রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শাহজালাল বিমান বন্দরে হয়রানি, এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ হয়ত অন্ধ বধির : দেশ নিয়ে লজ্জায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রবাসী নারীর খোলা চিঠি
প্রবাসী নারী লিয়ানা। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে বেড়াতে এসে বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন এক প্রবাসী নারী। পরে নিজের ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়ে সেই হয়রানির কথা বিস্তারিত লিখেছেন তিনি।

পোস্ট থেকে জানা গেছে প্রবাসী নারীর নাম ‘লিয়ানা’। তার পোস্ট ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

লিয়ানার পোস্টটি এখানে তুলে ধরা হলো : ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাখুলি কিছু কথা। মা হয়ে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে আজ আমি লজ্জিত। আমার দুই মেয়ে ব্রিটিশ নাগরিক। দীর্ঘ সাত বছর পর তাদের নিয়ে নিজ দেশে মাত্র ১০ দিনের জন্য  ঘুরতে এসেছিলাম এই চিন্তা করে—আমি যেমন আমার দেশকে ভীষণ ভালোবাসি তেমনই আমার মেয়ে দুটা ও আমার দেশকে চিনবে, জানবে, ভালোবাসবে।

 

দেশে নিয়ে যাচ্ছি শুনেই আমার বড় মেয়ে খুব কান্না করেছিল— কেন তাদের নিয়ে যাচ্ছি, কিবা আছে, আর কোনোদিন যেন জোর করে না নিয়ে যাই।

নিজের দেশের সৌন্দর্য তুলে ধরতে আমি দেশে নেমেই কোনো বিশ্রাম না নিয়ে তাদের নিয়ে ছুটে গেছি কক্সবাজারে। আবার ঢাকায় এসেই পরের দিন ছুটে গেছি শ্রীমঙ্গল ও সিলেট। এই অল্প কিছুদিনের মাঝেও নিজের দেশের গর্বের দিকগুলা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রচণ্ড গরমে মেয়েদের খুব কষ্ট হয়েছে তারপরও তারা আমার সাথে নিউমার্কেট, মিরপুর, বসুন্ধরা, ইস্কাটন, পল্টন ঘুরেছে।

লন্ডনে প্রতিদিন উন্নত ট্রেনে তারা চড়ে, তারপরও নিজের দেশের গর্বের মেট্রোরেলে চড়িয়েছি। আমি খুব গর্বিত বোধ করেছি মেয়ে দুটি যখন বলেছে তারা আবার আসতে চায় আমার দেশে। অল্পদিনের মধ‍্যে তাদের মাঝে সেই ভালোলাগার জায়গা আমি তৈরি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু নিজ দেশের এয়ারপোর্ট কর্মচারীদের অসৎ আচরণে আমি লজ্জিত হয়ে যাই। আমার সময়, আমার টাকা খরচ সব যেন এক মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যায় যখন আমার মেয়েরা অবাক হয় এয়ারপোর্ট কর্মকর্তাদের হয়রানিমূলক আচরণে।

আমি খুব লজ্জিত আজ। মা হিসেবে সন্তানের কাছে নিজের দেশ নিয়ে লজ্জিত। জানি না আমার এই লেখা আপনার পযর্ন্ত পৌঁছাবে কিনা। তবে এতটুকু বলব—আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা নিজের দেশকে অনেক বেশি ভালোবাসি।

কিছু দেশ আমরা ঘুরি কিন্তু বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন হয়রানিমূলক চেকিং আছে কিনা আমার জানা নাই।

১. আমরা প্রথম যখন এয়ারপোর্ট ঢুকি একটা স্ক‍্যানসহ শরীর চেক করা হয়। যা অন‍্য দেশে হয় না।

২. ইমিগ্রেশনের চেকইনের পর আবার একটা চেক হয়। এইটাই সব দেশে হয়।

৩. গেট খোলা হওয়ার পর যেখানে শুধু বোডিং পাস চেক করার কথা সেখানে কেবিন লাগেজের সাথে যাদের একটা আলাদা ব‍্যাগ থাকে তাদের দাঁড় করানো হয় এবং ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে তাদের ছাড়া হয়। যেটা বিশ্বের আর কোথাও নাই।

৪. গেটে ঢোকার পর আবার জুতা ঘড়ি খুলে স্ক‍্যান এবং শরীর চেক করা হয়। বাইরের দেশে স্ক‍্যানে কিছু ধরা পড়লেই আলাদা করে শুধু মাত্র সেই ভ্রমণকৃত মানুষের তল্লাশি করা হয়। বাকি সবার না।

৫. জীবনের প্রথম দেখা প্লেনে ওঠার আগে আবার টেবিল বসিয়ে প্রতিটা যাত্রীদের ব‍্যাগ খুলে সব ঘাটিয়ে তল্লাশি করতে। তাহলে স্ক‍্যান মেশিনটির কাজ কী ছিল?

শুধু তা-ই নয়, যেখানে স্ক‍্যান মেশিনে কোনো জীবননাশক কিছু ধরা পড়েনি সেখানে যাত্রীদের ব‍্যাগ খুলে বলা হচ্ছে এসব জীবননাশক এবং কিছু মিষ্টি খাবার টাকা দিতে যেহেতু আমরা শখ করে কিনে এনেছি।

আমার প্রশ্ন হলো যদি জীবননাশক জিনিস হয় তাহলে মিষ্টি খাবার টাকা দিলে সেটা কীভাবে জীবন বাঁচানোর জিনিস হয়ে গেল? এসব কর্মকর্তা তো তাহলে টাকা নিয়ে যে কোনো দুর্বৃত্তকারীকেও প্লেনে ওঠার সুযোগ করে দেবে। আমরা কিভাবে এই ধরনের এয়ারপোর্ট কর্মচারীদের কাছে নিরাপদ। এমনকি আপনিও কি নিরাপদ?

এইসব কর্মচারীদের হয়রানিমূলক আচরণ কবে বন্ধ হবে? কবে আমাদের বাইরে থাকা সন্তান দেশে যেতে চাইবে, দেশের জন‍্য কিছু করতে চাইবে?

আমি নিজে মিষ্টি খাবার টাকা দিয়ে প্লেনে বসেছি, নিজের চোখে দেখেছি এক ছোট ভাইকে টয়লেট গিয়ে তার কাঁধের ব‍্যাগের জন‍্য টাকা দিচ্ছে। দেখলাম টয়লেটে লেখা যেন আমরা কোনো কর্মকর্তাকে টাকা উপহার না দিই, কিন্তু কোথাও লেখা নাই এসব কর্মকর্তা যদি আমাদের থেকে টাকা ছিনতাই করে তখন আমরা কী করব? বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে নিজ সন্তানের কাছে আজ আমি সত‍্যি খুব লজ্জিত।

লন্ডনে আমি সাধারণ একটা চাকরি করি। খুব আশা নিয়ে নিজ সন্তাদের কাছে নিজের দেশকে তুলে ধরতে ১০ দিনে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা, যা আমার মতো মধ‍্যবিত্তের জন‍্য সহজ না। কিন্তু আমার দেশের এয়ারপোর্টের এসব অসাধু, অসৎ কর্মচারীদের মিষ্টি খাবার জ‍ন‍্য টাকা ছিনতাইয়ের পদ্ধতি আমার কাছে খুব জঘন‍্য মনে হয়েছে। ছোট দেশ হিসেবে অনেক কিছুই নেই আমাদের যা আমার মেয়েরা মেনেই নিয়েছিল, কিন্তু এয়ারপোর্টের কর্মচারীদের এই ধরনের মিষ্টি খাওয়ার টাকা ছিনতাই পদ্ধতিতে আমার সন্তান আতঙ্কিত। আমরা কি তাহলে নিজ দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখব না? আমরা কি নিজের সন্তানের কাছে এইসবই তুলে ধরে দেশকে পরিচয় করিয়ে দেব? কতটা তল্লাশি হলে যাত্রী নিরাপদ হবে প্লেনে ওঠার জন‍্য? কতটা নির্লজ্জ জাতি হলে নিজের মতো করে নিয়ম বানিয়ে মিষ্টি খাওয়ার টাকা ছিনতাই করতেই থাকবে? এয়ারপোর্ট খুবই অনিরাপদ যেখানে মিষ্টি খাওয়ার টাকার ওপর যাত্রীর প্লেনে ওঠা নির্ভর করে।

এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ হয়ত অন্ধ-বধির। এয়ারপোর্ট এসব অসৎ কর্মচারী থাকলে স্ক‍্যান মেশিন এবং সিসি ক‍্যামেরার মতো ব‍্যয়বহুল মেশিনের দরকার নেই।

আরও কষ্টের বিষয়—আমাদের ভাইবোনরা যখন দেশের জন‍্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে অচেনা অজানা দেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন, তারা জানেও না কত কঠিন জীবন পরীক্ষা তাদের জন‍্য অপেক্ষা করছে, আর সেই সময় আমাদের ইমিগ্রেশন অফিসার রা কতোটা অসম্মান নিয়ে তাদের কাগজপত্র চেক করে ছুঁড়ে ছুঁড়ে তাদের ফেরত দিচ্ছেন নিজের চোখে দেখা। এই অতি সাধারণ মানুষগুলো কি এতটাই অসম্মানের যোগ‍্য? এই সহজ সরল ভাইবোনগুলো কি সামান‍্য সম্মান আমাদের দেশের এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন অফিসারদের থেকে আশা করতে পারে না? এতটা ছোট মানসিকতার পরিচয় কেন আমরা দিচ্ছি, যেখানে তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আমাদের দেশের উন্নতির অনেক কিছু নির্ভর করে!

লিয়ানা।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।