মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ব্যাংকে বসে ব্যক্তিগত ডলার ক্রয়-বিক্রয় : ব্যাংকের ভলিয়মে ওঠে না বিমানবন্দরে ডলার বেচাকেনায় অনিয়ম-দুর্নীতি: হুন্ডি ব্যবসা জমজমাট

একুশে বার্তা রিপোর্ট : হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থি বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা, বুথ এবং মানি এক্সচেন্ঞের বিরুদ্ধে  বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিমানবন্দরের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখা, বুথ ও মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানে এসব অনিয়ম হচ্ছে। এগুলোতে ব্যাংকিং নিয়ম-কানুন মেনে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে না। উলটো কিছু ব্যাংকার ও অসাধু একটি চক্র নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনা করছে। এ কারণে প্রবাসী বা বিদেশিদের বিক্রি করা ডলার দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। এগুলো বেআইনিভাবে বিক্রির মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে ডলার পাচারের একটি চক্র গড়ে ওঠেছে। তারা প্রকাশ্যেই এসব কাজ করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত টিম বার বার তদন্ত করলেও এ অনিয়ম রোধ করা যায়নি। বেশ ক’জন ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেফতার হলেও অবৈধ ডলার ব্যবসা থেমে নেই। এসব অনিয়মের জন্য সোনালি ব্যাংকের  এজিএম শামীমকে বদলি করা হয়েছে। তিনি তার এলাকার দু;জনকে গার্ড পদে চাকরি দিয়ে গেছেণ্ একজন তার আত্মীয়, অন্যজন এলাকার লোক।একজনের নাম রমিস।

জানা গেছে, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা ও একাধিক মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী এভাবে বেআইনি ডলার ব্যবসা করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। এই খাত থেকে সিন্ডিকেটের প্রতিদিন গড়ে ২-৩ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। আর এই অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে মাসে ৫০ কোটি টাকার বেশি অর্থ সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, এই চক্রের কারণে প্রবাসীদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত ডলার বা বিদেশি মুদ্রা সরকারের খাতায় যোগ হচ্ছে না। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করলেও তাদের যথাযথ বিল-ভাউচার দিচ্ছে না। গড়ে প্রতিটি ব্যাংক, বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ প্রবাসীর কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করলেও যথাযথ বিল-ভাউচার দিচ্ছে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ জনকে। বাকিদের দিচ্ছে না। সম্প্রতি একটি সরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে এ ধরনের একটি অভিযোগ করা হয়েছে। সম্প্রতি ১৫ জন প্রবাসী নাগরিক ঢাকায় এসে এ ধরনের অনিয়মের মুখে পড়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে ব্যাংক কর্মকর্তার নামসহ অভিযোগ দাখিল করেছেন। এতে তারা বলেছেন, তাদের কাছ থেকে ডলার ও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করলেও সঠিক ভাউচার দেওয়া হয়নি। তারা ভাউচার দিতে চাপাচাপি করলে ভুয়া বিল-ভাউচার দেওয়া হয়।

জানা গেছে, বিমানবন্দরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব অর্থে বৈদেশিক মুদ্রা কেনার কথা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের টাকা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা না কিনে তাদের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়ে তা কিনছেন। পরে এগুলো চড়া দামে বিক্রি করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। এভাবে নিজদের টাকা দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করছেন। যে কারণে এগুলো সরকারি হিসাবে জমা হচ্ছে না। এসব ডলার পরে তারা বিদেশে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি বা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা অনেকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি করে টাকা নিয়ে থাকেন। আবার অনেকে বিদেশে যাওয়ার সময় ডলার বা অন্য বৈদেশিক মুদ্রা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এগুলোর বেশিরভাগই বৈধভাবে বেচাকেনা হয় না বলে ব্যাংকের খাতায় জমা হচ্ছে না। ফলে এগুলো হুন্ডি হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

বিমানবন্দরের বাইরেও এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারা বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে ডলার কেনে ও বিদেশে যাওয়া যাত্রীদের কাছে ওইগুলো চড়া দামে বিক্রি করে। প্রকাশ্যেই বেআইনিভাবে এসব ডলার বেচাকেনা হচ্ছে। ফলে প্রবাসী বা বিদেশিদের মাধ্যমে যেসব বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে সেগুলো ব্যাংকে জমা না হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। বিমানবন্দরে বহির্গামী ও অন্তর্গামী যাত্রীদের নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার জন্যই ব্যাংক ও মানি চেঞ্জার্স প্রতিষ্ঠানের শাখা ও বুথ খোলা হয়েছে। কিন্তু তারা বৈধভাবে সেই সেবা না দিয়ে নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনা করছেন।

এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তদন্তে বিমানবন্দরের বেশিরভাগ ব্যাংকে বেআইনিভাবে ডলার বেচাকেনার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগে এক যোগে সরকারি ব্যাংকের সব শাখার সব কর্মকর্তাকে বদলির নজিরও রয়েছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।