শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:০৫ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
এসআইবিএলে পরিবর্তন পদত্যাগী চেয়ারম্যান এমডির অনিয়ম তদন্তে নামছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক  : সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মো. রেজাউল হক, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. আনিসুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শহিদ হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।গত সোমবার এসআইবিএলের পর্ষদ সদস্যদের এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ওই তিন সদস্য উপস্থিত না হয়ে পদত্যাগের ঘোষণা জানিয়ে দেন।এর পরপরই ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় এবং নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার তাঁরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন।দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব ভট্টাচার্য  বলেন, ব্যাংকটির দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে একটি অভিযোগ দুদকে দাখিল করা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে দুদক কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতির অভিযোগগুলো সঠিক কি না তা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুদকের অন্য একটি সূত্র।জানা গেছে, ২০১৩ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়ে রেজাউল হক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা লোপাট করে নাশকতায় অর্থায়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির পর্ষদ সদস্যদের সহযোগিতায় নামি-বেনামি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে ঋণ দিয়ে ওই টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে ব্যাংকটির সাবেক এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান হয়েও নিয়মিত ব্যাংকে গিয়ে খরদারি করতেন তিনি। পছন্দের লোকদের ব্যাংকে নিয়োগ দেওয়া, দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন রেজাউল।সিএসআরের টাকার অপব্যবহার, কর্মী নিয়োগের নামে ঘুষ গ্রহণসহ অনেক ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের সুবিধা দেওয়ায় সৎ কর্মকর্তারা নানাভাবে বঞ্চিত হন। একই সঙ্গে ব্যাংকের লক্ষাধিক গ্রাহকের আমানতও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।জানা গেছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক এই সামরিক কর্মকর্তা ১৯৮৩ সালে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে যান। পরে সৌদি আরবে তিনি একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে দেশে ফিরে এসআইবিএল ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হন। সৌদি আরবে থাকাকালেই তিনি ফ্রিডম পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ, লে. কর্নেল (অব.) নূর চৌধুরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে কুমিল্লার চান্দিনা আসনে ফ্রিডম পার্টির এমপি প্রার্থী কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা করেন রেজাউল হক। নির্বাচনের কয়েক দিন আগে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে রেজাউল হক নিজেই কর্নেল (অব.) রশীদের পক্ষে প্রচারণা চালান এবং ভোটারদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করেন।গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, রেজাউল হক রাজনৈতিক অপচেষ্টা, নাশকতা ও দুরভিসন্ধি চরিতার্থে বিএনপিকর্মী, ভূতপূর্ব ফ্রিডম পার্টির আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মী ও জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত করে গোপনে বিশাল অঙ্কের তহবিল প্রদান করেছেন। এ ছাড়া ২০১২ সালে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাফেয়ার্স সেক্রেটারি পদে আসীন ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য পেট্রলবোমার অর্থের জোগানদাতা হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিএসআর তহবিলের পুরো অর্থই এককভাবে ব্যয় করেছেন তিনি; যার পুরোটাই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকের এই তহবিলের অর্থায়ন সম্পর্কে কোনো হিসাব পর্যন্ত নেই।জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। যেকোনো উপায়ে দলের মনোনয়ন পেতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জামানত ছাড়াই নিয়মনীতি ভঙ্গ করে শত শত কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন তিনি।জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত-শিবির সমর্থকদের ব্যাংকে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগ দিয়েছেন রেজাউল হক। নীতিমালা ভঙ্গ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ দিয়েছেন। রাজনৈতিক পরিচয়ে ব্যাংক পর্ষদে আধিপত্য বিস্তার করার অপচেষ্টা করেছেন। শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের নামে আমানতকারীদের টাকা হুজি জঙ্গিদের নাশকতামূলক কার্যক্রমে বিভিন্ন ধাপে অর্থায়ন করেছেন।রেজাউল হকের আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আনিসুল হক  জামায়াত মতাদর্শী এবং বিদেশি একটি কম্পানির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে। এসআইবিএলের মাধ্যমে জামায়াতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এমডি শহিদ হোসেন এই ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁর সাবেক ব্যাংকের সহকর্মীদের অনেককেই এসআইবিএলে চাকরি দিয়েছেন। পছন্দের কর্মীদের পদোন্নতি পেতে সহযোগিতা করেছেন। চেয়ারম্যানের অপকর্মে সমর্থন দিয়ে এসব অপকর্মে প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা করেছেন বলেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।অনিয়মের অভিযোগে কম্পানি সচিব হুমায়ুন আহমেদকে সরিয়ে ইতিমধ্যে ওই পদে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের বর্তমান ডিএমডি তারেক মোর্শেদও এসব অপকর্মের সহযোগী ছিলেন। গত ঈদে একটি পার্টি তাঁকে বেশ কিছু খাদ্যপণ্য ঘুষ দিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।