মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৪ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বর্ণিল উদ্বোধনের পর হতাশা কাতারের

খেলা ডেক্স : ‘আমি দলের ছেলেদের বলেছি, তারা যদি নিছক অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বকাপে এসে থাকে, তাহলে আমি আর তাদের সঙ্গে নেই, চললাম’- আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে এমনটাই বলেছিলেন ইকুয়েডরের কোচ গুস্তাফো আলফারো। আর কাতার বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে আর্জেন্টাইন গুরুর প্রতিজ্ঞাকে এগিয়ে নিলেন ইকুয়েডোরিয়ানরা। উদ্বোধনে বদলে দিলো ইতিহাস। জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠলো ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপ আসরের। আর বর্ণিল প্রাণবন্ত উদ্বোধন শেষে খেলার মাঠে হতাশার এক হার দেখলো স্বাগতিকরা। গতকাল কাতারকে ২-০ গোলে হারায় এবারের আলোচিত দল ইকুয়েডর। স্বাগতিক দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া প্রথম দল কাতার। দোহার আল বায়েত স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের হয়ে জোড়া গোল করেন অধিনায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। অথচ ইকুয়েডর এবারের বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কিনা তা নিয়েই ছিল শঙ্কা। বাছাই পর্বে অযোগ্য খেলোয়াড় দলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে।

 

অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্বকাপ থেকে বাদ দেয়া হতো তাদের। তবে ফিফা কোনো প্রমাণ পায়নি। আর যথারীতি কাতারে পৌঁছে দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। এবারের বিশ্বকাপের শুরুতে ভক্ত-সমর্থকদের প্রত্যাশা মেটাতে ব্যর্থ স্বাগতিক ফুটবলাররা। বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরাও আরেকটু প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ফুটবল দেখতে চেয়েছিলেন নিশ্চয়ই। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও ইকুয়েডরের থেকে খুব পিছিয়ে নেই কাতার। মাত্রই ৬ ধাপ উপরে ইকুয়েডর।

ম্যাচের শুরুতেই ছিল নাটকীয়তা। তৃতীয় মিনিটে দারুণ আক্রমণ থেকে পাওয়া গোলে এগিয়ে যায় ইকুয়েডর। কাতারের ডি বক্সের ভেতর থেকে সতীর্থের দৃষ্টিনন্দন অ্যাক্রোবেটিক এক কিক থেকে গোলের কাছে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়ান এনার ভ্যালেন্সিয়া। কিন্তু ভিএআর পর্যালোচনা শেষে গোল বাতিল করেন রেফারি। সুক্ষ্ম অফসাইডের কারণে হতাশা নামে ইকুয়েডর শিবিরে। তবে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে খুব একটা সময় নেয়নি লাতিন আমেরিকার দলটি। ১৬তম মিনিটে এক সংঘবদ্ধ আক্রমণকালে কাতারের ডি বক্সের ভেতরে ফাউলের শিকার হন সেই এনার ভ্যালেন্সিয়া। এবার পেনাল্টির বাঁশি বাজান ম্যাচের ইতালিয়ান রেফারি। পেনাল্টিতে  ঠান্ডা মাথায় আলতো কিকে গোল আদায় করেন ইকুয়েডর অধিনায়ক নিজেই। এসময় অন্য প্রান্তে ঝাপ দেন কাতারের গোলরক্ষক। এই গোল আদায়ের পরপরই ভিন্ন এক রেকর্ডে নাম ওঠে ইংলিশ ক্লাব ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ও এভারটনের ৩৩ বছর বয়সী সাবেক স্ট্রাইকার এনার ভ্যালেন্সিয়ার। বিশ্বকাপের ইতিহাসে আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে গোল পাওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ফুটবলার তিনি।

১-০ গোলে এগিয়ে আক্রমণে ধার বাড়ায় দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। আর সুফল পেতেও খুব সময় লাগেনি। ম্যাচে একের পর এক আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়ে কাতারি ডিফেন্সকে ব্যতিব্যস্ত রাখেন ইকুয়েডোরিয়ান রাইট-ব্যাক অ্যাঙ্গেলো প্রেসিয়াডো। স্বদেশি ক্লাব ইন্ডিপেন্ডিয়েন্তে ডিভি থেকে গত বছর  বেলজিয়ান ক্লাব গেঙ্কে যোগ দেয়া প্রেসিয়াডোর দারুণ এক ক্রসে লিড ডাবল করে ইকুয়েডর। গোলদাতা এবারও এনার ভ্যালেন্সিয়া। ৩২তম মিনিটে দারুণ এক ক্রসে কাতারের ডি বক্সে বল ফেলেন প্রেসিয়াডো। উড়ন্ত বলে মাথা আবারো জাল খ্ুঁজে নেন ইকুয়েডরের সেরা তারকা তুর্কি ক্লাব ফেনারবাচের স্ট্রাইকার এনার ভ্যালেন্সিয়া। প্রথমার্ধের শেষ দিকে আক্রমণ বাড়ায় স্বাগতিক কাতার। তবে সুযোগ হাতছাড়া করেন কাতারি ফরোয়ার্ড আলময়েজ। ম্যাচের প্রথমার্ধে ইকুয়েডরের প্রাধান্য ছিল স্পষ্ট। ৫৪% বল দখল রাখে ইকুয়েডর। তবে পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করতে পারে কমই। কাতারের গোলবারের উদ্দেশ্যে তিনটি শট নেয় তারা। অন টার্গেটে ছিল দুটি শট। আর কাতার চেষ্টা ছিল দুটি। তবে কোনটিই অন টার্গেটে ছিল না।

মাঠে নামার আগে আত্মবিশ্বাস ঝরে কাতারের স্প্যানিয়ার্ড কোচ ফেলিক্স সানচেজের কণ্ঠেও। কোচের বিশ্বাস এবারের বিশ্বকাপেও চমক দেখাবে তার শিষ্যরা। অনেকটা ২০০২-এর দক্ষিণ কোরিয়ার মতোই ছিল কাতারের কর্ম পরিকল্পনা। সেবার সহ-আয়োজক দলটি সেমিফাইনালে খেলে তাক লাগিয়ে দেয় বিশ্বকে। মার্কাকে দেওয়া সাক্ষাতকারে সানচেজ বলেন, ‘২০১৯ সালে কেউ ভাবেনি কাতার এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হবে। আমি বিশ্বকাপ জয়ের কথা বলছি না। কিন্তু গ্রুপ পর্বের তিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভালো খেলাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। বলা তো যায় না, ফুটবলে যেকোনো কিছুই ঘটে যেতে পারে।’

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে এমনই ইঙ্গিত ছিল কাতারের খেলায়। তবে এরই মধ্যে হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন ভ্যালেন্সিয়া। ৫৬তম মিনিটে ভ্যালেন্সিয়ার শট দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন কাতারি গোলরক্ষক আল শাহিব। ৭২তম মিনিটে জোড়া পরিবর্তন করেন কাতার কোচ সানচেজ। এদিন ভক্তদের হতাশ করেন কাতারের সেরা দুই তারকা মোহাম্মদ আলময়েজ আলী ও হাসান আল হায়দোস। ২০১৬তে অভিষেকের পর ৮৫ ম্যাচেই কাতারের সর্বাধিক ৪২ গোল করেছেন আলময়েজ আলী। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ফুটবলার হাসান আল হায়দোস সর্বাধিক ১৬৯ ম্যাচ খেলেছেন কাতারের জার্সি গায়ে। তার গোল রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু গতকাল দুজনকে মাঠ থেকে এক সঙ্গে তুলে নেন কাতারের কোচ।

৭৬তম মিনিটে মাঠ থেকে উঠে যান প্রথমার্ধের শেষ দিকে হাঁটুতে চোট পাওয়া এনার ভ্যালেন্সিয়া। এসময় গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে স্বাগতিকরা। ৮৬তম মিনিটে গোলের অনেক কাছে চলে গিয়েছিল কাতার। কিন্তু বদলি খেলোয়াড় মোহাম্মদ মুনতারির শট প্রতিপক্ষের গোলবারের উপরের জাল স্পর্শ করে বেরিয়ে যায়। ম্যাচে বলদখলে খুব পিছিয়ে ছিল না কাতার। ৫৩%-৪৭%। ইকুয়েডরের সফল পাসের সংখ্যা ৪৮৬ আর কাতারের ৪৩৪। কিন্তু কাতারের ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা ছিল স্পষ্ট। পুরো ম্যাচে প্রতিপক্ষের গোলবারে পাঁচটি শট নেয় তারা। কিন্তু অনটার্গেটে ছিল না একটিও।

আরো এক রেকের্ড নাম ওঠে ম্যাচটির। দোহায় এদিন দুদলের ৬ জন দেখেন হলুদ কার্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ম্যাচে সর্বাধিক হলুদ কার্ডের রেকর্ড স্পর্শ করলো এটি। আগের ঘটনাটি ১৯৯৪ বিশ্বকাপের শুরুতে জার্মানি-বলিভিয়া ম্যাচের (৬ হলুদ কার্ড ১ লাল কার্ড)।মানব জমিন

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।