সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:০১ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস

একুশে বার্তা ডেক্স :   বিরোধী দল জাতীয় পার্টির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে নতুন ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট পাস হয়েছে। বৈষম্য দূর করে টেকসই উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার টাকা ব্যয়ের অনুমোদন নিতে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৮ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে কন্ঠভোটে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। এরআগে মঞ্জুরি দাবির উপর আলোচনার সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা শিক্ষাখাতে অনিয়ম-দূর্নীতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যর্থতা, জনগনের স্বাস্থ্য সেবা সংকট, দূর্যোগ মোকাবেলা প্রস্তুতির অভাব ও রেলখাতের অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেন।

২৮ জুন  বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ সরকারী বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যের উপস্থিতিতে অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি বিপরীতে ৪৪৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব আনা হয়। সরকার ও বিরোধী দলের হুইপের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৫টি মঞ্জুরি দাবি আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, নূরুল ইসলাম ওমর, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, নূরুল ইসলাম মিলন, সেলিম উদ্দিন ও বেগম রওশন আরা মান্নান এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।

দীর্ঘ প্রায় চার ঘন্টা আলোচনা শেষে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পাস হয়। এরআগে আলোচনা শেষে মঞ্জুরী দাবিগুলো কন্ঠভোটে সংসদে গৃহীত হয়। এরপর অর্থমন্ত্রী ‘নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৮’ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে সর্বসম্মতিতে তা পাস হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারী দল ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্য টেবিল চাপড়িয়ে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট বাস্তবায়নের যাত্রাকে স্বাগত জানান। বাজেট পাসের পর অর্থমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় আয়োজিত নৈশভোজে যোগদানের জন্য সকল সংসদ সদস্যকে আমন্ত্রণ জানান। এরপর স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী ২ জুলাই সোমবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত মূলতবি করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রা’ শিরোনামে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা গত ১০ জুন থেকে শুরু হয়। গত ২৭ জুন বুধবার সংসদ নেতা ও প্রধামন্ত্রী শেষ হাসিনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সাধারণ আলোচনা শেষ হয়। প্রায় ৪৫ ঘন্টার এই আলোচনায় সরকারী দলের ১৬৫ জন ও বিরোধী দলের ৪২ জন সদস্য অংশ নেন। এরপর বুধবার সংসদে অর্থবিল-২০১৮ পাস হয়। যে বিলে কর-সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নির্দ্দিষ্টকরণ বিল পাসের মাধ্যমে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ৫ লাখ ৭১ হাজার ৮৩৩ কোটি ৮২ লাখ ৯২ হাজার টাকার মধ্যে সংসদের ওপর দায় এক লাখ ৪৬ হাজার ১৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এই টাকা অনুমোদনের জন্য কোন ভোটের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি সংসদ এই টাকা অনুমোদন করে। অবশিষ্ট ৪ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ভোটের মাধ্যমে সংসদে গৃহীত হয়।

সংসদে পাসকৃত এই বাজেটটি মুলত গ্রস বাজেট। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও অন্যান্য খাতে বাজেটে সরকারের কিছু অর্থ বরাদ্দের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যা কখনও ব্যয় হয় না। যা বাজেটের আয় ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে হিসাবে মেলানো হয়। এই বাধ্যবাধকতার কারণে এবারের বাজেটেও এক লাখ ৪৬ হাজার ১৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বাজেটে অতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা ব্যয় হবে না। পহেলা জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী যে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেটাই ব্যয় হবে। সেটাই আগামী অর্থবছরের নীট বাজেট।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিরোধীতা করে বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি চলছে। আড়াই লাখ থেকে ৫ লাখ টাকায় জিপিএ-৫ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে দেখা গেছে। কোচিং ব্যবসা এখনো চলছে। আর এমপিওভূক্ত না করায় সংসদ সদস্যরা প্রায়শঃই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দের দাবি কমিয়ে এক টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। শিক্ষার মান অবশ্যই বৃদ্ধি পেয়েছে। জিপিএ-৫ বিক্রির কথা সঠিক নয়। একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এটা বলা হয়েছে। এই অভিযোগ আসার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে তিনি বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।

স্বাস্থ্যখাত : ॥ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য সেবা মৌলিক অধিকার হলেও সেই অধিকার সকলে পাচ্ছে না। প্রত্যন্ত এলাকার সুচিকিৎসা নেই। সরকার চিকিৎসক দিলেও তারা এলাকায় থাকেন না। অনেক স্থানেই আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। আবার বেসরকারী মেডিকেল কলেজগুলো রমরমা ব্যবসা করছে। অযোগ্য লোকদের দ্বারা অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও ডায়াগোনিষ্টিক সেন্টার বাণিজ্য করছে। অথচ এই খাতে বরাদ্দ খুবই কম। তারা বলেন, সকলের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করতে হবে। যার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। গরীব ও নি¤œবিত্তদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা চালুর দাবি জানান তারা।

জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্যখাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে বলেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের এই খাতে সক্ষমতার বিষয়টি বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগনের দৌড় গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক দিক নির্দেশনার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

সদস্যদের নানা প্রশ্ন ও সমালোচনার জবাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্ধের ক্ষেত্রে আমরা নেপাল ও ভূটানের চেয়ে পিছিয়ে আছি। তারপরও আমরা দেশের মানুষকে স্বাস্থ্য সেবায় প্রদানে আপ্রাণ চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। আমরা দেশের মানুষকে প্রায় বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বে কোথাও এখন আর বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেয়া হয় না।

স্বাস্থ্য বীমা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের দুটি স্থানে পরীক্ষামুলক স্বাস্থ্য বীমা চালু হয়েছে। এটি অত্যন্ত সফল হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বরাদ্দ পেলে এই বীমা সুবিধা আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।

বেসরকরি মেডিক্যালের শিক্ষার মান প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা বেসরকারি মেডিক্যাল কলের শিক্ষার মান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছি। যে সকল মেডিক্যাল কলেজে লাইব্রেরি নেই, ল্যাবরেটরি নেই সেগুলো বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু কোর্টের নির্দেশে আবার সেগুলো খুলে দিতে হয়েছে। কোর্ট যদি আমাদের কাজে এভাবে হস্তক্ষেপ করে তাহলে আমরা মান কিভাবে রক্ষা করব। আমরা এখন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ন্ত্রণে আইন করছি। যাদের ল্যাবরেটরি নেই, লাইব্রেরি নেই তারা কেন মেডিক্যাল শিক্ষা চালাবে।

ডাক্তার নিয়োগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সরকারী ডাক্তার হয়ে সরকারের কাাছ থেকে বেতন দিয়ে বেসরকারি মেডিক্যালে কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। নির্বাচনের আগে আমরা আরও ৫ হাজার ডাক্তার নেব। তখন গ্রামে-গঞ্জে ডাক্তার পাওয়া যাাবে। আর আবার ক্ষমতায় আসলে দেশে আর ডাক্তারের অভাব হবে না। নার্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে এখন নার্সের কোন সঙ্কট নেই। আমরা আরও ৪ হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। দেশের সব স্থানে নার্স আছে। ফলে আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

স্থানীয় সরকার বিভাগ :  স্থানীয় সরকার বিভাগ খাতে বরাদ্দের বিরুদ্ধে ছাঁটাই প্রস্তাব এনে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। যে মন্ত্রণালয়ের সফলতার উপর জরগণের ভোট নির্ভর করে। কিন্তু মন্ত্রণালয়টি কাঙ্খিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তারা অভিযোগ করেন, স্থানীয় উন্নয়নে সুষম বন্ট নেই। দেশের অনেকস্থানেই রাস্তা-ঘাট ধ্বংসের পথে। হাওড় ও পাহাড় অঞ্চলের সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। দক্ষতার অভাবে অনেক রাস্তা নির্মাণের পরেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আবার দীর্ঘদিনেও ঠিকাদাররা কাজ শেষ করছে না। জেলা পরিষদে এডিবি’র বরাদ্দ খরচ করতে পারে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের কোন কর্মকান্ড পরিচালিত হয় না। অর্থ বরাদ্দের আগে সারাদেশেই সুষম উন্নয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার উন্নয়নমুখী বিভাগ। নগর ও গ্রামীন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় এই বিভাগের মাধ্যমে। জনগনের চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রত্যেকটা গ্রামকে যোগাযোগের আওতা আনতে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, সুষম বন্টন নিয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। কিন্তু প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি বিবেচনা করে থাকি। যে এমপিদের এলাকা বেশী তাদের বেশী বরাদ্দ দেওয়া হয়। সারাদেশে সড়কের পাশাপাশি পৌর শহরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নগরে জলাবদ্ধতা কমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ৩ লাখ ২১ হাজার ৪৬২ কিলোমিটারের উপরে আমাদের রাস্তা রয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বাইরে লোড পড়লেই এসকল রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিভাবে লোড নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেবিষয়ে সতর্ক রয়েছি। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমেই সারাদেশকে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তাই সংসদ সদস্যদের দাবি অনুযায়ী বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ : ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কঠোর সমালোচনা করেন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তারা বলেন, দেশ দূর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এবিষয়ে প্রস্তাতি নেওয়ার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু কি প্রস্তুতি রয়েছে? বরং বরাদ্দ ব্যয়ে নানা অনিয়ম রয়েছে। বৈষম্যও করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে সোলার দেওয়া হচ্ছে, যা কোন কাজে আসে না। তাই সরকারের শেষ সময়ে এসে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

জবাবে মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ প্রবণ দেশ। গরমের সময় গরম থাকে না, বর্ষার সময় বর্ষা থাকে না। ছয় ঋতুর বাংলাদেশে এখন ঋতুর কোন খবর নেই। যে কোনো সরকারি বরাদ্দ সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই দিতে হয়। জান ও মাল রক্ষা করাই হচ্ছে এ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব। ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে একজনও না খেয়ে বা চিকিৎসায় মারা যায়নি। আগের মতো ৩/৪টি জেলা নয়, এখন ১৬/১৭ জেলা বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়। কোথাও দুর্যোগ হলে এক মিনিটও আমরা নষ্ট করি না, সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। যেসব জেলায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেসব জেলায় আগেই ৩ থেকে ৫শ’ টন চাল, নগদ ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা এবং পর্যাপ্ত টিন মজুদ রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কাছে। নির্বাচনী এলাকায় না গিয়ে সংসদে বড় কথা বলে কোন লাভ নেই।

রেলপথ মন্ত্রণালয় :  রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ওপর ছাঁটাই প্রস্তাব দিয়ে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেন, ১৮৬০ সালের মতোই রয়ে গেছে রেলপথ। পরিবার পরিজন নিয়ে সবচেয়ে আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবহণ হচ্ছে রেল। কিন্তু ১০টার ট্রেন কয়টায় আসে, এই প্রবাদের কোন পরিবর্তন হয়নি। ট্রেনের সময়সূচীর কোন ঠিক নেই। রেলের বগির দূরাবস্থা, প্রথম শ্রেণীতে কোন এ্যাটেনডেন্ট থাকে না। টিকিট কিনতেও কালোবাজারি। টিকিট না কেটেও উৎকোচ দিয়ে ভাল সিট পাওয়া যায়। ট্রেনের বাথরুমগুলোর কথা না বলাই ভাল। এসব অব্যবস্থা থেকে রেলকে রক্ষা করতে হবে।

জবাবে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেল পরিচালনায় কোন বৈষম্য নেই। বিএনপির আমলে রেলপথ ছিল অবহেলিত, ধ্বংসপ্রাপ্ত। বিএনপির আমলে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে ১৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করে নাজুক অবস্থায় নিয়ে যায়। শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেন, আর খালেদা জিয়া ধ্বংস করেন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতার কারণেই রেলপথকে আদালা মন্ত্রণালয় গঠন করে মৃতপ্রায় রেল ব্যবস্থাকে আবার পুনরুজ্জীবিত করেন। বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে আলাদা রেল সেতু করা হচ্ছে, এটি নির্মিত হলে আরও অনেক ট্রেন আমরা দিতে পারব। কর্ণফুলীর নদীর ওপর সড়ক কাম রেল সেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি জেলাও রেল যোগাযোগের বাইরে থাকবে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যাবে। আমরা অবশ্যই রেলকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাব।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।