শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘বিপথে গেলে ছাড় নয়’: রাজনীতিতে আত্মত্যাগ ও পরিমিতিবোধ জরুরি

ডেক্স রিপোর্ট : গত শনিবার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৭ম জাতীয় কংগ্রেস উদ্বোধন শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চলার পথে কেউ বিপথে গেলে ছাড় দেয়া হবে না; কোনো সহানুভূতিও থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন- মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে হবে; আমাদের যুব সমাজকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই।

দেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে, বিশেষ করে ক্যাসিনো, মাদক, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সংগঠনটির শীর্ষ পর্যায়ের কিছু নেতাসহ অনেকেই বহিষ্কার ও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্ববহ, তা বলাই বাহুল্য।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের এটি ছিল ৭ম কংগ্রেস। এবারের কংগ্রেসে সারা দেশের ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা ও জেলার মর্যাদাসম্পন্ন ৮টি বৈদেশিক শাখার প্রায় ৩ হাজার কাউন্সিলর, ২৫ হাজার ডেলিগেট ও ৮ হাজার আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যুবলীগের গৌরবময় ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের আদর্শবান ও ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন- আদর্শ নিয়ে চললে এর মধ্য দিয়ে একটি সংগঠন যেমন গড়ে ওঠে; তেমনি দেশকেও কিছু দেয়া যায়।

তবে আমরা মনে করি, এজন্য পরিশুদ্ধ রাজনীতির চর্চা জরুরি। রাজনীতিকরা যদি ব্যক্তিগত লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে ও সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রেখে সততা ও আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হন, তাহলে দলের অপরাপর নেতা-কর্মীদের বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়।

বলা হয়ে থাকে, মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। বস্তুত কোনো রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ যখন দেশপ্রেম ও ন্যায়-নীতিবোধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে বিপথে পা বাড়ান; রাজনীতিকে করে তোলেন নিজেদের লাভালাভের অস্ত্র, তখন তাদের অনুসারীরাও একই পথ অবলম্বন করেন।

যুবলীগের যেসব নেতা-কর্মীর অধঃপতন ও গ্রেফতারের সংবাদ পত্র-পত্রিকায় এসেছে, বলার অপেক্ষা রাখে না- তারা বয়োজ্যেষ্ঠ ও দলনেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য পেয়েই এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে, রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, আত্মত্যাগ ও পরিমিতিবোধের জাগরণ।

দেশে আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনীতিকদের অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও রুচিশীল মনমানসিকতার ধারক-বাহক হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী যেমনটা বলেছেন- রাজনীতিকদের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, তা যদি বাস্তব রূপ পায় তাহলে আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠার পাশাপাশি নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজি ইত্যাদি থেকে মুক্ত হবে দেশ।

তাই যুবলীগের কংগ্রেসে উচ্চারিত প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলো একইভাবে অন্যদেরও আমলে নিতে হবে; চর্চা করতে হবে প্রাত্যহিক জীবনে। কেননা, যে দোষে দুষ্ট যুবলীগ; অভিযোগ রয়েছে- সেই একই দোষ প্রবলভাবে বিদ্যমান ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোয়।

অতীতেও দেখা গেছে, মুষ্টিমেয় কিছু নেতা-কর্মীর দুর্দমনীয় আচরণ ও কার্যকলাপ একটি সংগঠনের ললাটে এঁকে দিয়েছে কলংক চিহ্ন। দুর্জন সর্বদা পরিত্যাজ্য- এ শিক্ষা নিয়ে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব সুযোগসন্ধানীদের অনুপ্রবেশ রোধসহ অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সংগঠনকে মুক্ত রাখার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।