শনিবার, ১৫ Jun ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
লকডাউন: ছদ্মবেশে বোরকা পড়ে মাদকের হোম ডেলিভারি

নিউজ ডেস্ক: কোরবানির ঈদের বাজার ধরতে করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই জমজমাট হয়ে উঠেছে মাদকের ‘হোম ডেলিভারি’। কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে শুরু হয়েছে মাদকের মজুদ। মাদকের ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তার জন্য মাদক ব্যাবসাকে রূপ দেয়া হয়েছে ডিজিটালে। এখন অনলাইনে বা মোবাইল ফোনে কল দিলেই বিক্রেতা মাদক পৌঁছে দিচ্ছে ক্রেতার বাসায়। মাদকের এ ধরনের হোম ডেলিভারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে কিশোর গ্যাং, বোরকা পরিহিত সুন্দরী নারীরা। মাদক আনা নেয়ার বাহন হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স, কাভার্ড ভ্যান, জরুরী সেবা কাজে ব্যবহৃত যানবাহন। করোনার মধ্যে ঈদের বাজারে মাদক চালান আনা নেয়ার খবর পেয়ে রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি ও কঠোর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ঢাকাসহ সারাদেশে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। যানবাহন চলাচল বন্ধ। বিনা কারণে লোকজন বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। এরই মধ্যে অনেক মাদকসেবী বাসা থেকে বের না হওয়ায় তাদের কাছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের হোম ডেলিভারি হচ্ছে এ ধরনের খবর পেয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫ জনকে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, অনিক হাসান ওরফে হিরো অনিক, হিরা, আবির আহমেদ রাকিব, শহিদুল ইসলাম ওরফে এ্যাম্পুল, ও সোহাগ হোসেন আরিফ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, মাদক, অস্ত্র, মাদক সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, মাদক কেনাবেচার নগদ টাকা। জনকণ্ঠ

গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, করোনার মধ্যে আসন্ন ঈদের বাজার ধরতে মাদকের মজুদ করাসহ হোম ডেলিভারি দিয়ে আসছে। তারা রাজধানীর মগবাজার, হাতিরঝিল ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি সিন্ডিকেটের হোতা। এদেরই একজন অনিক। তার নামে হত্যা মামলা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ ৯টি মামলা রয়েছে। তার একটি গ্রæপ রয়েছে, যেখানে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। কিশোর বয়সে অনিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়। ২০১৬ সালে সে আলোচিত আরিফ হত্যা মামলার আসামি হিসেবে পরিচিতি পায়। অনিক মগবাজার, মধুবাগ, মীরবাগ, নতুন রাস্তা, পেয়ারাবাগ, চেয়ারম্যান গলি, আমবাগান, ও হাতিরঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে মাদকের কারবার চালাত। অনিক মগবাজার এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের বড় হোতা। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে। ওই মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে অভিযান চলছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফেনসিডিলের বোতল হোম ডেলিভারি দিতে গিয়ে দুই নারী কারবারি আটক হয়েছেন। এ সময় তাদের ভ্যানিটি ব্যাগ তল্লাশি করে ২৫ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে পুলিশ। রাজধানীর অদূরে পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার নিমতলী ব্রিজের পাশ থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- মাদক কারবারি শাবানা ও নূপুর। শাবানা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পারকুলা গ্রামের নূরুল হুদার স্ত্রী ও নুপুর বেগম জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দরগাপাড়া গ্রামের মৃত আরমানের স্ত্রী। তারা দুজনেই টঙ্গী পশ্চিম থানার সুরতডঙ্গ রোডে মঞ্জু সরকারের বাড়ির ভাড়াটিয়া। অনেক দিন যাবত তারা ওই বাসায় থেকে বিভিন্ন মাদক স্পটে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক হোম ডেলিভারি দিয়ে আসছে।

মাদক বেচাকেনার জন্য নিরাপদ কৌশল বেছে নিয়েছে বিক্রেতা ও ক্রেতারা। একটি মাত্র ফোন বা এসএমএসে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে বাসায়। খাবার বা পণ্য ঘরে বসে পেতে হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু হয়েছে অনেক আগেই। আর এখন রাজধানীতে চালু হয়েছে মাদকের হোম ডেলিভারি। চাইলেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে যেকোন ধরনের মাদক দ্রব্য। মাদকসেবীদের জন্য নতুন এই ‘সেবা’ চালু করেছে পুরনো ও অভিজ্ঞ মাদক ব্যবসায়ীরা।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আকারে ছোট ও সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় ইয়াবার হোম ডেলিভারি ঠেকাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা। সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া মাদকের হোম ডেলিভারি ঠেকানো বেশ মুশকিল। আকারে ছোট মাদকদ্রব্যগুলোর হোম ডেলিভারিতে চাহিদা বেশি। শরীরের গোপন স্থানে লুকিয়ে এসব মাদকের ডেলিভারি দেয়া হয়। তবে হোম ডেলিভারি ঠেকানো কঠিন হলেও অসম্ভব না। রাজধানীতে মাদক ব্যবসার মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হলে কেনাবেচার এই নতুন পদ্ধতিও এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। রাজধানীর অন্তত এক ডজন এলাকায় মাদকের নিয়মিত হোম ডেলিভারি পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা, তেজগাঁও, গুলশান, নিকেতন, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, মিরপুর, উত্তরা উল্লেখযোগ্য। আর এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা কেউই নতুন নয়, পুরনো মাদক ব্যবসায়ীরাই এ সেবা চালু করেছে। তবে নতুন মাদক ব্যবসায়ীদেরও মাদক ব্যবসায় নামার খবর পাওয়া গেছে। করোনাভাইরাসের মধ্যে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে মাদকের মজুদ করা হচ্ছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাদকের হোম ডেলিভারির বাহক হিসেবে বোরকা পরিহিত নারী, সুন্দরী নারী ও শিশুদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য বহনকারীরা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে চলাফেরা করে। সুন্দরী ও স্মার্ট নারীদের মাদকদ্রব্য পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হয়। আবার বোরকা পরিহিত নারীদের এ কাজে ব্যবহার করা হয়। যাতে সন্দেহ করা না যায়, সেজন্য শিশুদের বাহক হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা পুরনো কৌশল। এখন হোম ডেলিভারিতেও তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে করোনার লকডাউনের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়াকড়ির মধ্যে এ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান, জরুরী সেবা কাজে নিয়োজিত স্টিকার লাগানো যানবাহনে মাদক বাহনের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার তথ্য মিলছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।