রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
এবারও এসএসসি-এইচএসসি অটোপাসের পথে!

শিক্ষা ডেক্স : দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। সরকার ন্যূনতম সিলেবাসের ওপর শ্রেণিকাজ শেষ করে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় দোটানায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এখন বিকল্প উপায় খুঁজছে সরকার। তবে শেষ পর্যন্ত এ দুই পাবলিক পরীক্ষার আয়োজন সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনার ডেল্টা বা ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যেভাবে গ্রাম থেকে শহরে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে করে এবারও এসএসসি ও এইচএসসি ‘অটোপাসের’ দিকেই যাচ্ছে।

এদিকে গতকাল রবিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্যে এ দুই পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবনার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগ অনেক বেশি। আমরা চেষ্টা করছি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে বিকল্প চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এজন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছি। টিভি, অনলাইন ও অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই, তোমরা বাসায় বসে নিয়মিত পড়ালেখা করে সিলেবাস শেষ করবে। তার সঙ্গে সুস্থ থাকতে হবে। জীবন থেকে এক বছর চলে গেলেও কিছু হবে না, তার চেয়ে সুস্থ থাকাটা বড় বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থার যে ক্ষতি হচ্ছে তা কাটিয়ে ওঠার জন্য নানা পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।’

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী প্রতিবছরের ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা হয়ে থাকে। এবার প্রায় ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীর এ দুটি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা। সরকার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে (কাস্টমাইজড) এ দুটি পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। সে অনুযায়ী এসএসসিতে ৬০ এবং এইচএসসিতে ৮৪ দিন ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ দুটি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়ার বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনায় যেন শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বেশি সংকট না হয় সেজন্য বিকল্প পদ্ধতিতে পড়ালেখা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো, এসএসসিতে ন্যূনতম ৬০ এবং এইচএসসিতে ন্যূনতম ৮৪ দিন ক্লাসের পর পরীক্ষা হবে। সেই অনুযায়ী স্কুলগুলোতে নির্দেশনাও গেছে। কিন্তু হঠাৎ করোনার ঊর্ধ্বগতিতে দফায় দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, তারা এ দুই পাবলিক পরীক্ষা নিতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। সম্প্রতি করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বেড়ে যাওয়ায় আবারও তারা করোনাসংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির পরামর্শ চেয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকদের চাপে তারা স্কুল খুলে দেওয়ার পরামর্শ চেয়েছে। কিন্তু কমিটি বলেছে, সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে না এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে না। ফলে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে।

এদিকে এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও উদ্বেগের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। পরীক্ষা হবে কী হবে না, কীভাবে হবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন তারা। তবে জনস্বাস্থ্যবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা। আরও বেশি বিপাকে রয়েছে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। কারণ গত দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ কাজ হারিয়েছে। আর তাদের পরিবারের শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। শহরাঞ্চলে অনলাইনে বা দূরশিক্ষণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে সেটি হয়নি। আবার বিত্তশালীরা বাসায় শিক্ষক রেখে সন্তানদের পড়িয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অনলাইন বা টেলিভিশন পাঠদানের সুযোগ পায়নি। এ ক্ষেত্রে বেশি বঞ্চিত হয়েছে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা। তাই লেখাপড়া করিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। স্কুল না খুলতে পারলে পরীক্ষা নিলে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা থাকবে। তারা সরকারের সমালোচনা করে বলেন, যখন করোনার প্রকোপ কম ছিল তখন থেকেই মন্ত্রণালয়ের ধাপে ধাপে বড় ক্লাসগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল।

একজন শিক্ষাবিদ ও গবেষক বলেন, এটা এখন জটিল হয়ে গেছে। সারা দেশে তিন সহস্রাধিক কেন্দ্রে পরীক্ষা নিতে হবে। ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ঝুঁকি বাস্তবসম্মত নয়।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি চলছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গত ১৫ মাসে এখন পর্যন্ত তিন ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনাও পাঠানো হয়। কিন্তু সংক্রমণ ফের ঊর্ধ্বগতি লাভ করায় প্রথম দুবারই উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। সর্বশেষ গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী। সেদিন তিনি ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা বলেন। ওইদিন করোনা নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। আর বৃহস্পতিবার এ হার পাওয়া যায় ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা বুধবার ছিল ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংক্রমণ এখন মফস্বলে। সংক্রমণের হার ৫-এর নিচে না নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেওয়ার বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পরামর্শ আছে। অপেক্ষা করতেই হবে। ছাত্রছাত্রীদের ঝুঁকিতে ফেলা ঠিক হবে না।’

ওই কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভাগ বা অনুষদভিত্তিক পরীক্ষা হয়। সেখানে কয়েকশ পরীক্ষার্থী থাকে।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ৬০-৭০ জনও পরীক্ষার্থী থাকে। তাদের পরীক্ষা নেওয়া যত সহজ, ২০-২২ লাখ পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে তত সহজ নয়। আর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হাওর-চরাঞ্চলেও আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবার জন্য বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট বা ওয়াইফাই নিশ্চিত করাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া কম্পিউটার বা ল্যাপটপও সবার নেই। ফলে এত বড় পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার বিষয়টি চিন্তারই।’

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস নেওয়ার লক্ষ্যে মূল সিলেবাস কাটছাঁট করা হয়েছে। ওই সিলেবাসের ২৫-৩৫ শতাংশ রেখে তৈরি করা হয়েছে কাস্টমাইজড সিলেবাস। এটি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষার প্রশ্ন কাঠামো ঠিক থাকবে। এছাড়া আগামী বছরের (২০২২) শিক্ষার্থীদের সিলেবাসও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তাদের প্রশ্নকাঠামোতেও পরিবর্তন আসবে।

অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতিও বোর্ডগুলো এগিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বোর্ডে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শেষে পরিশোধনের কাজ চলছে। এসব শিক্ষার্থীর এখন পর্যন্ত অবশ্য ফরম পূরণের কাজ শুরু করেনি শিক্ষা বোর্ডগুলো।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।