সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
আখেরি জুমায় বিদায় মাহে রমজান

হাফেজ মুফতি তানজিল আমির :  আজ জুমাতুল বিদা। রমজান মাসের আখেরি এ জুমার মাধ্যমে অনেকটাই বিদায় জানানো হবে পবিত্র এ মাসকে। আজ সন্ধ্যায় যদি শাওয়ালের চাঁদ ওঠে, তাহলে হতে পারে আজই রোজার শেষ দিন। বিচ্ছেদের রক্তক্ষরণ চলছে তাই মুমিন হৃদয়ে।

আল্লাহতায়ালা প্রিয় বান্দাদের ভালোবেসে বিশেষ এ মাসটি উপহার দিয়েছিলেন, মহান রবের উপহার থেকে আমরা কতটুকু উপকৃত হতে পেরেছি, সে হিসাব মেলানোর আজই শেষ সুযোগ। দুই নয়নে অশ্র“ ঝরিয়ে ক্ষমা ও রহমত অর্জনের বড় সুযোগ জুমাতুল বিদা।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন কদরের রাত হয়, তখন জিবরাঈল (আ.) ফেরাশতাদের দলসহ অবতীর্ণ হন এবং আল্লাহর প্রত্যেক এমন বান্দার জন্য দোয়া করেন, যারা দাঁড়িয়ে বা বসে আল্লাহর জিকির-বন্দেগি করতে থাকেন। যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাদের কাছে তাদের ব্যাপারে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! যে শ্রমিক তার কার্য সম্পন্ন করেছে, তার প্রতিদান কী হতে পারে? ফেরেশতারা জবাবে বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! তার পারিশ্রমিক পুরোপুরি দেয়া হচ্ছে। তখন আল্লাহ বলেন, হে আমার ফেরেশতাগণ! আমার যে বান্দা তাদের ওপর অর্পিত আমার ফরজ যথাযথভাবে পালন করেছে, অতঃপর তারা (নিজের ঘর থেকে ঈদগাহের দিকে) উচ্চৈঃস্বরে দোয়া করতে করতে বের হয়েছে- আমার ইজ্জত ও সম্মানের কসম, আমি নিশ্চয় তাদের দোয়া কবুল করব। তারপর তিনি বলেন, (হে বান্দাগণ!) তোমরা ফিরে যাও। আমি তোমাদের ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের পাপগুলোকে পুণ্য দিয়ে পরিবর্তিত করে দিলাম। রাসুল (সা.) বলেন, তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে। (বায়হাকি)।

রমজান ও রোজার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে তাকওয়া বা খোদাভীতির যোগ্যতা অর্জন করানো। তাকওয়ার অর্থ হল, যেসব জিনিস থেকে, যেসব কাজকর্ম থেকে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন, সেসব থেকে বেঁচে থাকা। এসব জিনিসের কল্পনাও যদি চলে আসে, তবে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা। পক্ষান্তরে যেসব জিনিসের হুকুম তাঁরা দিয়েছেন, সেসব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলা।

কাজেই আমরা যেভাবে রমজানে একমাত্র আল্লাহর নির্দেশে দিনের বেলা হালাল এবং পবিত্র জিনিসগুলো বর্জন করেছি, তাহলে ওই আল্লাহর হুকুম অমান্য করে রমজানের বাইরের দিনগুলোয় কীভাবে গুনাহে লিপ্ত হব? আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াব? কেন আমরা মিথ্যা বলব? কেন আমরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেব? কেন আমরা মানুষের মনে কষ্ট দেব? কেন অপরের হক নষ্ট করব? কেন মানুষের অধিকার হরণ করব? কেন জুলুম করব? কেন আমরা অন্যের রক্ত ঝরাব? মোটকথা, যত খারাপ বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়- এটিই তাকওয়া।

প্রিয় পাঠক, রমজান আসে রমজান যায়। ভেবে কি দেখেছি কতটা ভরেছে আমার পাত্র? রমজানের পরিণতি কি কেবলই ঈদুল ফিতর। নাকি এরপরও কিছু বাকি থাকা উচিত। প্রতিটি ঈদের দিন আমাদের সবাইকে ভেবে দেখা জরুরি যে, আমলের ভিত্তিতে সত্যিই কি আমরা আনন্দ উদযাপনের অধিকার লাভ করেছি?

ঈদুল ফিতর মূলত রমজানের প্রশিক্ষণ কোর্সে সফলতা লাভের পুরস্কার। তাই হাদিসে এ দিনকে ‘ইয়াওমুল জায়িজাহ’ বা ‘পুরস্কার দিবস’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। ঈদুল ফিতর আমাদের পর্যবেক্ষণ করার আহ্বান জানায় যে, আমরা আমল ও আখলাকের এ প্রশিক্ষণ কোর্সে সত্যিই সফলতা লাভ করেছি কি না? সত্যিই কি আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে? আমরা কি বান্দার হক বুঝতে শিখেছি? আমাদের অন্তরে আমানতদারি, সাধুতা, সংযম ও কর্মপ্রেরণা সৃষ্টি হয়েছে? আমাদের অন্তরে দেশ ও জাতির কল্যাণ ও উন্নতি সাধনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে? ঈদগাহের নামাজের সারিতে আমাদের যেমন এক দেহ ও এক প্রাণ দেখা যায়, তেমনি পরস্পরের কলহ-বিবাদ মিটিয়ে ঐক্য স্থাপনের সংকল্প কি আমরা করতে পেরেছি? স্থিরচিত্তে বসে ইনসাফের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করার পর যদি এসব প্রশ্নের কিংবা এর মধ্য থেকে কিছু প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়, তাহলেই ঈদ আমাদের জন্য আনন্দদায়ক ও মোবারক হবে। সার্থক হবে ‘ঈদ মোবারক’ অভিবাদন বলা।

হে আল্লাহ, ঈদ আনন্দ এই জাতিকে দান করুন বারবার। ঈদের খুশি ছড়িয়ে দিন জমিনজুড়ে।

সব রোজাদার ভাইবোনকে সালাম ও ঈদের শুভেচ্ছা।

লেখক : তরুণ আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।