শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব

ডেক্স রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। একটা কথাই বলতে পারি, নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে, তা না হলে তাদের এজন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে।

গত ৩১ অক্টোবর বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রাসেলসে গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরামে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
গত কিছুদিন ধরে প্রধানমন্ত্রীর কিছু বক্তব্য থেকে উদ্ধৃত করে তার কাছে একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল- কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, সময়মতো হবে কিনা, আবার জরুরি অবস্থা আসবে কিনা, এসব প্রশ্ন রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। নির্বাচন সময়মতোই হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার উত্তরে বলেন, কে চোখ রাঙালো, আর কে ব্যাকালো, আমরা ওটার পরোয়া করি না। অনেক সংগ্রাম করেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।

আন্দোলন করে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন থামাতে পারবে না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন এভাবে (আন্দোলন করে) তারা থামাতে পারবে না। ’১৩- তেও পারেনি, ’১৮-তেও পারেনি, এবারো পারবে না। ইনশাআল্লাহ নির্বাচন যথাসময়ে হবে। তারা তো চাচ্ছে এটাই (নির্বাচন বন্ধ করা), সেটা করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।

বিজ্ঞাপন

জনগণ ওদের সঙ্গে নাই। জনগণকে কষ্ট দিয়ে রাজনীতি হয় না। রাজনীতি তো জনগণের জন্য। গণতন্ত্র থাকলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ থাকলে দেশের উন্নতি হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন তো শুধু মেট্রোরেল আর টানেল দিয়ে না, যান না গ্রামে- ঘুরে আসুন না। উন্নয়নটা আমি তৃণমূল থেকে করে দিয়েছি। কোন বিদেশি শক্তি চোখ রাঙাচ্ছে এই প্রশ্ন যিনি রেখেছিলেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, আপনাকে আমার বলতে হবে কেন?  আপনারা বোঝেন না? ডায়ালগ করতে হবে! ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন কি ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্প সাহেব আর বাইডেন ডায়ালগ করবে, সেদিন আমি করবো।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ প্রধানমন্ত্রীর পাশে মঞ্চে ছিলেন।

খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার সঙ্গে সংলাপ করবো। বিরোধী দল কে? সংসদীয় পদ্ধতিতে বিরোধী দলের সংজ্ঞা আছে। সংসদে যাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, তারাই প্রকৃত বিরোধী দল। এর বাইরে বিরোধী দল গণ্য হয় না, আমেরিকাতেও হয় না। তাহলে কার সঙ্গে সংলাপ করবো? খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ?
একজন সাংবাদিক জানতে চান মঙ্গলবার পিটার হাস্‌ নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সংলাপের কথা জোর দিয়ে বলেছেন, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কী বলতে চান? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের সঙ্গে কীসের সংলাপ? বরং সে (পিটার হাস্‌) বসে ডিনার খাক, সে সংলাপ করুক। এটা আমাদের দেশ। আমরা স্বাধীনতা এনেছি রক্ত দিয়ে। কাজেই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ কথাটা মনে রাখা উচিত এটা বাংলাদেশের মানুষও চাইবে না। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতকে ঘৃণা করে। যেটুকু সুযোগ পেয়েছিল, আমরা করে দিয়েছিলাম সুযোগ, সেটাও হারিয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, যখন উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছিল, তার বিচার দাবি করেছিল। এখন যখন পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হলো, তখন কেন বিচারের দাবি করে না। যারা সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বলে, আজকে যখন এত সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হলো, তারা চুপ কেন? তিনি বলেন, আমাদের তো মেরেছেই, এই পুলিশকে পিটিয়ে মারলো। ওগুলো মানুষের জাত নাকি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। ২৮ তারিখে তারা পুলিশ হত্যা করেছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, মেরেছে। এই ঘটনায় বিএনপি’র প্রতি জনগণের ধিক্কার ছাড়া কিছুই জুটবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আত্মগোপনে গেল। এরপর আবার অবরোধ দিলো। কীসের অবরোধ, কার জন্য এই অবরোধ? শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো বিএনপি প্রকাশ্যে করেছে। শুধু ঢাকা নয়, লালমনিরহাটে যুবলীগের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এভাবে হত্যা করা, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নষ্ট করা এগুলো তো বিএনপি’র কাজ। সাংবাদিকদের ওপর হামলা কেন? প্রশ্ন রেখে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষেই কাজ করছিল। এরপরও তাদের ওপর হামলা কেন বুঝলাম না। বেসরকারি টেলিভিশনগুলো আমি করে দিয়েছি। তারপরও দেখি সাংবাদিকরা বিএনপি’র নিউজ আগে দেয়। আমার নিউজ আসে ৪/৫ নম্বরে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে গেছেন। আহতদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার আমরা করবো। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বিশেষ করে বাস মালিক তাদের আর্থিক সহায়তা করছি। আমার ধারণা বিএনপি নির্বাচন চায় না। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে সেটিই এখন আমাদের করা উচিত।
সরকার যেভাবে আছে নির্বাচনে সেভাবেই চলমান থাকবে: সরকারের উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে এ কারণে নির্বাচনের সময়ে সরকারের আকার ছোট করা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আকার ছোট করলে দেখা যায় অনেক মন্ত্রণালয়ের কাজ হয় না। কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়ে যায়। ওই জন্যই বলেছি, আমাদের যেভাবে আছে ওইভাবেই চলমান থাকবে। সরকার রুটিন কাজ করবে। আকার-বিকার যেটা হবে, তখন দেখা যাবে বলেও মন্তব্য করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কে হবে, সেদিকে আমরা যাচ্ছি না। আমরা যেভাবে চলার অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলাপ করেছি, সংসদীয় গণতন্ত্র যেভাবে আছে সেভাবে চলবে। আমরা যারা থাকবো, নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে আমরা রুটিনওয়ার্ক পালন করবো।

উনি তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসছে: বিএনপি’র কার্যালয়ে বাইডেনের কথিত উপদেষ্টাকে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে জড়িত সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি তো সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসছে। তার থেকে ওই নামটা আসছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। তাকে ছাড়া হচ্ছে না। তাকে ছাড়া হবেও না। ইতিমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি। তাকেও গ্রেপ্তার করা হবে এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ঠিকই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, এরকম ফ্রড সে করলো কেন? সে যেই হোক আইনের কাছে সবাই সমান। বিএনপি’র কার্যালয়ে কথিত উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের দরজা খোলা থাকে যে কেউ আসতে পারে। যে কেউ কথা বলতে পারে। কিন্তু যে এসে বসলো! যেভাবে খাতির তর্জমা করে বসানো হলো। আর যেভাবে কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো। এবং যত মিথ্যা তথ্য দিয়ে গেল। বোধ হয় নিজেদের কিছু ইমেজ বাড়ানোর জন্য এ ধরনের ভাড়াটে লোক নিয়ে আসছে। তাকে যখন ধরা হলো এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো, তখন আসল কথা বেরিয়ে এলো। সে ভাড়া খাটতে আসছিল। তিনি মার্কিন নাগরিক এটা মার্কিনদের দেখতে হবে। আর কথায় কথায় আমাদের স্যাংশন দেয়। আমার জনগণ আছে আর আমার দেশ আছে। আমি এটা নিয়ে আছি।

ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপি তফাৎ দেখেন না প্রধানমন্ত্রী
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, গাজায় যেমন ইসরাইল হাসপাতালে হামলা করলো বিএনপি একই কায়দায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। মনে হয়, ইসরাইল আর ওদের মধ্যে ভালো একটা সমঝোতা আছে। ঠিক একইভাবে ওখানেও শিশু-নারী হত্যা। এরাও এখানে পুলিশ হত্যা করছে। আমি কোনো তফাৎ দেখি না।

গাড়িতে আগুন দিলে তার হাতও পুড়িয়ে দেয়া উচিতগত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা পুলিশকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে তারা কি মানুষের জাত। যারা যখন গাড়ি পুড়িয়ে দেবে তাদের হাতও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যে সন্ত্রাসী দল তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
রুটি-রুজির কারখানা ধ্বংস করলে চাকরিটা থাকবে?

পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আলোচনার (মজুরি বৃদ্ধি) পর্যায়ে হঠাৎ তাদের (পোশাক শ্রমিক) মাঠে নামানো এবং সেখানে আবার জ্বালা-পোড়াও করা, কোনো কোনো কারখানায় আগুন দেয়া যে কারখানা দিয়ে রুটি-রুজি আসে, সেই কারখানা ধ্বংস করলে তোমাদের চাকরিটা থাকবে কোথায়? সব তো গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটা তো বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ গার্মেন্টস শ্রমিকরা রাস্তায় নেমেছে।

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্ষাকালে মুরগি এমনিতেই একটু কম ডিম পাড়ে। ডিমের দাম বাড়লো কেন, সেটা নিয়ে চিৎকার। যখন বললাম আমদানি করবো, তার আগে দাম গেল কমে। আমদানি আর করা লাগলো না। এ সময় তিনি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগ তোলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কৃত্রিমভাবে করা হচ্ছে। এত আলু উৎপাদন হচ্ছে। তারপর হঠাৎ দাম বাড়ানো। এখানে তো কিছু কাজ আছে। মজুতদারদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, এখন আবার দেখলাম বাণিজ্য মন্ত্রী বললেন আলু আমদানি করবেন। আলু পচাবে, তারপরও দাম কমাবে না। এটা তো ঠিক নয়। সে জন্য বলছে দোকানে দোকানে নয়, যারা মজুত করছে তাদের ধরতে হবে। আমি সেই নির্দেশ দিয়েছি। সেটাই করা হচ্ছে। যাতে মজুত করে না রাখতে পারে। গণমাধ্যমের সহায়তা চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, এ জন্য গণমাধ্যমের সহায়তাও দরকার। মানুষের কষ্টটা যাতে না হয়, সেজন্য সরকার সচেতন রয়েছে।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।