শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ : স্ক্যানিং মেশিনে ৪ কোটি টাকার কাজ ২৯ কোটি টাকায় বরাদ্দ

একুশে বার্তা ডেক্স : সমুদ্র বন্দরে জাহাজে থেকে আগত অবৈধ  বৈদেশিক মালামাল, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং  বিস্ফোরক যাতে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য নিয়মিত স্ক্যানিং অপারেশন (পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করা) বহুল প্রচলিত একটি পদ্ধতি। সমুদ্র বন্দরে স্ক্যানিং একটি স্পর্শকাতর বা দুরূহ কাজ। মূলত স্ক্যানিং-এর কাজ হলো মিস ডিকারেশন বা ভুল কিংবা মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে জাহাজে অনুপ্রবেশ ও তাতে বিস্ফোরকের উপস্থিতি আমদানি করা হয়েছে কিনা তা খুটিয়ে পরীক্ষা করা। এর ব্যত্যয় ঘটলে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। সবচেয়ে বিপদের দিক হলো এ স্ক্যানিং থেকে কন্টেইনারগুলো একবার ছাড়া পেয়ে গেলে এদের পুনরায় পরীক্ষা করার সুযোগ প্রায় থাকে না বললেই চলে। তা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এ সূè কাজের জন্য বেসরকারি অপারেটরদের উপর নির্ভর করছেন। কারণ এ কাজ করতে নিজেদের একটি স্থায়ী স্ক্যানিং বিভাগ প্রতিষ্ঠায় তারা ব্যর্থ। বন্দর সূত্রগুলো জানিয়েছে পক্ষান্তরে এ প্রক্রিয়ার কারণে সরকারের বিপুল অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে এবং এর পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলছে। : ২০০৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মিস ডিকারেশন বা ভুল ঘোষণার মাধ্যমে জাহাজে অনুপ্রবেশ এবং অস্ত্র ও গোলা-বারুদের চোরাচালান রোধে সকল কনটেইনারকে স্ক্যানিং করা বাধ্যতামূলক (ম্যানডেটরি) করে। এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সে সময় স্ক্যানিং-এর ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা ঐ বছর সেপ্টেম্বরে এসজিএস নামে একটি বেসরকারি সুইস কোম্পানীকে বছরে ১২ দশমিক ২৩ কোটি টাকায় এ কাজের জন্য ভাড়া করে। তাতে একটি শর্ত ছিল যে, ৬ বছরের এই চুক্তির মেয়াদে কোম্পানিটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কর্মকর্তাদের স্ক্যানার অপারেশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেবে। : বন্দরে অনেক  প্রবশ পথ থাকলেও ৪টি স্ক্যানার পরিচালনা করতে অপারেটরের সংখ্যা বা লোকবল ছিল ৬৩ জন। অবশ্য এ সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে যান। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এ স্ক্যানারগুলোর কাজ ম্যানেজ করার জন্য সেভাবে ক্ষমতা গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন। : পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সুইস কোম্পানি এসজিএস-এর সাথে আরো ৩ বছরের জন্য ২টি পর্বে চুক্তি সম্প্রসারণ করে যা গত ২২ এপ্রিল ঐ একই ফলাফল নিয়ে শেষ হয়। : চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সম্প্রতি ফাইভ আর এ্যাসোসিয়েটস নামে একটি নতুন ফার্মকে এ কাজ দিয়েছে। এ কোম্পানিকে বছরে ২৮ দশমিক ৮৬ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে। একটি চীনা কোম্পানির লোকাল ডিস্ট্রিবিউটার ফাইভ আর এসোসিয়েটস এর গত সোমবার থেকে এ কাজ শুরু করার কথা। : মজার ব্যাপার হলো চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ইতিমধ্যে এক খসড়া প্রস্তাবে বলেছে এই একই কাজ মাত্র ৪ কোটি টাকায় করা যেতে পারে যা বেসরকারি কোম্পানিগুলো অর্থ চাহিদার চেয়ে ২৫ কোটি টাকা কম। এ জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ১৮৫ জন লোকবল ও বন্দরের প্রবেশ পথে ১২ টি স্ক্যানারসহ একটি স্থায়ী  স্ক্যানিং বিভাগ স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। : এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪টি স্ক্যানার মেশিন রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ গত বছর ২ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে প্রস্তাবটি পাঠায়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। ইতিমধ্যে এসজিএসর সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে স্ক্যানিং অপারেশনের জন্য টেন্ডার আহবান করে। অন্তত ৭টি কোম্পানি এ টেন্ডারের কাগজপত্র সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২টি ফার্ম টেন্ডার জমা দিয়েছে। এগুলো হলো ফাইভ আর এ্যাসোসিয়েটস এবং এনসিএসএল। অবশ্য সুইস কোম্পানি এসজিএস টেন্ডার জমা দেয়নি। ফার্মটি এই মর্মে অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য টেন্ডারের কয়েকটি শর্ত শিথিল করেছে। এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে ফাইভ আর এ্যাসোসিয়েটস এর নাম এ কাজের জন্য সুপারেশ করেছে। এ সুপারিশের ৩ দিন পর এসজিএস এ নিয়োগ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ তুলে হাউকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছে। আগামী ২৫ মে এর শুনানি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। : এসজিএস এর অপারেশন ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন ‘এত বছর পর চট্টগ্রাম হাউজ কাস্টম এ কাজের জন্য তাদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই। যদি তাই হয় তা’ হলে কাস্টম হাউজ ৯ বছর আগে এ কাজ করতে পারতো অথবা এখন তা করতে পারে’। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন ‘তা হলে এখন কেন স্ক্যানিং এর জন্য অন্যদের উপর নির্ভর করছে। : জবাবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এসজিএস-এর দাবি ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করে পাল্টা তারাও একটি রীট করেছেন। পক্ষান্তরে এসজিএস পরিচালনা কমিশনে একটি অভিযোগ পত্র দায়ের করলেও কমিশন ফাইভ আর এ্যাসোসিয়েটসকে কাজ দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উদ্যোগের অনুকূলে মত দিয়েছেন। : এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার একেএম নূরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের বর্তমান লোকবল নিয়ে এ কাজ (স্ক্যানিং) করা সম্ভব নয়। আমাদের স্থায়ী নিবেদিত স্টাফ না থাকলে এ কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যাতে এ কাজ ভবিষ্যতে নিজেরা করতে পারি সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।