রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সিএএবি : ৫ কোটি টাকার ঠিকাদারি  কাজের ‘ফেল্ট’ পরিদর্শনে ৩ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ খরচ ৪০ লাখ টাকা!

একুশে বার্তা রিপোর্ট :  গত ৯ নভেম্বরের সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি থরচে  বিদেশ ভ্রমণ নিষেধ আরোপিত হওয়ার পর ঠিকাদারের খরচে বিদেশ ভ্রমন যাচ্ছেন সিভিল এভিয়েশনের ৩ কর্মকর্তা। ৭ দিনের এ ভ্রমণে  ৩ কর্মকর্তার বিদেশে যাওয়া-আসা. থাকা-খাওয়াসহ সব মিলে ঠিকাদারেরর খরচ হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। আর ঠিকাদারের ঠিকাদারি কাজের এস্টিমেট ৫  কোটি টাকা। প্রশ্ন ওঠেছে ৫ কোটি টাকার কাজে ৪০ লাখ টাকা ৩  কর্মকর্তার বিদেশে ভ্রমণে খরচ হলে কাজের মান কি যুতসই হবে।

জানা যায়, বরিশাল বিমানবন্দরের উন্নয়নমূলক কাজের পণ্যের মান যাচাই করতে এই ৩ কর্মকর্তা  বিদেশে যাবেন। এরা হলেন,  তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী(ই/এম) শুভাশিষ বড়ুয়া, তিনি যাচ্ছেন রোমানিয়া। বেবিচকের একজন প্রতিনিধি এক্সরে মেশিনের মান যাচাইয়ের জন্য যাবেন তুরস্ক, আর এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম দেখার জন্য মালয়েশিয়াতে যাবেন ই/এম শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলাম সুজন। তারা প্রত্যেকেই আগামী সেপ্টেম্বরে বিদেশে যাবেন,  ৭ দিন অবস্থান করবেন। তাদের সব খরচ বহন করবে  ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতিক কন্সট্রাকশন।

গত মাসে এই তিন কর্মকর্তাকে ছুটি দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। জানা গেছে, বেবিচকের প্রতিনিধি হিসেবে তুরস্ক যাচ্ছেন সহকারী পরিচালক (সিএনএস) দেবব্রত বর্মা।

বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বরিশাল বিমানবন্দরের ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম, এয়ার কন্ডিশনিং, ডিপারচার কনভেয়ার বেল্ট, পিএ, ফায়ার এলার্ম সিস্টেম অ্যান্ড ইন/সি সিভিল ওয়ার্কস কর্তৃপক্ষের কাজের স্বার্থে তিন কর্মকর্তার বিদেশে ‘ফ্যাক্টরি এক্সেপ্টেন্স টেস্ট (ফ্যাট) অ্যান্ড কোয়ালিটি এসুরেন্স ডিসকাশন’-এ অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। তাদের বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বহন করবে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গত বছরের ১২ মে একটি পরিপত্র জারি করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর এক আদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের শর্ত কিছুটা শিথিল করে সরকার। সীমিত আকারে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে আদেশ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর ৯ নভেম্বর আবারও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। সর্বশেষ গত ৩১ মে সরকারি ব্যয়ে আকাশ পথে বিজনেস ক্লাসে (প্রথম শ্রেণি) বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই তিন কর্মকর্তা সরকারি খরচে বিদেশে যাচ্ছেন না। তাই কোনো সমস্যা নেই।

সূত্রের দাবি, আতিক কন্সন্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে ৫ কোটি টাকায়। তিন কর্মকর্তার বিদেশে আসা-যাওয়া এবং থাকা-খাওয়া মিলিয়ে খরচ হতে পারে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। মাত্র ৫ কোটি টাকার কাজের জন্য ৩ কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণের পেছনে এভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ হলে কাজের মান কতটা উন্নত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেটাকে পাশ কাটিয়ে ঠিকাদারের খরচে বিদেশ যাচ্ছেন।

বিদেশ  ভ্রমণের ফলে দেশের ডলার বিদেশে খরচ হওয়াকে বাঁকা চোখে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, সমস্যায় জর্জরিত বরিশাল বিমানবন্দর নানা জটিলতায় আধুনিক হয়নি। বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। বিমানবন্দর এলাকায় নদী ভাঙন, ত্রুটিপূর্ণ বাউন্ডারি ওয়াল, গ্রেড অনুযায়ী রানওয়ে না থাকা, নাজুক টার্মিনাল বিল্ডিং, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং লোকবলের স্বল্পতাসহ রয়েছে নানা সমস্যা। সবমিলিয়ে জোড়াতালি দিয়ে ঝুঁকির মধ্যেই বিমানবন্দর পরিচালনা করছেন কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এসব নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। আইকাওর নির্দেশনা অনুযায়ী রানওয়ে নির্মাণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের ম্যাপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলছে নানা উন্নয়নমূলক কাজ।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।