রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা : বিএনপির আমলে দেশ ৫ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে

একুশে বার্তা প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির শাসনামলে দেশ পাচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বিএনপি’র সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং ৫ বছরের দুঃশাসনের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের এই অপকর্মের জন্য তারা জনগণের ভোট পাবে না। গুম প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশেও গুম হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ তাদের ভোট দিয়ে আবার আপদ টেনে নিয়ে আসবে এবং মানুষের জীবনকে আবার দুর্বিষহ করে তুলবে? মোটেই না।

আমার এ দেশের মানুষের প্রতি বিশ্বাস আছে অন্তত যাদের বিবেক আছে তারা এদের কোনদিনই ভোট দেবে না।

তিনি বিএনপি’র উদ্দেশ্যে বলেন, কাজেই ঐ স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আর বড় বড় কথা বলেও লাভ নেই। মানুষ শান্তি চায়, মানুষ উন্নতি চায়।

সরকার প্রধান বলেন, ‘মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের সত্যিকার উন্নতি হয় এবং উন্নতি হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় সংসদের ১৮তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে একথা বলেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে অারো বলেন, আজকে আমাদের আরেকটি দল যারা নির্বাচনে আসে নাই। রাস্তায় রাস্তায় তারা চিৎকার করে বেড়াচ্ছে আমাদের সরকারকে তারা নাকি একেবারে টেনেই নামাবে।

তিনি বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সদস্য এবং সকল সরকারের সময়ে মন্ত্রী থাকার কৃতিত্বের অধিকারী জনৈক রাজনৈতিক নেতার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এমন এক নেতার মুখ থেকে কথাটা আসলো সে ভদ্রলোকের নাম আমি নিতে চাই না। কিন্তু তার চরিত্রটা কি? ছাত্রজীবনে করেছেন এক রাজনীতি, পরে টানা সময় নানা রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং রাষ্ট্রপতি থেকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে মন্ত্রী হলো। এরপর থেকে যখনই যে দল ক্ষমতায় সে মন্ত্রী থাকে। তার একটা বড় গুণ যখনই যে সরকারে তখনই সে মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, সেই রাজনীতিবিদ একজন বিদেশির বাড়ি দখল করে রেখেছিলেন এবং পরে কোর্টে মামলা করে সে বাড়িও হারালেন। সেখানেও প্রতারণা- মৃত ব্যক্তির নামের পাওয়ার অব এ্যাটর্নী নিয়ে নিজের ভাইয়ের নামে বাড়ি করে নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আবার ঘোষণা দেন আমাদের সরকারকে নাকি তিনি ক্ষমতা থেকে টেনেই নামাবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, যিনি মাটিতে এমনিতেই পড়ে আছেন, সে আবার কাকে কিভাবে টেনে নামাবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐ নেতার নেত্রী (খালেদা জিয়া) অবশ্য ২০১৫ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না। ৯২দিন হাজার হাজার জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ব্যক্তিগত এবং সরকারি গাড়ি, বাস, সিএসজি, লঞ্চ, ট্রেন পুড়িয়েছে। এখনও পোড়া ঘা নিয়ে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৫ সালে ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারকে পর্যন্ত হত্যা করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র আমরা করেছি তারা পুড়িয়ে দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারকে হত্যা করেছে। ২৭ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র সরকার উৎখাত করবে এবং ক্ষমতায় যাবে এই লোভে তারা জনগণের যে ক্ষতিটা করলো এরপর জনগণ যখন তাদের বাধা দিল সেই বাধায় কোর্টে গিয়ে মামলার হাজিরা দিয়ে ঘরে ফিরে গেল। সরকার তো আর উৎখাত করতে পারলো না।

তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন যারা এভাবে মানুষ খুন করেছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এফবিআই’র তদন্তে যে নেত্রীর ছেলেদের মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, যে নেত্রী নিজে এতিমদের টাকা মেরে খেয়েছেন। দুর্নীতিতে যাদের আগামাথা মোড়া ছিল। যারা দেশে বাংলা ভাইসহ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশে যারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, মানুষ ঘরে ঘুমাতে পারেনি, নিজের ঘরে থাকতে পারেনি। রাতারাতি বসতবাড়ি কেড়ে নিয়ে সেখানে পুকুর কেটেছে, শাহ এএমএস কিবরিয়া এমপি, আহসান উল্লাহ মাষ্টার এমপিকে হত্যা করেছে, আমার ওপর গ্রেনেড হামলা করেছে, সেখানে আইভী রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, যাদের ব্যবসাটা হচ্ছে চোরাচালান, অস্ত্র চোরাচালান করা, যাদের ১০ ট্রাক অস্ত্র পর্যন্ত ধরা পড়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, যাদের এতগুণ জনগণ তাদের ভোট দেবে কেন? তারা ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখে কিভাবে?

তিনি বলেন, যারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তাদের সময়ে ৫ বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে- ঐ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের জনগণ কেন ভোট দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ তাদের ভোট দিয়ে আপদ টেনে নিয়ে আসবে এবং মানুষের জীবনকে আবার দুর্বিষহ করে তুলবে? মোটেই না। আমার এ দেশের মানুষের প্রতি বিশ্বাস আছে অন্তত যাদের বিবেক আছে তারা এদের কোনদিনই ভোট দেবে না। কাজেই ঐ স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। আর বড় বড় কথা বলেও লাভ নেই। মানুষ শান্তি চায়, মানুষ উন্নতি চায়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের সত্যিকার উন্নতি হয় এবং উন্নতি হবে। কারণ মানুষের এখন জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তারা এখন সুন্দরভাবে বাঁচতে চায়। প্রত্যেকের সুন্দরভাবে জীবনযাপনের সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি। গুম প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশেও গুমের ঘটনা ঘটে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালের একটি হিসাবে ব্রিটেনে ২ লাখ ৭৫ হাজার ব্রিটিশ নাগরিক গুম হয়ে গেল। তার মধ্যে ২০ হাজারের কোনো হদিসই পাওয়া গেল না। আমেরিকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। এইটুকু ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে এত মানুষের অবস্থান। তাদের সেবা ও আর্থসামাজিক উন্নতি আমরা করে যাচ্ছি। অথচ এই উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কত। তাদের সব কিছু আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, তারপরও সেই দেশে এত লোক গুম হয়, তার খোঁজ পাওয়া যায় না। সেই তুলনায় আমরা অবস্থা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে রেখে যখন কোনো ঘটনা ঘটছে সঙ্গে সঙ্গে খোঁজ নিচ্ছি।’

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।