শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শতাধিক রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার : পাল্টা জবাব দেয়ার ঘোষণা রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক ডেক্স : যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ২৫টি দেশ সম্মিলিতভাবে নিজ নিজ দেশ থেকে ১২৫ জনের বেশি রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের সলসবেরি শহরে পক্ষত্যাগী এক রুশ গুপ্তচর ও  তার মেয়েকে বিষ প্রয়োগের ঘটনার জের ধরে সোমবার ও মঙ্গলবার এই সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছে দেশগুলো। ইতিহাসে একযোগে সবচেয়ে বেশি সংখ্যার কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা এটি। সম্মিলিত এই কূটনীতিক বহিষ্কারের পাল্টা জবাব দেয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া। আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করতে অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরব যুক্তরাষ্ট্র থেকে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাকে একটি ‘বিশাল আকারের ব্ল্যাকমেইল’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।  এ খবর দিয়েছে বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, ৪ঠা মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসবেরি শহরে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় পক্ষত্যাগী রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে।

পরবর্তীতে জানা যায়, তাদের ওপর সামরিক পর্যায়ের নার্ভ এজেন্ট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাজ্য জানায়, নার্ভ এজেন্টটির উৎপত্তিস্থল রাশিয়ায়। বিষ প্রয়োগের ঘটনায় রাশিয়া জড়িত, এমন অভিযোগ এনে ১৪ই মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কার করা হয় ২৩ রুশ কূটনীতিককে। পাল্টা জবাবে রাশিয়াও বহিষ্কার করে বৃটিশ কূটনীতিকদের। এরপর শুক্রবার ইইউ নেতাদের এক বৈঠকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার ঘোষণা দেয় জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্যান্য ইইউভুক্ত দেশ। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে নিজ নিজ দেশ থেকে কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউক্রেন ও অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া কূটনীতিক বহিষ্কারসহ রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ফুটবল বিশ্বকাপেও অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকবে বলে জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে বহিষ্কৃত কূটনীতিকসহ সবমিলিয়ে ১৪০ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কৃত হতে চলেছেন। রাশিয়া জানিয়েছে, তারা এই সম্মিলিত পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেবে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এরকম বেহায়াপনা সহ্য করবো না। তিনি আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে দোষ দেন। বলেন, যখন অমুক বা তমুক দেশ থেকে একজন বা দুইজন কূটনীতিক বহিষ্কৃত হয় তখন সবাই আমাদের কানে ফিসফিস করে ক্ষমা চাইতে থাকে। আমরা নিশ্চিত ভাবেই জানি যে, এটি একটি বিশাল আকারের চাপ সৃষ্টি, বিশাল আকারের ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে সমপন্ন হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলোই এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র হাতিয়ার। সের্গেই লাভরভ জানান, রাশিয়া বেশ কয়েকটি প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের কথা চিন্তা করছে। এদিকে, এক রুশ সিনেটর, ভ্লাদিমির ডঝাবরভ বলেন, রাশিয়া থেকে একটি ‘টিট-ফর-ট্যাট’ ধরনের জবাব দেয়া হবে। .
আমেরিকান সংবাদ প্রকাশনা ‘ফরেইন পলিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার রুশ কূটনীতিকদের বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ। এদের মধ্যে ৪৮ জন দূতাবাসসহ বিভিন্ন কনস্যুলেট-এ নিযুক্ত রয়েছেন। বাকি ১২ জন নিযুক্ত জাতিসংঘে। শীতল যুদ্ধকালীন সময়ের পর এই প্রথম একযোগে এত বিশাল সংখ্যার কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনা এটি। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়াকে তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য দায়বদ্ধতা নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি, পুরো বিশ্বের কাছে এটা প্রমাণ করার আহ্বানও জানানো হচ্ছে যে, রাশিয়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও দায়িত্ব মেনে চলতে সক্ষম।
ইইউ-ভুক্ত দেশগুলো হাতেগোনা কয়েকজন কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ড প্রত্যেক দেশ ৪ জন করে কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। লিথুয়ানিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র ঘোষণা দিয়েছে তিনজন করে কূটনীতিক বহিষ্কারের। একইভাবে ইতালি, ডেনমার্ক ও নেদারল্যান্ডস দুই জন করে; এস্তোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, লাতভিয়া, রোমানিয়া ও সুইডেন একজন করে রুশ কূটনীতিককে বিদায় জানাতে চলেছে। ইইউ ছাড়া রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে এমন দেশের তালিকায় যোগ দিয়েছে ইউক্রেইন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, নরওয়ে ও মেসেডোনিয়া। দেশগুলো যথাক্রমে ১৩, ৪, ২, ২, ১, ১ জন করে কূটনীতিক বহিষ্কার করতে চলেছে। রাশিয়ার জন্য এমন সম্মিলিত পদক্ষেপ বেশ বড় ধাক্কা। ফরেইন পলিসির প্রতিবেদন অনুসারে, এর মানে হচ্ছে, ২০টিরও বেশি দেশ একযোগে রাশিয়ার বিরোধিতা করছে। কিন্তু, এতে পাল্টা পদক্ষেপের সম্ভাবনা প্রবল। এমনটা হলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হবে। এমন এক পর্যায় আসতে পারে যখন এই পদক্ষেপ শুধু রাশিয়াকেই ক্ষেপিয়ে তুলবে না, রুশ জনগণকেও ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে। মস্কো ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৬০ মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে। এর মানে হচ্ছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়পক্ষই উভয় দেশে উত্তেজনা কমানোর জন্য কাজ করতে পারবে এমন কূটনীতিকের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা হারাতে চলেছে।
এই পরিস্থিতির অপর একটি দিক হচ্ছে, এতে করে রাশিয়ার আচরণে তেমন কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা! সেন্টার ফর এ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি’র ট্রান্স আটলান্টিক নিরাপত্তা প্রোগ্রামে নিয়োজিত গবেষক র‌্যাচেল রিজো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আগেও রুশ কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। তাতে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড থেমে থাকেনি। এছাড়া এই পদক্ষেপ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রচলিত ‘মিথ’ও সমর্থন করবে। মিথটি হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে পরাস্ত করার চেষ্টায় আছে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।