সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০২:৪২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
শিষ্টাচার বহির্ভূত!

 মহিউদ্দিন আহমদ :দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যে আবেদনটি করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের এক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত চৌধুরী বিনীত আবেদনটিকে ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এই ৪২ জনের মধ্যে প্রথম স্বাক্ষরকারী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বয়স এখন পঁচাশির ওপর; তার কাছে ৬০ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আমি ইংরেজি পড়েছি। তিনিই একমাত্র বুদ্ধিজীবী, এই ৬০ বছর ধরে দেখে আসছি- গরিব-দরিদ্র-বঞ্চিত মানুষজনের কথা বলেই চলেছেন; যেমন শুরু করেছিলেন তার প্রথম যৌবনে। তিনি তার বিশ্বাস থেকে এ বয়সেও এতটুকুও হেলেননি, টলেননি। তিনি শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজটি করলেন!

আবেদনকারীদের কেউ তো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। বরং প্রত্যেকেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একেকটি পিলার, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী। সেই অর্থে প্রত্যেকেই প্রচ্ছন্নভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক।

৪২ জনের আবেদনটি আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। পড়েছি ডেইলি স্টারে ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত অধ্যাপক সিআর আবরারের উৎকৃষ্ট উপ-সম্পাদকীয়টিও। আর দেখেছি, অধ্যাপক রুবাইয়াৎ ফেরদৌসের উপস্থাপনায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমদ, সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার চৌধুরী এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুনুর রশিদের অংশগ্রহণে টকশোটিও।

পড়েছি আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের প্রতিক্রিয়া। আরও শুনেছি বিবিসি বাংলাতে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার।

দেশের বিশিষ্টজনদের আবেদনে তারা তো সংবিধানের ধারা-উপধারা উল্লেখ করে সাংবিধানিক ও আইনিভাবে বর্তমান নুরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তুলেছেন, তারা তো কোনো মিছিল-মানববন্ধন বা আলোচনা সভার ডাক দেননি। আর তাদের আবেদনের সমর্থনে নির্বাচন কমিশনের দ্বিতীয় সিনিয়র কমিশনার মাহবুব তালুকদারের বেশ কয়েকটি বক্তব্য-মন্তব্য তারা উদ্ধৃত করেছেন।

সর্বশেষ এই সেদিন আমার উত্তরার এমপি সাহারা খাতুনের মৃত্যু-পরবর্তী উপ-নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে মাহবুব তালুকদার বলেছেন, জাতীয় নিবাচনের চেয়েও এই উপ-নির্বাচনের মান আরও নিচে নেমে গেছে। মা

হবুব তালুকদার এর আগে বলেছেন, নির্বাচনগুলোকে নির্বাচন কমিশনের আওতায় রাখা উচিত। তিনি তো যথার্থই বলেছিলেন কথাটা। শাহাদত চৌধুরী নির্বাচন ভবনে তার পাশের কামরার মাহবুব তালুকদারকে কি তার ‘শিষ্টাচারবিরোধী’ কথাবার্তার জন্য একবারও মুখ খুলেছেন?

আওয়ামী লীগের এখন একটি আশ্রয়স্থল, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার পর এই ৪২ জন নীরব ছিলেন কেন? এর জবাবও দিয়েছেন তোফায়েল আহমদ সেই টকশোতে- একটি ইস্যুকে আরেকটির সঙ্গে জড়াবেন না।

তবে এই প্রসঙ্গে আমার আগ্রহের বিষয়টা কিছুটা ভিন্ন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ কী করেছে? কিছু দিন আগে ২৯ ক্যাডারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জড়ো করে যে শক্তি ও ক্ষোভ দেখানো হয়েছে, এমন একটি উদাহরণও কি আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করতে পেরেছে?

ভাস্কর্য ভাঙার পর যখন ওবায়দুল কাদেরের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হল, তিনি বললেন- বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে আছে। তার দিন দশেক পর তিনি বললেন- প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিজেই দেখছেন। আমাদের বর্তমান সিস্টেমে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি দেখছেন বললে আর কারও কিছু করার কি এখতিয়ার, ক্ষমতা বা আগ্রহ থাকার কথা?

দেশের সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার গুরুত্ব বুঝে বিশেষ কেবিনেট মিটিং ডাকতে পারতেন, ডাকতে পারতেন জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনও। তিনি তার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভাও ডাকতে পারতেন। তারপর আরও বলি, এই ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক এবং তার পছন্দমতো আরও কয়েকজনকে ডেকে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ চাইতে পারতেন। কিন্তু এসবের তো কিছুই করা হল না!

মহিউদ্দিন আহমদ : সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

‘শিউলীতলা’, উত্তরা; ২৩ ডিসেম্বর

 

এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।