রীরা প্রবেশ করেন।

সম্প্রতি ইলিয়াস কাঞ্চনের পর মানবাধিকার কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান মামুন অস্ত্র নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। এই ঘটনায় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। উড্ডয়ন নিরাপত্তায় বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে স্বর্ণপদক পেয়েছে এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৯ নম্বর পেয়েছে। কিন্তু উল্লিখিত দুই ঘটনা নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সব মহলে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, স্ক্যানিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যারা পালন করেন তারা অভিজ্ঞ নন। তারা কী কাজ করেন কা কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা কেউ তদারকি করে না। আবার যারা স্ক্যানিংয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তাদের অনেকেই স্থায়ী নন। অপরদিকে নিম্নমানের স্ক্যানার মেশিনও স্থাপন করা হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিভিল এভিয়েশনসহ বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। যারা এই ধরনের অদক্ষ অপারেটর ও নিম্নমানের মেশিন ক্রয় করে থাকেন। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন যে, চোরাচালানীদের মাদকসহ নিষিদ্ধ পণ্য সমাগ্রী লাগেজের মাধ্যমে পাচারের সুযোগ করে দিয়ে ওই সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের ফল হলো এই নিম্নমানের স্ক্যানিং মেশিন কেনা ও অদক্ষ অপারেটর নিয়োগ। বাংলাদেশের বিমান ইউরোপ ছাড়াও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে না যেতে না পারার জন্য সিন্ডিকেটই দায়ী।

২০১৫ সালে শাহজালালের নিরাপত্তা বিশ্লেষণ করে যাত্রীদের সঠিকভাবে তল্লাশি ও মালামাল তল্লাশি এবং তল্লাশিকারীদের অদক্ষতার নানা অভিযোগ তুলেছিল যুক্তরাজ্য। তখন যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেডলাইন সিকিউরিটির সঙ্গে চুক্তিও করে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।