বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
অভিযুক্ত সিনিয়র অফিসার নেহাল এখনও বহাল, সাদাতকে ঢাকার বাইরে বদলি, ৩ ব্যাংক অফিসার গ্রেফতার, মুচলেখায় ছাড়! শাহজালাল বিমানবন্দরের মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংকের বুথগুলো হুন্ডি কারবারে জড়ি

একুশে বার্তা রিপোর্ট : চলমান ডলার সংকট কাটাতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রে অবৈধ হুন্ডি রোধে চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান; প্রবাসীদের হুন্ডিতে অনাগ্রহী করতে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা; চলছে নানা প্রচারাভিযানও। অথচ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক বুথের কারেন্সি সেলস সেন্টারগুলোয় থেমে নেই অবৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন। খোদ রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের সিনিয়র এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। অনুসন্ধানসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ১ নভেম্বর দুদক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, রসিদ ছাড়াই সেখানে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার লেনদেন হয়। অর্থাৎ এ টাকা চলে যায় হুন্ডিচক্রের হাতে।

এর সাথে ৩ ব্যাংক অফিসারকে গ্রেফতারের পর মুচলেখায় ছাড় দেয়া হয়েছে। সিনিয়র অফিসার নেহালকে বদলির পরও বহাল, অফিসার সাদাতকে ঢাকার বাইরে বদলি।

জানা গেছে, দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থাপিত বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জের কয়েক কর্মকর্তা অবৈধ হুন্ডি কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন। তাদের যোগসাজশে হুন্ডিচক্রের সদস্যরা ব্যাংকের বুথ ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দিচ্ছে দেশের বাইরে।

বিদেশ ফেরত যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর বিমানবন্দরের ব্যাংক বুথে বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় করে দেশি মুদ্রা (টাকা) গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে যাত্রীকে তার নামপরিচয় পাসপোর্ট নম্বর লিপিবদ্ধ করে রসিদ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু যাত্রীকে বৈধ রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে ব্যাংকের মূল হিসেবে তা আসছে না এবং বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে হুন্ডিচক্রের হাতে। তারা এগুলো হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অথবা বেশি টাকায় খোলা মার্কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

দুদক চেয়ারম্যানের দপ্তরে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের একটি ব্যাংকের নিচতলায় কারেন্সি পারচেস কাউন্টারে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ যাত্রীর কাছ থেকে কমবেশি ২ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করা হলেও রশিদ দেওয়া

হয় মাত্র ২০ থেকে ২৫টির। সিস্টেম জেনারেটেড ভাউচার না দিয়ে এমএস এক্সেলে টাইপকৃত ভাউচার দেওয়া হয়। ফলে ক্রয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের লেনদেনে প্রদর্শিত হচ্ছে না। দ্বিতীয় তলায় কারেন্সি সেলস কাউন্টারেও রসিদ ছাড়াই ব্যাংকবহির্ভূত ফান্ডের মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা হচ্ছে। টিএম ভাউচারের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হলেও তা ব্যাংক হিসাবে জমা করা হচ্ছে না। ব্যাংকে রক্ষিত কারেন্সি বিক্রি না করে ব্যাংকবহির্ভূত ফান্ডের মাধ্যমে ক্রয় করা কারেন্সি বিক্রি করা হচ্ছে। একটি চক্রের সহায়তায় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা ২ থেকে ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এই অবৈধ হুন্ডি কারবার করছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাংকের অডিট টিম বিমানবন্দরে গিয়ে এসব জালিয়াতি ধরতে পারে না, কারণ সংরক্ষিত এলাকা হওয়ায় টিমকে পাস নিয়ে বুথে প্রবেশ করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে কারেন্সিগুলো সরিয়ে ফেলে চক্রের সদস্যরা। ভাউচার নষ্ট করে ডিলিট করে ফেলে। গত ৯ অক্টোবর প্রবাসী মিসেস সালমার কাছ থেকে ১ হাজার রিয়াল এবং প্রবাসী মিসেস নারগিসের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৫১ রিয়াল কিনে এক্সেলে তৈরি অফিসারের স্বাক্ষর ছাড়াই ভুয়া ভাউচার দেওয়া হয়। ২১ জুলাই প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের কাছ থেকে ৬শ রিয়াল ও প্রবাসী মোস্তাফিজুর রহমানের কাছ থেকে ১ হাজার ৭শ রিয়াল কিনে এক্সেলে তৈরি ভুয়া ভাউচার দেওয়া হয় অফিসারের সিগনেচার ছাড়াই। এ ছাড়া প্রবাসী ফটিক সরকারের কাছ থেকে ১৭০ সিংগাপুরি ডলার, সাইফুল ইসলামের কাছ থেকে ১৩০ ডলার, মুশফিক রহমানের কাছ থেকে ২শ ডলার, আলীর কাছ থেকে ৫শ ডলার, মোহাম্মদ আলমের কাছ থেকে ২৯ ডলার, হোসেন আলীর কাছ থেকে ২৫০ রিয়াল কেনা হলেও এক্সেলে তৈরি ভুয়া ভাউচার দেওয়া হয় তাদের যেখানে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তার কোনো স্বাক্ষরই নেই।

জানা গেছে, বর্তমান ব্যবস্থাপক দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০ এপ্রিল ৩৬ লাখ টাকা ও ৭৫ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রাসহ ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। পরে তাদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়ানো হলেও ঘটনার মূলহোতাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত সিনিয়র অফিসার নেহলিন রেজাকে বদলি করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি। তবে সিনিয়র অফিসার মিসবাহুস সাদাতকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে।

বিমানবন্দর বুথের সিনিয়র ব্যবস্থাপক আবু নূর মো. ফয়সাল জানান, ভুয়া ভাউচার দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়ের বিষয়ে তিনি অবগত নন। দুদকে করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।