রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
জয়ের পথে বাইডেন

 

ডেক্স রিপোর্ট : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট এবং হোয়াইট হাউজের পথে জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। জর্জিয়া এবং নিজের জন্মভূমি পেনসিলভেনিয়ার ভোটই বদলে দিয়েছে সাদা বাড়িতে কে যাচ্ছেন তার হিসাবনিকাশ। দুটো অঙ্গরাজ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন। ইতিমধ্যে বাইডেনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জোরদার করেছে সিক্রেট সার্ভিস। তার বাড়িতেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ির ওপর নো ফ্লাই জোন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনায় দেরি হওয়ায় সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ট্রাম্প বাইডেন সমর্থকদের পালটাপালটি বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। নিয়ে তীব্র উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে

হিসাব বদলে দিল দুই রাজ্য : বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জো বাইডেন ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন ২৫৩ টি এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ টি। তবে কিছু মিডিয়া অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ১১ টি ইলেকটোরাল ভোট হিসাব করে বাইডেনকে ২৬৪টি ভোট দিয়েছে। কিন্তু অ্যারিজোনায় বাইডেন এগিয়ে থাকলেও আগের চেয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে ভোটের ব্যবধান কমে আসছে। গবেষণা সংস্থা এডিসন রিসার্চের তথ্যানুযায়ী, পেনসিলভেনিয়ায় পপুলার ভোটে জিতলে বাইডেনের ঝুলিতে ২০ টি ইলেকটোরাল ভোট যুক্ত হবে। এতে তার মোট ইলেকটোরাল ভোট (২৫৩ টি হিসাবে) হবে ২৭৩ টি যেখানে হোয়াইট হাউজে যেতে প্রয়োজন ২৭০টি। বাইডেন জর্জিয়া, অ্যারিজোনা এবং নেভাদার যে কোনো দু’টোতে জয় পেতে পারেন বলে পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমেই বাইডেন হোয়াইট হাউজের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গেছেন।

বাইডেন পেনসিলভেনিয়ায় তার অবস্থান ধরে রাখতে পারলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচনের স্বপ্ন এখানেই ধসে পড়বে বলে মনে করা হয়। এই রাজ্যে জয়লাভ ছাড়া কোনভাবেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জয়ের জন্য ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাবেন না। এবার নির্বাচনের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল, পেনসিলভেনিয়াতেই আসলে নির্ধারিত হবে কে হোয়াইট হাউজের পরবর্তী বাসিন্দা হবেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেখানে বিজয়ী হয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে। এবারো নির্বাচনের রাতের ভোট গণনায় ট্রাম্প প্রায় ৫ লাখ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু ডাকযোগে আসা ভোট গণনার কাজ শুরু হওয়ার পর পেনসিলভেনিয়ায় তার সঙ্গে বাইডেনের ভোটের ব্যবধান কমে আসে। বাইডেন সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে। এর আগে নির্বাচনের ফল নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি রাজ্য জর্জিয়ায় বাইডেন ট্র্রাম্পকে পেছনে ফেলে ৯১৭ ভোটে এগিয়ে আছেন। যদিও জর্জিয়ায় ফের ভোট গনণা করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২১৪টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেছেন। ফের প্রেসিডেন্ট হতে চার অঙ্গরাজ্যের তিনটিতেই জয় পেতে হবে তাকে। আলাস্কা ও নর্থ ক্যারোলিনাতে (৩+১৫=১৮) জিততে চলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এই দুটিতে জিতলে ট্রাম্পের হবে ২৩২টি ইলেকটোরাল ভোট। এরপর তাকে অবশ্যই পেনসিলভেনিয়ায় (২০) জিততে হবে। এর সঙ্গে জিততে হবে জর্জিয়া (১৬) এবং অ্যারিজোনা (১১) কিংবা নেভাদার (৬) কোনো একটিতে। কিন্তু তিনি এই চার অঙ্গরাজ্যেই পিছিয়ে। তাই দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হওয়া ট্রাম্পের জন্য অনেকটাই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

ট্রাম্পের মিথ্যাচার, সম্প্রচার বন্ধ তিন মিডিয়ার : প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে ‘ভোট জালিয়াতি’র অভিযোগ তোলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় দেশটির তিনটি বৃহত্ টিভি নেটওয়ার্ক এবিসি, সিবিএস ও এনবিসি। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজে প্রমাণ ছাড়াই ‘কারচুপি’র অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। সে সময় টেলিভিশনের উপস্থাপকরা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেন।

এনবিসি নাইটলি নিউজের উপস্থাপক লেস্টার হল্ট বলেন, ‘আমাদের এখানে বাধা দিতে হবে। কারণ ভোটে জালিয়াতি হয়েছে—এমন বেশ কয়েকটি মিথ্যা বক্তব্য দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। যেগুলোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ এবিসির উপস্থাপক ডেভিড ম্যুরও সম্মেলনের মাঝখানেই দর্শকদের বলেন, ‘এখানে সত্যতা যাচাই করার মতো অনেক কিছু আছে।’

সিবিএস সংবাদদাতা ন্যান্সি কর্ডস ট্রাম্পের ‘ভিত্তিহীন বক্তব্য’ নিয়ে সম্মেলনের মাঝখানেই প্রায় ৯০ সেকেন্ড যুক্তিখ্লন করেন। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, সিএনএন ও ফক্স নিউজ ট্রাম্পের বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে। তবে সিএনএন, এমএসএনবিসি ও ফক্স নিউজের তুলনায় সম্প্রচার বন্ধ করা তিন টিভি নেটওয়ার্কেই বেশি দর্শক ছিলেন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ১৬টি টুইটের মধ্যে সাতটিকেই ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। চারটিতে রয়েছে ভিডিও। সর্বশেষ টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, টুইটার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সাইবার আইনের ২৩০ ধারা উপহার দেওয়ার মাধ্যমেই এটা সম্ভব হয়েছে! ট্রাম্পের এ ধরনের বক্তব্য সহিংসতায় উসকানি দিতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি গভীর সংকটের মুখে পড়তে পারে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার নাও করতে পারেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

সমর্থকদের শান্ত থাকতে বললেন বাইডেন : জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে সমর্থকদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন জো বাইডেন। শুক্রবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রে কখনো কখনো বিশৃঙ্খলা হয়। তাই সে সময় একটু ধৈর্য ধরা প্রয়োজন। এই ধৈর্য ধারণ আমাদের পুরস্কৃত করেছে। ২৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমরা যে শাসনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তা বিশ্ববাসী ঈর্ষার চোখে দেখে।’

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।