রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
‘জিয়া ট্যাগের’ মূলহোতা, তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠজন নিরাপত্তা সুপার ‘খলিল’কে বাদ দিয়েই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ! ঘটনার দিন ছুটিতে থাকা লাভলীর নাম প্রতিবেদনে!

একুশে বার্তা রিপোর্ট :  অবশেষে ৭ মাস অতিক্রান্ত করে ‘জিয়াস্ট্রীকার’ ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিভিল এভিয়েশন অথরীটি। তদন্ত প্রতিবেদনটি পক্ষপাত দুষ্ট বলে অভিযোগ ওঠেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে ‘জিয়া বিমানবন্দরের নামে স্ট্রীকার লাগানো সেই নিরাপত্তা সুপার, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে খ্যাত, সিরাজগনজের সেই খলিলুর রহমান ওরফে খলিলের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনার দিন ছুটিতে থাকা  নিরাপত্তা সুপার সালেহা বেগম লাভলীকে জড়িয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট এফসেক সদস্যকেও জড়ানো হয়নি। কথিত আছে যে, ঘটনার সাথে এক এফসেক সদস্য’র নাম না বলায় নিরাপত্তা সুপার খলিলকে ‘প্রাইজ হিসেবে’ তদন্ত প্রতিবেদন থেকে  ফসকে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা সুপার খলিল শাহজালালে মানব পাচারে জড়িত বলে  বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে, তদন্ত হয়েছে, প্রশাসন বিভাগের আব্দুন নূর ডেকে জিঙ্ঘাসাবাদ করেছেন। কিন্ত নিরাপত্তা সুপার খলিলের বিরুদ্ধে কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে খলিল বিমানবন্দর দাবড়ে বেড়িয়েছেন, তারেক রহমান তৎকালিন জিয়া বিমানবন্দরে আগমন করলে খলিলুর রহমানও তার গাড়িতে করে বিমানবন্দরে আসতেন- এ ঘটনা তখন অনেকেই দেখেছেন্। কিন্ত তারেক জিয়ার লোক বলে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।

সূত্রে জানা গেছে,  প্রায় ১০ বছর আগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অথচ শাহজালালের সুনাম ক্ষুণ্নের চেষ্টায় বিমানবন্দরের আগের নামের মনোগ্রামসংবলিত নিরাপত্তা ট্যাগ যাত্রীদের লাগেজে সরবরাহ করে আসছিল একটি চক্র।

বিষয়টি ধরা পড়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর। ওই দিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তল্লাশিকালে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডনগামী একটি ফ্লাইটে যাত্রীদের লাগেজের নিরাপত্তা ট্যাগে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম লেখা দেখা যায়। এর পর শুরু হয় তোলপাড়। তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয় নিরাপত্তা ট্যাগ বিতরণকারী আট নিরাপত্তাকর্মীকে। এ কাজের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তখন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

সম্প্রতি বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তরে ওই ঘটনার ওপরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। এতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ঘটনার মূলহোতা খলিলের  নাম আসেনি সেই প্রতিবেদনে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার পর অভিযোগ উঠে বরখাস্তদের জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ট্যাগ বিতরণের নির্দেশদাতা হলেন শাহজালালের নিরাপত্তা সুপারভাইজার খলিলুর রহমান। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সেকশনের লুজ নোটে অভিযুক্তের প্রথম কাতারেই ছিল তার নাম। অথচ তদন্ত কমিটির দাখিল করা প্রতিবেদনে তার নাম আসেনি। প্রতিবেদনটিতে ঘটনায় কারা দায়ী, কি উদ্দেশে তারা এমনটি ঘটিয়েছে, কার কোন ধরনের দায়িত্বে অবহেলা ছিল, সেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এ দুই সুপারভাইজারসহ ১১ জনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশও দেওয়া হয়। প্রতিবেদনটি প্রস্তুতে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে ১৮ সিভিল এভিয়েশন কর্মকর্তা-কর্মচারীরও। কিন্তু কোথাও খলিলুর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজনের দাবি, এ তদন্ত প্রতিবেদন পক্ষপাতদুষ্ট। ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত সেই খলিলুর রহমানসহ এক এফসেক কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পক্ষপাতের বিষয়টি। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সুনাম ক্ষুণœ করা ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তারা হলেনÑ শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সুপারভাইজার আবদুল হাকিম ও সালেহা বেগম (লাভলী), নিরাপত্তা প্রহরী নাইমউদ্দিন চৌধুরী, নুরুল্লাহ, আনসারুল্লাহ জসিম, বাবুল চন্দ্র রায়, ইমাম উদ্দিন, আলমগীর হোসেন, রায়হানুল আজিজ, দুলাল সরকার, খায়রুল বাশার, মহিউদ্দিন হাওলাদার, তোফায়েল হাওলাদার, বাদল মিয়া, আমিনুল ইসলাম ও আনিসুর রহমান ফকির।

তদন্ত কর্মকর্তারা প্রতিবেদনে পর্যালোচনা ও মতামতে উল্লেখ করেন, নিরাপত্তা সুপারভাইজার আবদুল হাকিম ও সালেহা বেগমের ত্বত্তাবধানেই যাত্রীদের লাগেজে অবৈধভাবে নিরাপত্তা ট্যাগ অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যবহার করার বিষয়টি প্রমাণিত। গত বছরের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন ফ্লাইটের যাত্রীদের লাগেজে রেড লাইন কর্তৃক স্টিকার লাগানোর বিষয়ে কোনো অফিস আদেশ/সার্কুলারও পাওয়া যায়নি।

সিভিল এভিয়েশনের এক কর্মকর্তা ও তদন্ত কমিটির সদস্য বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে তাদের লিখিত নোটিশ করা হয়েছে। কিন্তু কেন ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযুক্ত খলিলুর রহমানের নাম প্রতিবেদনে আসেনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

এ ব্যাপারে নিরাপত্তা সুপার খলিলুর রহমান  দাবি করেন ঘটনার দিন আমার ডিউটি ছিল না, রোস্টারেও আমার ডিউটি ছিল না।

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।