রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৪৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় ‘আইএস-বাংলাদেশ’

যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইএস সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। ২ ব্যক্তি ও ৭ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীর অভিযোগ তোলা হয়েছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর ভিতর একটা গ্রুপ বাংলাদেশ আইএস সন্ত্রাসী গ্রুপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যান্য গ্রুপের মতো তাদেরও বিরুদ্ধে একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ধরে নেয়া যেতে পারে বাংলাদেশে ওই ধরনের সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় আছে। বাংলাদেশকে একটা আইএস সমর্থিত রাষ্ট্র হিসেবে গণ্য করা না হলেও বাংলাদেশে যে আইএস তৎপরতা চলছে তাই এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আসলে ৯/১১-এর পর থেকে বাংলাদেশ আলকায়েদাসহ বিশ্বের যে কোনো জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ আজ সর্বজন বিদিত। তালেবান, আলকায়েদা, আইএস, বোকোহারাম বিশ্বের যেখানেই জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালিয়েছে বাংলাদেশ তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এতদঞ্চলে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ তার সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশে বেশকিছু জঙ্গি তৎপরতা সংঘটিত হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার দ্রুততার সঙ্গে সংকটের সমাধান করেছে এবং ভবিষ্যতে যাতে ওই ধরনের জঙ্গিবাদী তৎপরতা না চলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ কাউন্টার টেররিজম গ্রুপে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারা আজ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ভিতর থেকে চৌকস বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে, তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যে সফলতার সঙ্গে তারা জঙ্গিবাদী মোকাবেলা করেছেন, তাতে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে যেভাবে জঙ্গি মোকাবেলা করা হয়েছে তারচেয়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেশি সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রত্যেকটি ঘটনা তদন্ত করে দেখেছে যে, ক্ষেত্রবিশেষে আইএস জঙ্গিবাদীরা জঙ্গিবাদী তৎপরতা ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হলেও এ দেশে আইএসের অনুরূপ কোনো জঙ্গিবাদী তৎপরতা ঘটেনি। বরং বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদীরা নিজেদের বহির্বিশ্বে জাহির করার জন্য বা আইএসের সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় প্রয়োজনে নিজেদের আইএস সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি জানিয়েছেন। এমনকি বিশ্বের বড় বড় রাজনীতিতে যে কয়জন বাংলাদেশি যুবক আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে তাদের ওই জঙ্গিবাদী হওয়ার কারণ বাংলাদেশ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়ামের মতো দেশে নিজেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে বা বাস্তব পরিস্থিতির শিকার হয়ে আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র রক্ষা করে আসছেন ও বিভিন্ন দেশে আইএস সদস্য সংগ্রহের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশের কোনো জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকলেও কেন্দ্রীয় আইএসভিত্তিক কোনো যোগাযোগ নেই। আইএসভিত্তিক কোনো সংস্থা গড়ে ওঠেনি। জঙ্গিরা আইএসের সমর্থন ও সাহায্যপ্রাপ্ত না হওয়ার কারণে অতি দ্রুততার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে তাদের জঙ্গিবাদী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার সব সময় বলে আসছে বাংলাদেশে এখন আইএস জঙ্গিবাদী তৎপরতা নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই বলে আসছেন বাংলাদেশে সংঘটিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার প্রয়াসে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদী সংগঠন আইএস তৎপরতা চলছে। বিশেষ তৎপরতার সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ তদন্ত করে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, আইএস সমন্বিত জঙ্গি তৎপরতা বাংলাদেশে কখনো ঘটেনি। তাহলে কিসের ওপর ভর করে বাংলাদেশে আইএস সংবলিত একটা সন্ত্রাসী গ্রুপ তৎপর বলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ব্ল্যাক লিস্ট করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই জানে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোটা বিশ্বে আইএস আলকায়েদা ও তালেবানের জঙ্গিবাদীর বিরুদ্ধে কীভাবে সোচ্চার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ সব জঙ্গিবাদ বিরোধী তৎপরতার সঙ্গে যে কোনো সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার ব্যাপারে সচেতন। সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশকে জেএসপি ফেসিলিটি দিতে গড়িমসি করায় বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী কিছু অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ কখনো যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রু ভাবাপন্ন দেশ বলে মনে করে না।

পদ্মা সেতুর ব্যাপারে বিশ্ব ব্যাংক টাকা দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেও বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থে ওই সেতু বিনির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখলেও বাংলাদেশ কখনো যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। তাই বাংলাদেশের মতো একটা শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী দেশকে আইএসের মতো জঙ্গিবাদী সংগঠনের আশ্রয়স্থল বলে পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্র চিহ্নিত করলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার ক্ষুব্ধ না হয়ে পারে না। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে বিশ্ব জঙ্গিবাদীর হাতে অকাতরে প্রাণ দিচ্ছে এটা তো জাতিসংঘ অবশ্যই অবহিত আছেন। সম্প্রতি মালিতে সন্ত্রাসীদের হাতে ৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষার প্রয়াসে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছেন। এমনিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে বাংলাদেশ এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশ, বাংলাদেশ বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনা কি বন্ধুসুলভ আচরণ বলে বিবেচিত হতে পারে। যখন এরকম একটা সংবাদ প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হলো তখন বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। কোন উদ্দেশ্য সামনে রেখে এটা করা হলো ও এর পরিণতি কোন দিকে গড়াতে পারে তা নিয়ে বাংলাদেশ অবশ্যই চিহ্নিত। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে মার্কিন সরকারের এই ঘোষণা প্রমাণ করে না যে, বাংলাদেশ আইএস তৎপর। মান্যবর রাষ্ট্রদূতের কাছে আমার প্রশ্ন যদি সত্য সত্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশে কোনো আইএস সমর্থিত সংগঠন নেই, তাহলে বাংলাদেশ আইএস সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারি হবে কেন? আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্ব দেই কিন্তু স্বাধীন একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশ্ব সমাজে আমরা আমাদের অবস্থান সম্পর্কে খুবই সচেতন। অযৌক্তিকভাবে বাংলাদেশের ওপর জঙ্গিবাদের দায় চাপিয়ে দেয়া কোনোক্রমে গ্রহণযোগ্য নয়। সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ বা সরকারের সঙ্গে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।

বাংলাদেশ চায় একটা শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক, জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। পৃথিবীর যেখানেই জঙ্গিবাদী তৎপরতা চলছে সুযোগ পেলে বাংলাদেশ সেখানেই জঙ্গিবাদীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব পরিমণ্ডল থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উৎখাত করা। বাংলাদেশ একটা মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র হয়েও ধর্মীয় জঙ্গিবাদীর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, জঙ্গিবাদে তার সরকার জিরো টলারেন্স নীতিতে বিশ্বাসী। এটা শুধু তার মুখের কথা নয়, কর্মেই তিনি তা প্রমাণ করেছেন। বিশ্বের অন্য কোনো দেশের চাইতে বাংলাদেশে বেশি জঙ্গিবাদ আছে, বলে কেউ আজ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। তাই আইএসের মতো সংগঠন বাংলাদেশের তৎপর এরূপ ধারণা করা আদৌ যুক্তিযুক্ত ও সমর্থনযোগ্য নয়।

ডা. এস মালেক : কলাম লেখক রাজনীতিক

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।