মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনালে আগ্রহী পাঁচ দেশ

ডেক্স রিপোর্ট: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ নির্মাণ শেষে চালু হবে টার্মিনালটি। শুরু থেকেই তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিদেশি সংস্থার হাতে দিতে আগ্রহী বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সম্প্রতি সংস্থার বোর্ড সভায়ও এ বিষয়ে পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে দেশের বিমানবন্দরগুলো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সকে তৃতীয় টার্মিনালের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না- তা মোটামুটি নিশ্চিত। এতে বড় অঙ্কের টাকা বিদেশিদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘যাত্রীসেবা ও কর্মকাণ্ডে জবাবদিহি নিশ্চিতে আমরা শুরু থেকেই তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা বেসরকারি খাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় বেবিচকের বোর্ড সভায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ কেন বিমানকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হযরত শাহজালালসহ দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করছে বিমান। কিন্তু তাদের কাজ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। তার পরও সময় এবং সুযোগ রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেতে হলে তাদের ভালো কিছু করে দেখাতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যাহিদ হোসেন বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা বেবিচকের এখতিয়ার। যাদের ভালো মনে করবে, তাদের দেবে তারা। তবে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং অনেক উন্নত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সূত্র জানায়, বেবিচকের বোর্ড সভায় তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় এবং বিষয়টি নিয়ে দুই সদস্যের পরামর্শক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। জাপান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া ও সুইজারল্যান্ড প্রস্তাবনা দিয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও বিষয়টি এখনও পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

সংশ্নিষ্টরা জানান, ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দর সম্প্রসারণে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। প্রথমে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা ধরা হলে পরে প্রকল্প ব্যয় আরও ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। ২০১৯ সালের শেষদিকে শুরু হয় নির্মাণকাজ। ২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্মাণকাজে অর্থায়ন করছে জাইকা। জাপানের সিমুজি ও কোরিয়ার স্যামসাং যৌথভাবে ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)’ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যে কোনো বিমানবন্দরের আয়ের অন্যতম উৎস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বেড়ে দ্বিগুণ হবে এবং এ থেকে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদেশি সংস্থা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পেলে সে অর্থ সরকারের হাতছাড়া হবে।

নির্মাণকাজ শেষে আগামী বছরের শেষ নাগাদ তৃতীয় টার্মিনাল চালুর প্রত্যাশা করছেন প্রকল্প-সংশ্নিষ্টরা। যেমনটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, নানা কারণে এই প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। তবে আমরা নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের মধ্যেই টার্মিনালটি চালু করতে পারব বলে আশা করছি। যদিও ব্যয় কী পরিমাণ বাড়বে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা প্রশ্নে আমরা দায়িত্ব বিদেশি সংস্থাকে দিতে চাইছি। কারণ পৃথিবীর বেশিরভাগ লাভজনক বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করে বিদেশি সংস্থা।

সূত্র আরও জানায়, টার্মিনালটি নির্মাণ হলে যাত্রী পরিবহন ও পণ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা দ্বিগুণের বেশি হবে। লাগেজ হ্যান্ডলিং, পণ্য লোড-আনলোডসহ টার্মিনালের যাবতীয় অপারেশনাল কাজ থাকবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। প্রশাসনিক, নিরাপত্তা, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ব্যবস্থা থাকবে বেবিচকের অধীনে। তবে পরামর্শকদের প্রতিবেদন হাতে পেলেই বেবিচক পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে দেশের সবক’টি বিমানবন্দরের সামগ্রিক কার্যক্রম বেবিচক ও বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা করে। হঠাৎ করে শুধু একটি টার্মিনালের দায়িত্বে বিদেশি সংস্থা এলে কীভাবে সমন্বয় করবে, কী ধরনের সুবিধা-অসুবিধা হবে, সব বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।