রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
ব্যাংক খাতে লুটপাট : সংসদে তোপের মুখে অর্থমন্ত্রী

একুশে বার্তা প্রতিবেদন : ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনা ও লুটপাট নিয়ে রোববার সংসদে তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ব্যাংক লুটকারী ও অর্থ পাচারকারীদের ধরতে না পারায় এবং পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে না পারায় সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা তার কঠোর সমালোচনা করেন।

জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা শুরু করেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অধ্যাপক আলী আশরাফ। এরপর আলোচনায় তাল মেলান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ, স্বতন্ত্র এমপি রুস্তম আলী ফরাজীসহ বেশ কয়েকজন এমপি।

এখন আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু শৈথিল্য আছে। সেগুলো দূর করতে হবে।’ এর পরই তিনি ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা আনা দরকার। এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে না পারলে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

কিছু মানুষ ব্যাংকিং খাতে লুটপাট করবে, বিদেশে অর্থ পাচার করবে, এটা হতে পারে না। ঋণখেলাপি ও অর্থ পাচারকারীদের আপনি ধরেন। কুমিল্লার সংসদ সদস্য সাবেক এই ডেপুটি স্পিকার আরও বলেন, ‘ব্যাংকের লুটপাট থেকে বেরিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবে না।’

এ ছাড়া তিনি বলেন, করের আওতা বাড়াতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কর অফিস করেন। বিমান চলছে না, বিদেশিরা এসে বিমানে উঠলে মনে করে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে। সর্বত্র ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা চলছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে যে লুটপাট হয়েছে তা ভারতের সমনাথ মন্দিরের লুটপাটের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তখন সমনাথ মন্দির আক্রমণ করে ২০ বিলিয়ন ডলার লুটপাট করা হয়েছিল। বাংলাদেশে ব্যাংক লুটপাটের আগ পর্যন্ত এত বড় লুটপাটের ঘটনা আর ঘটেনি। সামনে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে এই ব্যাংক মালিক লুটপাটকারীরা দেশে থাকবে না, তাদের খুঁজেও পাবেন না। তারা বিদেশে পালিয়ে যাবে, এরই মধ্যে ভিসা লাগিয়ে ফেলেছে।’

অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ব্যাংক খেলাপি কারা? এটা কি আপনি জানেন না? কেন তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন না। এরা ২৪ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। এসব ভুয়া বাজেট দিয়ে কাজ হবে না। এই বাজেটের মধ্যে কিছু নেই। ধনীকে খুশি, গরিবকে নিঃস্ব আর ব্যাংক ডাকাতদের উৎসাহিত করেছেন এই বাজেটে।’

ব্যাংকে আমানত রাখতে মানুষ এখন ভয় পায় মন্তব্য করে স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘ব্যাংকে টাকা রাখে মানুষ নিরাপত্তার জন্য। মানুষ ভীত হয়ে গেছে। টাকা পাচার হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপিরা টাকা দেশেও রাখে না, বিদেশে পাচার করে। এরা ব্যাংকের কিছু আর রাখবে না। যারা ব্যাংকে লুটপাট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। লুটপাটকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য কী করা যেতে পারে, সেটা অর্থমন্ত্রীকে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে এই টাকা আদায়ে কী করা যায় করেন, তাহলে জনগণ আস্থা ফিরে পাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসনে চলছে অনিয়ম। বেতন বাড়ানো হল, তারপরও কর্মকর্তারা ঘুষ খায়। তারা বেতন নিলে ঘুষ বন্ধ করতে হবে। আর ঘুষ নিলে বেতন বন্ধ করতে হবে। একসঙ্গে দুটো চলবে না।’

সোহরাব উদ্দিন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সৃষ্টির দাবি করে বলেন, ‘এ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যায়। যদি এটি সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে আমাদের প্রবৃদ্ধি বাড়বে।’

এরপর একে একে জাতীয় পার্টির নূরুল ইসলাম ওমর, পীর ফজলুর রহমানসহ অন্য এমপিরা তাদের বক্তব্যে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লুটপাটকারীদের ধরে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।

সরকারি তদন্তে ব্যাংক লুটপাটকারীদের নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সুবিধা দেয়া হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট বরাদ্দের সুবিধা প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।