সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
১০ বছর নিলাম হয় না ভল্টের স্বর্ণ : সরকার হারাচ্ছে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব : বিবি-এনবিআরের চিঠি চালাচালি

বাণিজ্য ডেক্স : শুল্ক গোয়েন্দাসহ অন্যান্য সংস্থার অভিযানে প্রতিনিয়তই ধরা পড়ছে চোরাই স্বর্ণের ছোট-বড় চালান। প্রতিমাসেই শুল্ক বিভাগ, র্যাব-পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার হাতে আটক স্বর্ণ জমা হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে। শুল্ক গোয়েন্দার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বর্ণের পরিমাণ এক হাজার ৫৯৮ কেজি ৭৮৮ গ্রাম। ২৬২টি মামলার বিপরীতে স্বর্ণগুলো জব্দ করা হয়। সাম্প্রতিকালে যে স্বর্ণের চালান ধরা পড়েছে সেগুলোও জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে। কিন্তু গত সাড়ে ৯ বছর ধরে স্বর্ণের কোনো নিলাম হয় না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এখন স্বর্ণের স্তূপ জমে গেছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণের ওজন ও ক্যারেট গরমিলের খবরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ, ভল্টে রাখা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের চাকতি ও আংটি মিশ্র বা সংকর ধাতু হয়ে আছে। ২২ ক্যারেটের এসব স্বর্ণ এখন হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট!

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম রবিউল হাসান জানান, ভল্টে রক্ষিত স্বর্ণ হেরফের হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন কারণে ভোল্টে রক্ষিত স্বর্ণ নিলাম করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

দেশের স্বর্ণের সঙ্কট নিরসনে শুল্ক গোয়েন্দাসহ অন্যান্য সংস্থার অভিযানে আটক স্বর্ণের নিলাম প্রক্রিয়া সহজ করতে গত বছরের ১৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের দপ্তরে চিঠি দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সভাপতিকেও চিঠির অনুলিপি পাঠায় সংস্থাটি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা স্বর্ণের সুরক্ষায় ‘চোরাচালানের দায়ে কাস্টমস কর্তৃক আটককৃত এবং আটক পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমাকৃত স্বর্ণ ও স্বর্ণালঙ্কারের কেস টু কেস পরিদর্শন সংক্রান্তে’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি এক গোপনীয় প্রতিবেদন দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। প্রতিবেদনে ৫ দফা সুপারিশ করে সংস্থাটি। কিন্তু ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি গত ৬ মাসেও।

সুপারিশে বলা হয়, কাস্টমস হাউসের ভিজিআর নম্বর ১১১০/১৪ মূলে জমাকৃত গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়, কিন্তু পরিদর্শন দল ওই জি.আর/ভিজিআরভুক্ত চাকতি এবং রিং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অন্য ধাতব বস্তু পাওয়ায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকে কাস্টমস হাউস স্বর্ণালঙ্কার/স্বর্ণবার/স্বর্ণ কাটপিস ইত্যাদি জমা দেওয়ার সময় সঠিকভাবে স্বর্ণের ওজন এবং স্বর্ণের মান (ক্যারেট) পরীক্ষা করে জমা প্রদান করার জন্য কাস্টমস হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান; এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও সঠিকভাবে স্বর্ণের ওজন এবং স্বর্ণের মান (ক্যারেট) পরীক্ষা করে জমা গ্রহণ করার; প্রত্যেক মামলার সংশ্লিষ্ট স্বর্ণালঙ্কার/স্বর্ণবার/স্বর্ণ কাটপিস ইত্যাদি মামলাওয়ারি পৃথকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা প্রদান এবং তা সে অনুযায়ী পৃথকভাবে সংরক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও নির্দেশনা প্রদানের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা যেতে পারে।

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত স্বর্ণ ন্যায্যমূল্যে কিনতে চান ব্যবসায়ীরা। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) চলতি বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে লেখা এক চিঠিতে এ অনুরোধ জানিয়েছেন। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজুসের এ প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে বলে জানা গেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোহম্মদ শহীদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া স্বর্ণ নিলামের উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ করা হয়েছিল। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলে কোনো ধরনের প্রশ্ন উদ্রেক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ২০১১ সালে পরিচালিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বৈধ উপায়ে কোনো স্বর্ণ আমদানি হয় না। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশ থেকে একশ্রেণির চোরাকারবারির সহায়তায় স্বর্ণ এনে তা এখানকার বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ অবস্থায় চোরাই স্বর্ণ নিলামের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আটক স্বর্ণগুলো নিলাম করা হলে এনবিআরের রাজস্ব খাতে হাজার কোটি টাকা আয় হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দপ্তরে পাঠানো শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, চোরাচালানোর দায়ে আটক স্বর্ণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা ও পরে বাজেয়াপ্ত করা স্বর্ণ নিলামে বিক্রি করার বিধান রয়েছে। ২০০৮ সালের পর থেকে এ ধরনের বাজেয়াপ্ত স্বর্ণের নিলাম হয়নি। ফলে এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ে আছে।

জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের ভেতরের উৎস থেকে বৈধ স্বর্ণ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তাদের ব্যবসায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বাজুস নেতারা দীর্ঘদিন ধরে দেশে বৈধ স্বর্ণ সরবরাহের ব্যবস্থা করারও দাবি জানাচ্ছেন।

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।