সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
দুই দিনের জন্য গিয়ে বাইশ বছর : অঞ্জু বললেন, ফেঁসে গিয়েছিলাম

বিনোদন ডেক্স : দুদিনের জন্য গিয়েছিলাম। ফেঁসে গেলাম। আর আসতে পারিনি। ২২ বছর বনবাসে থাকার পর বেদের মেয়ের আবেগমথিত উচ্চারণ ছিল এটি। এ যেন বনবাসই। বেদের মেয়ে জোসনাখ্যাত নায়িকা অঞ্জু সেই যে গেলেন কলকাতায় আর খোঁজ নেই। একদিন দুদিন বা এক সপ্তাহ দুসপ্তাহ নয়। বছর পেরিয়ে দশক-দশক।

দীর্ঘ ২২ বছর পর অবশেষে নব্বইয়ের দশকের সাড়া জাগানো নায়িকা অঞ্জু ঘোষ ওপার বাংলা থেকে ঢাকায় এসে মুখোমুখি হলেন সাংবাদিকদের। এসময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কারও ওপর ক্ষোভ থেকে দেশ ছাড়িনি। গিয়েছিলাম বেড়াতে। তারপর ওখানে ছবিতে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, আর ফেরা হয়নি। আসলে আমি ফেঁসে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন, এত বছর পরও যে আমাকে এভাবে আপনারা মনে রেখেছেন এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমাকে যে সম্মান আজ দেয়া হলো তার তুলনা হয় না। সারা জীবন মনে থাকবে এ ভালোবাসার কথা। শিল্পী সমিতিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ অনেক স্মৃতি মনে পড়ছে।

দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি কলকাতায় বসবাস করছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণে গত বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকায় এসেছেন। শিল্পী সমিতি তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য আজ বিকালে এফডিসিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। এ ব্যাপারে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আজ আমি নিজেই একটু দেরি করে এসেছি। কারণ আজ আর সেই বেদের মেয়ে জোসনার জন্য অপেক্ষা করতে চাইনি। আমি চেয়েছি, আজ অন্তত জোসনা আমার আগে চলে আসুক।’

অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘আমি যখন এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছিলাম, তখন ক্লাস নাইনে পড়তাম। সেই থেকে অনেক বছর এখানেই কাজ করেছি। এই এফডিসি তখন কী জমজমাট ছিল! একসঙ্গে চার-পাঁচটি ছবির শুটিং হতো এখানে। শিল্পীদের ভিড় লেগে থাকত। তখন পুরো এফডিসি জুড়ে কী ব্যস্ততা ছিল! এটাই ছিল আমাদের ঘরবাড়ি। এটাই ছিল সংসার। কিন্তু এবার এসে হতাশ হয়েছি। সব পাল্টে গেছে। দর্শক যাতে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরে আসেন, তার জন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।’

এ অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, বিশিষ্ট অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন, আহমেদ শরীফ, নাদের খান, অভিনেত্রী অঞ্জনাসহ চলচ্চিত্রের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে অঞ্জু ঘোষকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। এরপর তার হাতে শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। এদিকে এ অনুষ্ঠানে নাদের খান জানান, ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে তিনি প্রযোজক হিসেবে ‘জোসনা কেন বনবাসে’ নামে একটি ছবি উপহার দিতে চান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২২ বছর পর অঞ্জুর সঙ্গে দেখা করানোর সুযোগ করে দেয়ার জন্য শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানাই।

উল্লেখ্য, চলচ্চিত্রে সম্পৃক্ত হওয়ার আগে অঞ্জু ঘোষ মঞ্চে অভিনয় করতেন। তার আসল নাম অঞ্জলি ঘোষ। স্বাধীনতার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন তিনি। পরে ১৯৮২ সালে এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়। এই ছবিটি দিয়েই রাতারাতি তারকা বনে যান অঞ্জু ঘোষ। ১৯৮৬ সালে তার ক্যারিয়ার বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও তিনি ফিরে আসেন ভালোভাবে। ১৯৮৭ সালে অঞ্জু সর্বাধিক ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন। সে বছর তার সব ছবি সফলতা পায়। তার অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ অবিশ্বাস্য রকমের ব্যবসা করে নতুন রেকর্ড গড়ে। ১৯৯১ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে নতুনের আগমনে তিনি ব্যর্থ হতে থাকেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ছাড়েন অঞ্জু। তখন থেকেই কলকাতায় বসবাস করছেন এই নায়িকা। আগামীকাল সকালে কলকাতায় ফিরে যাবেন তিনি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।